প্রতীকী চিত্র
বিধানসভা ভোটের বাকি মাত্র আর কয়েকটা মাস। তার আগে প্রায়ই রাজনৈতিক হিংসাকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হচ্ছে জেলায়। কখনও শাসক দলের নেতা-কর্মীদের নিজেরে মধ্যে মারামারি। কখনও বিরোধী দলের সঙ্গে গোলমালে তৈরি হচ্ছে অশান্তি। যার প্রমাণ লোকসভা ভোটের অব্যবহিত পর থেকেই ময়না, নন্দীগ্রামে বেড়ে গিয়েছে শাসক-বিরোধী লড়াই। যার প্রেক্ষিতে ময়না লাগোয়া সবংয়ে বোমার আঘাতে নিহত হয়েছেন ময়নার বিজেপি কর্মী দীপক মণ্ডলকে।
গত কয়েক মাস ধরে ময়নায় শাসক-বিরোধী তরজায় লাগাতার বোমাবাজিতে বার বারই উত্তপ্ত হয়েছে এলাকা। প্রশ্নের মুথে দাঁড়িয়েছে পুলিশের ভূমিকা। এমনকী সুযোগ বুঝে তৃণমূল, বিজেপিও এলাকায় শান্তি রক্ষায় পুলিশের ব্যর্থতার দিকে আঙুল তুলেছে। এই পরিস্থিতিতে জেলায় রাজনৈতিক হিংসা বন্ধ করতে একগুচ্ছ পদক্ষেপ করল জেলা পুলিশ। হিংসা রুখতে দুষ্কৃতীদের ডিজিটাল বায়োডাটা তৈরির কাজ শুরু করেছে তারা। রাজনৈতিক হিংসা দমনে ইতিমধ্যে জেলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এক কোম্পানি র্যাফকে।
জেলা পুলিশের উদ্যোগে জেলার স্পর্শকাতর ব্লকগুলি ইতিমধ্যে চিহ্নিতকরণের কাজ শুরু হয়েছে। জেলায় সন্ত্রাস দমনে সব চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বেআইনি অস্ত্র ও বোমা উদ্ধারে। যে সমস্ত সমাজবিরোধী পুলিশের খাতায় ফেরার হয়ে গা ঢাকা দিয়ে আছে তাদের ধরতে ডগ স্কোয়াডের সাহায্য নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। জেলার সমাজবিরোধী ও দাগি আসামীদের নাম, ঠিকানা ও অপরাধের তালিকা তৈরির কাজ চলছে।পুরো তালিকাটি জেলা পুলিশ ডিজিটাল বায়োডাটা আকারে নিজেদের কাছে সংরক্ষণ করে রাখবে। কোথাও কোনও রাজনৈতিক গোলমালের ঘটনায় পরোক্ষভাবেও কেউ সহযোগিতা করে থাকলে তাকেও রেয়াত করা হবে না।
২০১৮-এর পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় থেকে এখন পর্যন্ত ময়নার বাকচায় অনেকগুলি রাজনতিক হিংসার ঘটনা ঘটেছে। এলাকায় পুলিশ ঢুকলে অনেক মহিলা শঙ্খধ্বনি করে দুষ্কৃতীদের সচেতন করে দিতেন বলে অভিযোগ ছিল। জেলা পুলিশ সূত্রে খবর সম্প্রতি এ ধরনের ঘটনায় জড়িত অভিযোগে বাকচা এলাকার ১৯৮ জন মহিলার বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়েছে। জেলায় অস্ত্র ও বোমার আমদানি বন্ধ করতে কড়া নজরদারি চালানো হচ্ছে পশ্চিম মেদিনীপুর ও হাওড়া জেলার সীমানা এলাকাগুলিতেও। জেলার কোন কোন ব্যক্তি বোমা ও অস্ত্র আমদানির সঙ্গে যুক্ত তাদের বিষয়ে খোঁজ নেওয়া শুরু হয়েছে। যে কোনও ধরনের অপরাধ ঘটলে থানাগুলিকে দ্রুত পদক্ষেপ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার সুনীল কুমার যাদব বলেন, ‘‘আমরা জেলায় পুলিশি তৎপরতা বাড়িয়েছি। ভোটের আগে যাতে কোনও ধরনের রাজনৈতিক হিংসা না ঘটে তার জন্য একাধিক পদক্ষেপ করা হয়েছে। অপরাধ দমনে সমস্ত থানাকে বিশেষ তৎপর হতে বলা হয়েছে। অপরাধ দমনের জন্য আমরা স্থানীয়ভাবে জনসংযোগের পাশাপাশি ডিজিটাল পদ্ধতির সাহায্যও নিচ্ছি।’’
গত কয়েক বছরে কী লোকসভা, কী বিধানসভা ভোটের আগে জেলায় রাজনৈতিক হিংসা যে ভাবে মাথাছাড়া দিয়েছিল, তাতে পুলিশ সুপারের এই আশ্বাস জেলার মানুষকে কতটা স্বস্তি দিল তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়।