আজ, শনিবার ভোট। তার আগেই সব প্রস্তুতি সারা হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। শুক্রবার সকালেই চন্দ্রকোনা ও ঘাটালের সমস্ত সীমান্ত এলাকা সিল করে দেওয়া হয়েছে। চলছে নাকাও।
কিন্তু তাতেও স্বস্তি নেই বিরোধীদের। কপালেই চিন্তার ভাঁজ পড়ছে সব বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির।
প্রচার শেষ করার পর থেকেই শুরু হয়েছে ভোটের অঙ্ক কষার পালা। আর সেখানেই বাম, বিজেপি, কংগ্রেস এমনকী নির্দল প্রার্থীরাও উদ্বিগ্ন। তাদের আলোচনার বিষয় এখন একটাই, প্রচারে পুলিশ-প্রশাসনের সাহায্য পাওয়া যায়নি। ভোটের দিন যে আরও অসহযোগিতা করবে পুলিশ সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তাই নেতারা বলছেন, ‘‘মানুষ আমাদের সঙ্গে আছে, কিন্তু শেষ ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে আসতে পারবেন তো তাঁরা?’’
এ দিকে শুক্রবার ভোরেই মহকুমার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভোটকর্মীরা চলে আসেন ঘাটাল কলেজে। সেখান থেকেই ইভিএম-সহ ভোট গ্রহণের যাবতীয় সরঞ্জাম দিয়ে বিলি করা হয়। সে সব নিয়ে কর্মীরা বাসে বা ট্রেকারে উঠে চলে যান তাঁদের নিজস্ব ভোটকেন্দ্রে। এ বারই প্রথম প্রত্যেক কর্মীর হাতে তুলে দেওয়া হয় একটি করে ‘ওয়েলফেয়ার কিট’। যাতে প্রয়োজনীয় খাবার, ওষুধ, মশা তাড়ানোর ধূপ—সবই রয়েছে।
ঘাটাল কলেজ থেকে ভোট সরঞ্জাম বিলি করতেই সন্ধ্যা নেমে যায়। পুরো বিষয়টি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে তদারক করেন ঘাটালের মহকুমাশাসক তথা রির্টানিং অফিসার রাজনবীর সিংহ কাপুর। একই ভাবে ঘাটাল কলেজের মহিলা হোস্টেলের ফাঁকা মাঠে জড়ো হন পুলিশ কর্মীরা। ভোট কর্মীদের সঙ্গে একই গাড়িতে নির্দিষ্ট ভোট কেন্দ্রের দিকে রওনা দেন পুলিশ কর্মীরা।
জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, ঘাটাল ও খড়ার—দুই পুরসভার জন্যই প্রায় ৫০০ পুলিশ কর্মী ও আধিকারিক এসেছেন। প্রতি বুথে দুই থেকে তিন জন করে পুলিশ কর্মী থাকবেন। অন্যদিকে চন্দ্রকোনা, রামজীবনপুর ও ক্ষীরপাই পুরসভার জন্য পুলিশ এসেছে ৫৫০ জন। প্রতি পুরসভার বুথে বুথে ডিউটি ছাড়াও মোবাইল,সেক্টর প্রভৃতি ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই পুলিশ কর্মীরা পৌঁছে গিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার ভোট প্রচার শেষের পরই যে যার মতো করে অঙ্ক কষতে শুরু করেছে রাজনৈতিক দলগুলি। আড়ালে নেতারা বলছেন শাসক তৃণমূল বাদে সব দলের নেতৃত্বই উদ্বেগে। সিপিএমের জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য অশোক সাঁতরা বলেন, ‘‘ভোটাররা হুমকি শুনছেন। কিন্তু ভোট দেবেই। তাই ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে আসতে পারলে এবং নিজের ভোট দিতে পারলে সব ওয়ার্ড না পেলেও ঘাটাল-সহ বাকি চারটি পুরসভাতে বেশ কয়েকটি ওয়ার্ড আমরা দখল করব। রামজীবনপুর-সহ একাধিক পুরসভাও দখলে আসতে পারি।” অশোক বাবুর আক্ষেপ, “পুলিশ তো আমাদের সাহায্য করবে না। সংবাদমাধ্যমই একমাত্র ভরসা।’’
একই ভাবে জেলা বিজেপি-র সাধারণ সম্পাদক ধীমান কোলের বক্তব্য, ‘‘চন্দ্রকোনা,রামজীবনপুর-সহ বিভিন্ন পুরসভাতেই আমাদের প্রার্থী ও ভোটারদের হুমকি দিয়ে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে না-যেতে ফতোয়া দেওয়া হয়েছে। পুলিশকে বলেও কোনও লাভ হয়নি।’’
এ দিকে রামজীবনপুরে বিরোধী মঞ্চের দিকে পাল্লা ভারী। তাই সেখানে বহিরাগতরা তাণ্ডব চালাচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে সিপিএম, বিজেপি-সহ জোট পক্ষের সব দল। অভিযোগ, পুলিশও বহিরাগতদের শহরে ঢুকতে সাহায্য করছে।
সিপিএমের চন্দ্রকোনা ১ জোনাল কমিটির সম্পাদক বিদ্যুৎ রায়ের অভিযোগ, “বৃহস্পতিবার রাত থেকেই চলছে তাণ্ডব। পুলিশকে জানিয়ে লাভ নেই, তাই আর কাউকে জানাইনি। মানুষ কিন্তু সবই দেখতে পাচ্ছেন।”
যদিও তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়ের কথায়, “কোনও অশান্তি ছাড়াই ভোট হবে। আমরা রামজীবনপুর-সহ জেলার ছ’টি পুরসভাই দখল করব। সবই বিরোধীদের অপপ্রচার।’’
কিন্তু ঠিক কেমন হয় ভোট তা বলবে সময়।