অপহরণে ব্যবহৃত গাড়ি। রবিবার নিজস্ব চিত্র
ছক ছিল অপহৃতকে দিঘায় হোটেলে রেখে মুক্তিপণ আদায়। কিন্তু বানচাল হয়ে গেল অপহরণকারীদের সেই ছক। বানচাল করে দিলেন খোদ অপহৃত। সেইসঙ্গে অপহরণকারীদের ধাওয়া করে তাদের কয়েকজনকে গ্রেফতারও করল পুলিশ। উদ্ধার করা হয়েছে অপহৃতকে। রবিবার ভোরে পূর্ব মেদিনীপুরের হেঁড়িয়ায় ওই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, যাঁকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তিনি বাংলাদেশের বাসিন্দা। শোয়েব হোসেন নামে বছর ছাব্বিশের ওই যুবক উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটে এক আত্নীয়ের বাড়িতে থাকেন। সেখান থেকে তিনি বাগদার পিন ও চিংড়ির খাবারের ব্যবসা করেন। এই অপহরণকাণ্ডের সঙ্গে বড় কোনও চক্র জড়িয়ে আছে কিনা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিদিনের মতো এদিনও ভোরে দিঘা-নন্দকুমার ১১৬ বি জাতীয় সড়কে ইড়িঞ্চি সেতুর কাছে হেড়িয়া ফাঁড়ির পুলিশ নজরদারি চালাচ্ছিল। ওই পুলিশ কর্মীরা জানান, ঘড়িতে তখন পৌনে পাঁচটা। তাঁরা দেখেন নন্দকুমার থেকে দিঘার দিকে দুটি সাদা প্রাইভেট গাড়ি আসছে। হঠাৎই সামনের গাড়ি থেকে এক যুবক চলন্ত অবস্থাতেই দরজা খুলে রাস্তায় লাফিয়ে পড়েন। ঘটনা ঠিকমত বুঝে ওঠার আগেই গাড়িদু’টি না থেমে তিরবেগে দিঘার দিকে বেরিয়ে যায়। এরপরই হেঁড়িয়া ফাঁড়ি থেকে তড়িঘড়ি আগের মারিশদা থানায় ফোন করে সব জানিয়ে গাড়ি দু’টি আটকাতে বলা হয়। ফোন পেয়েই সজাগ হয়ে যায় মারিশদা থানা। সেখানে জাতীয় সড়কে টহরদারিতে ছিলেন মারিশদা থানার এস আই তপন মাঝি ও অন্য পুলিশ কর্মীরা।
পুলিশ জানায়, তারা সাদা গাড়িদু’টিকে আসতে দেখে বার বার তাদের থামতে বলে। কিন্তু গাড়ি দু’টি আরও গতি বাড়িয়ে পালানোর চেষ্টা করে। তাদের পিছু ধাওয়া করে টহলদারি পুলিশ। পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে গাড়ি দু’টি জাতীয় সড়ক থেকে নেমে কাঁথি়-৩ ব্লকের শিল্লিবাড়ি হয়ে নীলপুরের রাস্তায় ছুটতে শুরু করে। তাদের রাস্তা বদলাতে দেখে ঘুরপথে গিয়ে সহজে তাদের ধরে ফেলার পরিকল্পনা করে পুলিশও। সেইমত তারা জাতীয় সড়ক থেকে লোকাল বোর্ড এলাকা হয়ে আগেই নীলপুরে পৌঁছে যায়। সেখানে পুলিশের গাড়ির মুখোমুখি পড়ে যায় ওই দু’টি গাড়ি। বেগতিক দেখে গাড়ি ফেলে আরোহীরা মাঠ ধরে ছুটতে শুরু করে। তাদের ছুটে পালাতে দেখে পুলিশও চোর চোর বলে চিৎকার করে পিছু ধাওয়া করে। চিৎকার শুনে আশপাশের গ্রামের লোকজনও তাড়া করে অপহরণকারীদের। শেষ পর্যন্ত ৬ জন ধরা পড়লেও একজন পালিয়ে যায়। ধৃতেরা কলকাতার বরানগর ও বাগুইআটির বাসিন্দা বলে পুলিশ জানিয়েছে।
জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইন্দ্রজিৎ বসু বলেন, ‘‘ধৃতদের জেরা করা হচ্ছে। পিছনে কোনও বড় চক্র আছে কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সাহায্য নেওয়া হচ্ছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পুলিশের।’’
পুলিশের দাবি, উদ্ধার হওয়া ব্যবসায়ী শোয়েব হোসেন বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ জেলার নরসিংহপুরের বাসিন্দা। ধৃতেরা জানিয়েছে, শোয়েব হোসেন লক্ষ লক্ষ টাকার ব্যবসা করত। তাই তাকে অপহরণ করে দিঘায় এনে হোটেলে রেখে মুক্তিপণ আদায়ের পরিকল্পনা করেছিল তারা। শনিবার রাতে বসিরহাট থেকে শোয়েবকে অপহরণ করা হয়। গাড়ি দুটিকে আটক করেছে পুলিশ। তবে জেরায় ওই ব্যবসায়ী ও অপহরণকারীরা তথ্য গোপন করছে ও ভুল বলছে বলে পুলিশের প্রাথমিক অনুমান। পুলিশ শোয়েবের মোবাইল ফোনের খোঁজেও তল্লাশি চালাচ্ছে। অপহরণকাণ্ডে ব্যবহৃত গাড়ি দু’টির মালিকের বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।