ফের শাসক ও মহাজোটের অন্য লড়াই

মহাজোটের ঐতিহ্য সমানে চলছে। গত দু’টি পুর নির্বাচনে (২০০৫ এবং ২০১০) ঘুঁটি উল্টে বামেদের পুরনো ঘাঁটি ঘাটালের রামজীবনপুর পুরসভা দখল করেছিল মহাজোট। যার নেতৃত্বে ছিল তৃণমূল। অস্ত্র একই রয়েছে। এ বার তাতে শান দিয়েছে বামেরা। রাজ্যের শাসক দলের বিরুদ্ধে তাদের নেতৃত্বেই মহাজোটে সামিল হয়েছে কংগ্রেস এমনকী বিজেপি-ও। মহাজোট-অস্ত্রেই এ বার তৃণমূলকে রুখতে চাইছে বিরোধীরা।

Advertisement

অভিজিৎ চক্রবর্তী

ঘাটাল শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:০৫
Share:

মহাজোটের ঐতিহ্য সমানে চলছে।

Advertisement

গত দু’টি পুর নির্বাচনে (২০০৫ এবং ২০১০) ঘুঁটি উল্টে বামেদের পুরনো ঘাঁটি ঘাটালের রামজীবনপুর পুরসভা দখল করেছিল মহাজোট। যার নেতৃত্বে ছিল তৃণমূল।

অস্ত্র একই রয়েছে। এ বার তাতে শান দিয়েছে বামেরা। রাজ্যের শাসক দলের বিরুদ্ধে তাদের নেতৃত্বেই মহাজোটে সামিল হয়েছে কংগ্রেস এমনকী বিজেপি-ও।

Advertisement

মহাজোট-অস্ত্রেই এ বার তৃণমূলকে রুখতে চাইছে বিরোধীরা।

পূর্ব মেদিনীপুরের ১১ আসনের ওই পুরসভায় ৯টিতেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রার্থী দিয়েছে বাম-কংগ্রেস-বিজেপি এবং বিক্ষুব্ধ তৃণমূলের মহাজোট— ‘দুর্নীতি বিরোধী মঞ্চ’। প্রতীক ‘উদীয়মান সূর্য’। মঞ্চের প্রার্থীদের প্রচারেও হাতে হাত ধরেই দেখা যাচ্ছে বাম-বিজেপি নেতাদের। তৃণমূলের অন্দরের খবর, বিরোধীদের এই ‘ঐক্যের’ মধ্যেই আশঙ্কার মেঘ দেখছে দল।

পঞ্চায়েত বা পুরসভায় এমন জোট অবশ্য অচেনা নয়। এক সময়ে যাদের নিয়ে মহাজোট গড়ে রামজীবনপুর পুরসভা থেকে বামেদের হটিয়েছিল তৃণমূল, তারাই এখন বামেদের সঙ্গে এক মঞ্চে সামিল হয়েছে। জেলা তৃণমূল নেতাদের অনেকেই যাকে মনে করছেন, ‘‘আমাদের অস্ত্রে আমাদেরই বধ করতে চাইছেন বিরোধীরা!’’

যা দেখে তৃণমূলের কপালে যে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েনি এমনটা বলা যাবে না। দলের জেলা সভাপতি দীনেন রায় মুখে বলছেন বটে, “জোটে আমাদের কিছু আসে-যায় না।’’ তবে দলের এক শীর্ষ নেতা হিসেব কষে কবুল করছেন, “ঘাটালে যে পাঁচটি পুরসভায় ভোট, তার মধ্যে রামজীবনপুরই আমাদের এক মাত্র মাথাব্যথা।’’

শাসক দলের সেই ভ্রূকুটিই যে তাঁদের একমাত্র ভরসা সিপিএমের জেলা সম্পাদক তরুণ রায়ের কথাতেই তা স্পষ্ট। তিিন বলেন, ‘‘বিরোধীদের ঐক্য দেখে ওরা ভয় পেয়েছে। সন্ত্রাস না করলে রামজীবনপুরে বোর্ড গড়বে আমাদের সমর্থিত ওই মঞ্চই।’’

