রাজনীতির ফাঁসে বন্দি রাজার মূর্তি

আগামী বৃহস্পতিবার ঝাড়গ্রামে আদিবাসী দিবস উদ্‌যাপনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আসার আগে সেই মূর্তি বসানোর কাজ কাজ আপাতত বন্ধ রেখেছে তৃণমূল পরিচালিত পুরসভা।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৮ ০৭:০০
Share:

নরসিংহ মল্লদেব

রাজনীতির ফাঁসে আটকে খোদ রাজার মূর্তি!

Advertisement

অন্তত এমনই অভিযোগ উঠেছে অরণ্যশহর ঝাড়গ্রামে। দীর্ঘ টানাপড়েনের পরে শহরের কেন্দ্রস্থলে ঝাড়গ্রামের শেষ রাজা তথা প্রথম সাংসদ নরসিংহ মল্লদেবের মূর্তি বসানোর প্রস্তুতি নিয়েছিল পুরসভা। মূর্তি তৈরির কাজ অনেকটা এগিয়েও গিয়েছিল। কিন্তু আগামী বৃহস্পতিবার ঝাড়গ্রামে আদিবাসী দিবস উদ্‌যাপনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আসার আগে সেই মূর্তি বসানোর কাজ কাজ আপাতত বন্ধ রেখেছে তৃণমূল পরিচালিত পুরসভা।

কিন্তু কেন?

Advertisement

পুরসভা সূত্রের খবর, রাজার মূর্তি বসানোয় বাদ সেধেছে প্রশাসন। গত ৩০ জুন হুলদিবসের রাজ্যস্তরের অনুষ্ঠানে এসে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ঝাড়্গরামের পুরপ্রধান দুর্গেশ মল্লদেবকে প্রকাশ্যেই নির্দেশ দিয়ে বলেছিলেন, অরণ্যশহরে সাঁওতাল বিদ্রোহের দুই বীর সিদো-কানহোর মূর্তি বসাতে হবে। জানা গিয়েছে, এখনও সিদো-কানহোর মূর্তি বসানোর জন্য পুরবোর্ডে সিদ্ধান্ত হয়নি। এ দিকে কয়েকদিন আগে মুন্ডা সম্প্রদায়ও জেলাশাসককে স্মারকলিপি দিয়ে শহরে বিরসা মুন্ডার মূর্তি বসানোর দাবি করেছে। এমন আবহে রাজার মূর্তিটি বসানো হলে ভুল বার্তা যাবে।

এ দিকে, আদিবাসী দিবসের আগে রাজার মূর্তি বসলে ভুল বার্তা যেতে পারে, এই আশঙ্কাতেই নরসিংহের মূর্তি বসানো আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। পুরপ্রধান দুর্গেশ মল্লদেব শুধু বলেন, “যথাসময়ে মূর্তি বসানো হবে।’’ তবে পুরসভার এক আধিকারিক বলেন, “একটি মহল থেকে আপত্তি ওঠায় আপাতত রাজার মূর্তি বসানোর কাজ বন্ধ রয়েছে।”

জুলাইয়ের মাঝামাঝি ঝাড়গ্রাম শহরের পাঁচমাথা মোড়ের একদিকে নরসিংহের মূর্তি বসাতে পুরসভার তোড়জোড় শুরু হয়। পাঁচমাথার মোড়ে সৌন্দর্যায়নের জন্য কয়েক বছর আগে ময়ূরের মূর্তি বসিয়েছিল পূর্ত দফতর। তখনই নরসিংহের মূর্তি বসানোর জন্য পূর্ত দফতরের কাছে আবেদন করেছিল পুরসভা। প্রায় এক বছর টানাপড়েনের পরে অনুমতি মেলে। গত ১৩ জুলাই ময়ূরের মূর্তিটি সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু তারপর তিন সপ্তাহ কেটে গেলেও নরসিংহের মূর্তি বসানো হয়নি।

রাজনীতির অঙ্কেই আদিবাসীদের মন পেতে সিদো-কানহোর মূর্তির আগে রাজার মূর্তি বসানো বন্ধ রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠছে। বিজেপির ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি সুখময় শতপথী বলেন, ‘‘আগামী নভেম্বরে পুরভোট। পরের বছরের গোড়ায় লোকসভা নির্বাচন। তাই আদিবাসী আবেগ ও ভোট-রাজনীতির অঙ্কের ভিত্তিতে প্রশাসন কাজ করছে। আমরা চাই শহরে রাজা নরসিংহ, সিদো, কানহো-সহ সব মনীষীর মূর্তি থাকুক।’’ আদিবাসী সামাজিক সংগঠন ‘ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহলে’র নেতা সূর্যকান্ত মুর্মুরও বক্তব্য, ‘‘সরকার-প্রশাসন সবই তো শাসক দলের রাজনীতির আবর্তে কাজ করছে। মূর্তি নিয়েও তাই রাজনীতি হচ্ছে।’’ তিনি আরও জানান, ঝাড়গ্রাম শহর-সহ বিভিন্ন জায়গায় সিদো-কানহোর মূর্তি বসানোর জন্য তাঁরা দাবি করেছেন।

এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের ঝাড়গ্রাম জেলা কোর কমিটির চেয়ারম্যান সুকুমার হাঁসদা বলেন, ‘‘রাজা নরসিংহ ঝাড়গ্রামের রূপকার। তবে মূর্তি বসানোর ক্ষেত্রে মানুষের আবেগ ও চাহিদাকে মর্যাদা দিয়ে পরিকল্পনার ভিত্তিতে পদক্ষেপ করা প্রয়োজন। প্রশাসন সেই কাজ করছে।’’

নরসিংহের নাতি দুর্গেশ মল্লদেব ২০১৩ সালে তৃণমূল পরিচালিত ঝাড়গ্রাম পুরসভার চেয়ারম্যান হন। এরপরই বিভিন্ন মহল থেকে শহরে নরসিংহের মূর্তি বসানোর দাবি তোলা হয়। একটি বেসরকারি ট্রাস্টের উদ্যোগে গত বছর নরসিংহের পূর্ণাবয়ব আট ফুট উঁচু ব্রোঞ্জের মূর্তি তৈরি করা হয়। মূর্তি গড়েছেন কৃষ্ণনগরের শিল্পী সুবীর পাল। তবে আপাতত রাজনীতির জটে সেই মূর্তি বসানো থমকে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement