সুস্থ হওয়ার পরে হাসপাতালের দরজা থেকে পোষ্যকে সঙ্গে নিয়েই বাড়িতে ফিরেছেন শক্তিপদ। নিজস্ব চিত্র।
তমলুকের পসুমবসান এলাকায় সবাই চেনে হোন্ডাকে। তার পরিচয় 'শক্তিপদর নাতি' হিসেবে। আসলে এই এলাকার বৃদ্ধ বাসিন্দা শক্তিপদ জানা যেমন পথের কুকুর হোন্ডার দেখাশোনা করেন ঠিক তেমনই হোন্ডাও শক্তিপদর বড় শক্তি।
পসুমবসানে নিজের বাড়িতে একাই থাকেন অশীতিপর শক্তিপদ। স্ত্রী-সন্তান কেউই নেই তাঁর। সহায়সম্বল বলতে এই দেশি সারমেয় হোন্ডা। গত কয়েক বছর ধরে এই পোষ্যকে খাইয়ে দাইয়ে নিজের নাতির মতো রেখেছেন তিনি। ‘হোন্ডা’ নামটা তাঁরই দেওয়া।
সেই হোন্ডা যে এ ভাবে ঋণ শোধ করবে তা বোধহয় আগে কখনও ভাবেননি শক্তিপদ। দিন কয়েক আগে পোষ্যটির সৌজন্যে কার্যত মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন তিনি।
আরও পড়ুন: আকাশের চাবি শ্যামলীর হাতে
প্রতিবেশী সমরেশ খাঁড়া জানিয়েছেন, কিছু দিন আগে রাতের খাওয়া দাওয়ার পর ঘুমোতে যান শক্তিপদ। এর পর আচমকাই হৃদরোগে আক্রান্ত হন তিনি। প্রতিবেশীদের কেউই বিষয়টি টের পাননি। তবে মনিবের যে কিছু শারীরিক সমস্যা হয়েছে, সেটা আঁচ করতে পেরেছিল পোষ্য। ভোর থেকে বাড়ির মধ্যে চিৎকার জুড়ে দেয় সে।
বিষয়টি নজরে আসতেই প্রতিবেশীদের সন্দেহ হয়। তাঁরা বৃদ্ধের বাড়ির জানলার কাছে গিয়ে দেখেন শক্তিবাবু সংজ্ঞা হারিয়ে বিছানায় পড়ে রয়েছেন। তাঁকে ওই অবস্থায় দেখতে পেয়ে স্থানীয়রাই উদ্যোগ নিয়ে বৃদ্ধকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যান। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, হোন্ডা কিন্তু তার মনিবের সঙ্গ ছাড়েনি, হাসপাতালের বাইরেই আগাগোড়া অপেক্ষা করেছে।
আরও পড়ুন: ৮ বছরেও পাকা হয়নি রাস্তা, ক্ষুব্ধ কোটশিলার বাসিন্দারা
সুস্থ হওয়ার পরে হাসপাতালের দরজা থেকে পোষ্যকে সঙ্গে নিয়েই বাড়িতে ফিরেছেন শক্তিপদ। জানিয়েছেন, তিনি যখন অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন, তখন সংজ্ঞা হারানোর আগের মুহূর্তে হোন্ডা তাঁকে টানাটানি করে চিৎকার জুড়ে দিয়েছিল। হোন্ডার জন্যই এ যাত্রায় প্রাণে বেঁচে ফিরেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
গত কয়েক দিন ধরে হোন্ডার এই কাহিনি ছড়িয়েছে মুখে মুখে। এই মুহূর্তে পাড়ায় তার কদরও বেড়ে গেছে। হোন্ডা কারও বাড়ির সামনে গেলেই তাকে আদর করে খাওয়াচ্ছেন প্রতিবেশীরাও। বীরদর্পে এ দিক ও দিক ঘুরে বেড়ালেও শক্তিপদর উপর থেকে কিন্তু এক মুহূর্তের জন্যেও নজর সরাচ্ছে না 'না-মানুষ' হোন্ডা।