গত দশ বছরে জোটের সমীকরণেই সাফল্য এসেছে রামজীবনপুরে। ২০০৫ সালে রাজ্যপাটে যখন বামেরা, তখন এখানে পুরভোটে তৃণমূল, কংগ্রেস এবং‌ বিজেপি মহাজোট গড়ে লড়াই করেছিল। দীর্ঘ ২৫ বছর ক্ষমতায় থাকা বামেদের হটিয়ে পুরসভা দখলও করেছিল মহাজোট। সে বার জোটের পক্ষে ফল ছিল ৬-৫। ২০১০ সালের পুরভোটে ফের ১০টি আসনেই জয়ী হয়েছিলেন মহাজোট-প্রার্থীরা।

সে সময়ে বিরোধী শিবিরের দাবি ছিল, বিরোধী ভোট এক জায়গায় করা গেলে বামেদেরও হারানো সম্ভব। নন্দীগ্রাম-সিঙ্গুর পরবর্তী পর্বে বামেদের রুখতে বাম-বিরোধী এই মহাজোটের বার্তা দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি। ২০০৮ সালে তাঁর দেখানো সেই রাস্তাতেই বেশ কিছু পঞ্চায়েতও হস্তগত করেছিল বিরোধী জোট। পুর নির্বাচনে সে পথেই হাঁটছে রামজীবনপুর।

২০০১ সালে, বামেদের ভরা প্রতাপের মধ্যে, বিধানসভা নির্বাচনে দাসপুর কেন্দ্রে জয়ী হয়েছিলেন স্থানীয় তৃণমূল প্রার্থী অজিত ভুঁইয়া। রামজীবনপুরেও তৃণমূলের প্রভাব বাড়তে থাকে। প্রভাব বাড়ে তৃণমূলের। স্থানীয় এক কংগ্রেস নেতার কথায়, ‘‘সেই সময়েই টের পাওয়া গিয়েছিল, সিপিএমকে ক্ষমতাচ্যুত করতে হলে বিরোধীদের এক জোট হওয়া দরকার।’’ সেই ভাবনা থেকেই রামজীবনপুরে ২০০৫-এর পুরভোটেও মহাজোট হয়। পরের পুরভোটেও সেই ঐতিহ্য অব্যাহত থাকে।

তবে, ২০১০ সালের সেই নির্বাচনে মহাজোট বোর্ড দখল করা সত্ত্বেও পরে বিধানসভা নির্বাচনের পরে বোর্ড ভাঙিয়ে একক ভাবেই পুরসভার দখল নেয় তৃণমূল।

এ বার সেই তৃণমূলকে হটাতেই বিরোধীদের মহাজোট। ১ এবং ৭ নম্বর ওয়ার্ডে ‘মনোমালিন্যের’ জেরে জোট প্রার্থী দেওয়া যায়নি বলে জানা গিয়েছে। অন্য সব ওয়ার্ডেই লড়াই মূলত দ্বিমুখী—তৃণমূল বনাম মঞ্চ।

তৃণমূলের স্থানীয় নেতাদের অনেকেই অবশ্য মনে করছেন, মহাজোট না করে উপায় ছিল না, কারণ, সিপিএম, কংগ্রেস বা বিজেপির এলাকায় তেমন সংগঠন নেই। একক ভাবে প্রার্থী দিতে হলে হয়তো কোনও দলই সব ওয়ার্ডে প্রার্থী দিতে পারত না।

সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অশোক সাঁতরা অবশ্য দাবি করেছেন, “আমরা রাজনীতির উর্ধ্বে উঠে এলাকার মানুষের আর্জিকে মান্যতা দিয়ে জোট করেছি।” কংগ্রেসের জেলা সহ-সভাপতি জগন্নাথ গোস্বামীরও মত, “এলাকার মানুষের চাহিদা এবং দলীয় কর্মীদের আবেগকে গুরুত্ব দিতেই জোট হয়েছে।’’ বিজেপির বিদায়ী কাউন্সিলর গোবিন্দ মুখোপাধ্যায়ও একই সুরে বলছেন, “রামজীবনপুর বরাবরই অন্যরকম। জোট হয়েছে সেই কারণেই।”

সেই ‘অন্যরকম’ রাজনীতি এ বারও জয়ী হয় কিনা, দেখার সেটাই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement