দু’পারে এ ভাবেই বিনিময় হচ্ছে খাদ্যসামগ্রী। নিজস্ব চিত্র
বাঁশের সাঁকোর একপাশে পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুর। অন্য দিকে, পশ্চিম মেদিনীপুরের সবং। মাঝে বয়ে চলেছে কেলেঘাই নদী। আগে এই সাঁকো পেরিয়েই পটাশপুর থেকে সবং যাতায়াত করতেন সাধারণ মানুষ। করোনার জেরে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করতে ভেঙে ফেলা হয়েছে সাঁকো। তবুও পরিজনের পাঠানো খাবারের খোঁজে ভাঙা সাঁকোর দু’পাশে অপেক্ষা করছেন ক্ষুধার্ত মানুষ। সাঁকোর একপ্রান্তে দাঁড়িয়ে থলিতে ভরে খাবার ছুড়ে দিচ্ছেন, আর অন্যপ্রান্তের মানুষটি লুফে নিচ্ছেন সেই খাবার।
সবংয়ের দিকের নদী পাড়ে রাউতরা বাড়ি, কোপ্তিপুর-সহ একাধিক গ্রামের মানুষের জীবন জীবিকার অনেকটা জায়গা জুড়ে রয়েছে নদী ওপারের পটাশপুর। ছেলেমেয়েদের স্কুল-কলেজের পড়াশোনা থেকে ব্যবসা অধিকাংশই পটাশপুরে। করোনা সংক্রমণের সচেতনায় প্রশাসনিক উদ্যোগে মানুষের যাতায়াত বন্ধ করতে ভেঙে ফেলা হয়েছে সাঁকোর মাঝের একটা অংশ। ফলে বন্ধ হয়েছে যাতায়াত। করোনা মোকাবিলায় গৃহবন্দি অবস্থায় অর্থাভাবে এলাকায় খাবারের অভাব দেখা দিয়েছে। বহু স্থানীয় পরিবার দু’বেলা খাবারের সংস্থান করতে পারছে না। প্রতিবেশী জেলার আত্মীয়দের বাড়ি থেকে সাহায্য নিয়ে চলছে সংসার। কিন্তু ভেঙে দেওয়া হয়েছে সাঁকো, ফলে পরিজনের বাড়িতে সামান্য খাবার টুকুও পৌঁছে দেওয়ার উপায় নেই।
তবে আশা ছাড়েননি আত্মীয় পরিজনেরা। খাবার থলিতে ভরে নির্দিষ্ট সময়ে ভাঙা সাঁকোর এক প্রান্তে ঠিক চলে আসছেন তাঁরা। অন্য দিকে, ঘড়ি ধরে সাঁকোর অপর প্রান্তে তখন অপেক্ষা করছেন প্রিয়জনেরা। থলিতে চাল, ডাল, আনাজ, মুড়ি, বিস্কুট-সহ নানা রেশন ভর্তি করে ব্যাগের মুখ দড়ি দিয়ে বেঁধে দেওয়া হচ্ছে। তারপর তা ছুড়ে দেওয়া হচ্ছে নদীর ওপাড়ে। পটাশপুর গোপালপুর এলাকার যুবক শঙ্করের মাসির বাড়ি নদী ওপারে সবংয়ের রাউতরা গ্রামে। অভাবী মাসির বাড়িতে খাবার পৌঁছে দিতে সে ভাঙা সাঁকোর পাড়ে এসেছিল। সাঁকোর ওপারে অপেক্ষা করা মাসির ছেলেকে লক্ষ্য করে খাবারের থলি ছুড়ে দিয়েছিল শঙ্কর। তাঁর কথায়, ‘‘লকডাউনে পরিস্থিতিতে সবাই কমবেশি খাবারের সঙ্কটে ভুগছি। পরিজনেরা যাতে খাবারের অভাবে অভুক্ত না থাকে, সেই খেয়াল তো রাখতেই হবে। যত বাধাই আসুক, এটুকু সাহায্য করতেই হবে।’’ এই প্রসঙ্গে পটাশপুর ১ ব্লকের গোপালপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান প্রভুরাম দাস বলেন, ‘‘এই ধরনের বিষয়টি আমাদের জানা নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখে দুঃস্থ পরিবারগুলির পাশে দাঁড়ানো হবে।’’