বরিয়া জঙ্গলে পুলিশ কুকুর দিয়ে তল্লাশি। —নিজস্ব চিত্র।
গাছ গিয়েছে চুরি। চোর ধরতে গিয়ে ঘায়েল হয়ে থামলেন উর্দিধারীরা। তারপর নামাল হল চারপেয়েদের।
গাছ চুরি রুখতে পুলিশ কুকুর?
অবাক করার মতো বিষয় হলেও ঘটনাটি বাস্তবে সত্য। তা ঘটেছে ঝাড়গ্রামেই। গত বছর ডিসেম্বর মাসে। প্রাক্তন বনকর্তারা বলছেন, ‘‘দক্ষিণবঙ্গে এ যাবৎ পুলিশ কুকুর দিয়ে জঙ্গলে তল্লাশি চালানো হয়নি।’’ যা হয়নি তা কি কোনওদিন হবে না? অন্যকিছু ভাবলে ক্ষতি কী? ভাবাই যায়। ভাবাই উচিত। কিন্তু ফল মিলল কি? ঝাড়গ্রামের ডিএফও পঙ্কজ সূর্যবংশী বলেন, ‘‘কংক্রিট তথ্য কিছু পাওয়া যায়নি। তবে ওই ঘটনায় তদন্ত চলছে।’’
পুলিশের একাংশ বলছেন, যে কোনও ক্ষেত্রের মতো অপরাধের কিনারা করতেও উদ্ভাবনী শক্তি একটা বড় ভূমিকা নেয়। কিন্তু তা অবশ্যই যুক্তিযুক্ত হতে হয়। পুলিশ কুকুর বা স্নিফার ডগ হল এমন প্রজাতির কুকুর যাদের বিস্ফোরক, রক্ত ও নিষিদ্ধ ইলেকট্রনিক্সের মতো পদার্থগুলি শনাক্ত করতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। পুলিশের এক আধিকারিক বলছেন, ‘‘স্নিফার ডগকে মূলত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এ জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ল্যাব্রাডর প্রজাতির কুকুরকে বেশি ব্যবহার করা হয়। পুলিশ বা সিআরপি যে স্নিফার ডগ ব্যবহার করে তা মূলত খুন, বোমা, নানা বিস্ফোরণ দ্রব্য গন্ধ শুঁকে ট্র্যাক করে। এরকমই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।’’ পুলিশ সূত্রের খবর, ল্যাব্রাডর ২০০ মিটার দূর থেকে গন্ধ শুকে অনুমান করতে পারে। তবে গাছ কাটার চোর ধরতে জন্য সচরাচর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় না। ওই পুলিশ আধিকারিক আরও জানাচ্ছেন, লাল চন্দন গাছের চোরা কারবার রুখতে মধ্যপ্রদেশে, অন্ধ্রপ্রদেশে ও তেলেঙ্গনাতে পুলিশ কুকুর ব্যবহার করা হয়। তবে সে জন্য তাদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ঝাড়গ্রাম জেলায় জেলা পুলিশের ডগ স্কোয়াড নেই। কোনও ঘটনায় রাজ্য পুলিশের ডগ স্কোয়াডের প্রয়োজন হলে দুর্গাপুর বা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা থেকে নিয়ে আসা হয়। তবে সিআরপির ১৮৪ নম্বর ব্যাটালিয়নের পুলিশ কুকুর রয়েছে। সিআরপি তল্লাশি চালানোর সময় পুলিশ কুকুর ব্যবহার করে। সিআরপির কুকুর গাছ চুরির ব্যাপারে কতটা অভিজ্ঞ সে ব্যাপারে প্রশ্ন উঠেছে। প্রাক্তন বনকর্তা সমীর মজুমদার বলেন, ‘‘দক্ষিণবঙ্গে এ যাবৎ কোনও পুলিশ কুকুর দিয়ে গাছ কাটার তল্লাশি হয়নি। পুলিশ কুকুর দিয়ে তল্লাশি করে কিছুই করতে পারবে না। এটা শুধু মাত্র চমক ছাড়া কিছুই না।’’
ডিসেম্বর মাসে গাছ কাটার ঘটনায় সিআরপির ১৮৪ নম্বর ব্যাটেলিয়নের স্নিফার ডগ জঙ্গলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে বন দফতরের আধিকারিকরাও উপস্থিত ছিলেন। প্রথমে স্নিফার ডগকে জঙ্গলের কাটা শাল গাছের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে স্নিফার ডগ গন্ধ শুঁকে চম্পট দেয় জঙ্গল লাগোয়া আশেপাশের গ্রামগুলিতে। বরিয়া, হদহদি, জোয়ালভাঙা গ্রাম গুলিতে গিয়েছিল। কিন্তু মেলেনি কিছুই। সিআরপিও মানছে, এ যাবৎ পুলিশ কুকর দিয়ে গাছ চুরির তল্লাশি জেলায় এখনও হয়নি।