প্রতীকী ছবি।
ফিরছেন পর্যটকেরা। বিক্রিবাটা বাড়ছে ধীরে ধীরে। কিন্তু সরকারি নির্দেশ মানার বিষয়ে দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিচ্ছেন পর্যটক, ব্যবসায়ী উভয়েই।
সৈকত শহর দিঘায় প্লাস্টিক ব্যবহার নিয়ে বছর দু’য়েক আগে প্লাস্টিক, পলিথিন আর থার্মোকল ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছিল প্রশাসন। এ বিষয়ে প্রশাসনের নজরদারি অভিযান বন্ধ থাকার সুযোগে দিঘায় দেদার প্লাস্টিক আর থার্মোকলের ব্যবহার শুরু হয়েছে। ফলে প্লাস্টিক বন্ধ করার দাবি জানিয়ে ফের সচেতনতা মূলক প্রচার অভিযানে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দিঘা- শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ (ডিএসডিএ)।
প্লাস্টিক, পলিথিন, থার্মোকল ব্যবহার নিষিদ্ধ করা নিয়ে ২০১৯ সালের অগস্টে যে নির্দেশিকা জারি করা হয়েছিল, তাতে নিয়ম লঙ্ঘনকারীদের হাতেনাতে ধরা হলে ৫০০ টাকা আর্থিক জরিমানা বা আইনি পদক্ষেপ করার কথা বলেছিলেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি দেবব্রত দাস। নজরদারি চালানোর জন্য অস্থায়ীভাবে সাত জনকে নিয়োগ করেছিলেন ডিএসডিএ কর্তৃপক্ষ। শুরুর দিকে কিছুদিন ধরপাকড় চললেও, পর্ষদ নিযুক্ত নজরদারি টিমের গতিবিধি এখন আর চোখে পড়ে না দিঘায়।
বর্তমানে দিঘার বাজারে জিনিস কেনাকাটা থেকে শুরু করে ঝাউ বনে পিকনিকে প্লাস্টিক আর থার্মোকলের ব্যবহার রমরমিয়ে চলছে বলে অভিযোগ। নেহেরু মার্কেটের এক মাছ বিক্রেতা বলছেন, ‘‘ব্যাগ না নিয়েই বাজারে চলে আসেন সকলে। তাই প্লাস্টিকের ছোট পলিথিন ছাড়া মাছ বিক্রি সম্ভব নয়।’’ নিউ দিঘার ‘সবুজের হাট’ বাজারের এক দোকানদার বলছেন, ‘‘আমরাও চাই প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার বন্ধ হোক। কিন্তু, পাট দিয়ে তৈরি ব্যাগ আর মেলে না। তাছাড়া কেউ নজরদারিও চালায় না।’’
দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের মূল প্রশাসনিক ভবনের পিছনের যে রাস্তা ধরে পর্যটকেরা সমুদ্রসৈকতের দিকে যান, সেই রাস্তা বরাবর ওসিয়ানা স্নান ঘাট পর্যন্ত প্রচুর পর্যটক নিয়মিত পিকনিক করতে যান। তাঁরাও প্লাস্টিকের পাশাপাশি থার্মোকলের থালা, বাটি ব্যবহার করেন। অভিযোগ, তা যত্রতত্র ফেলে দিয়ে চলে যান।
করোনা পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হওয়ার পরেও প্লাস্টিক ব্যবহারের এই ছবির উন্নতি ঘটেনি। পেশায় শিক্ষক তথা পরিবেশকর্মী ইমনকল্যাণ জানা বলছেন, ‘‘বছর দুয়েক ধরে দিঘায় প্লাস্টিক আর থার্মোকল ব্যবহার বন্ধ ছিল। ফলে পরিবেশ কিছুটা স্বাভাবিক হচ্ছিল। পরিবেশবান্ধব উপকরণ ব্যবহারের জন্য পর্যটক এবং স্থানীয়দের আরও বেশি করে উৎসাহ দিতে হবে পর্ষদকে।’’ এ ব্যাপারে পর্ষদের মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক মানসমার মণ্ডল বলেন, ‘‘দু'বছর ধরে একটি দল সবসময় নজরদারি চালাত। তার পরেও পরিস্থিতি বদল ঘটেনি। তাই পর্ষদ-সহ প্রশাসনের অন্য আধিকারিকেরা কাউকে না জানিয়েই এবার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালাবে। অভিযোগ প্রমাণ মিললে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
অন্য দিকে পর্যটকদের জন্য নতুন কলেবরে সেজে উঠেছে দিঘার ন্যায়কালী মন্দির। সৈকত শহরে ঢোকার মুখে যে গেট রয়েছে, তার বাঁ দিকে পাকা সড়ক ধরে সামান্য দূরে এই মন্দির রয়েছে। স্থানীয় পদিমা-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের উদ্যোগে একানে গড়ে উঠেছে ইকো-ট্যুরিজম পার্ক। একশো দিনের কাজের প্রকল্পে দুটি পর্যায়ে এই পার্ক তৈরি করতে গড়ে ২৪ লক্ষেরও বেশি টাকা খরচ হয়েছে। সেই পার্কেও প্লাস্টিক দূষণের ছবি স্পষ্ট। যত্রতত্র প্লাস্টিক আর পলিথিনের নানা জিনিসপত্র ছড়িয়ে পড়ে রয়েছে। পর্যটকেরাই এসব জিনিস ফেলে যাচ্ছেন বলে দাবি স্থানীয়দের। তাঁদের কথায়, প্রশাসনিক নজরদারি না থাকাতেই পর্যটকেরা দূষণ ছড়াতে সাহস পাচ্ছেন। এ ব্যাপারে রামনগর-১ এর বিডিও বিষ্ণুপদ রায় বলেন, ‘‘ডাস্টবিন থাকা সত্ত্বেও অসচেতন নাগরিকরা দূষণ ছড়াচ্ছেন। পর্যটকদের সচেতন করতে সব পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে পুজোর আগে প্রচার চলবে।’’