—ফাইল চিত্র।
ডাকঘর বাঁচাতে এ বার ডিআরএম দফতরের সামনে ধর্নায় বসার হুঁশিয়ারি দিল যুক্তমঞ্চ। শনিবার খড়্গপুরে এক সাংবাদিক সম্মেলনে মঞ্চের তরফে বীরেন্দ্রনাথ মাইতি বলেন, “আমরা ডাক বিভাগকে চিঠি দেবো। রেল বিভাগকেও চিঠি দেবো। সমস্যার সমাধান না হলে এ বার আমাদের ডিআরএম দফতরের সামনে ধর্নায় বসতে হবে।’’ ডাকঘর বাঁচানোর আন্দোলন থেকে যে তাঁরা সরছেন না এ দিন ফের তা আরও একবার স্পষ্ট করে দিয়েছেন যুক্তমঞ্চের নেতৃত্ব।
শতাব্দী প্রাচীন বোগদা ডাকঘর বাঁচানোর জন্যই রেলশহরে এই যুক্তমঞ্চ গড়ে উঠেছে। ইতিমধ্যে যুক্তমঞ্চের ডাকে কখনও খড়্গপুরে, কখনও জেলার সদর শহর মেদিনীপুরে আন্দোলন হয়েছে। গত ডিসেম্বরে মেদিনীপুরে ডাক বিভাগের সিনিয়র সুপারের দফতরের সামনে ধর্না-অবস্থান হয়েছে। খড়্গপুর রেলস্টেশনের অদূরেই রয়েছে বোগদা ডাকঘর। সম্প্রতি এই ডাকঘর স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ডাক বিভাগ ঠিক করেছে, ডাকঘরটিকে খড়্গপুর আইআইটি চত্বরে নিয়ে যাওয়া হবে। খড়্গপুর আইআইটি চত্বরেও ডাকঘর রয়েছে।
এই সিদ্ধান্তের কথা জানতে পেরে সরব হয়েছেন গ্রাহকেরা। তাঁদের বক্তব্য, এর ফলে চরম সমস্যা হবে। বোগদা ডাকঘর বাঁচাতে ইতিমধ্যে যুক্তমঞ্চ গড়ে তোলা হয়েছে। ইতিমধ্যে রাজ্যসভার সাংসদ তপন সেন, লোকসভার সাংসদ সন্ধ্যা রায়ের দ্বারস্থ হয়েছে যুক্তমঞ্চ। সমস্যার সমাধানে পাশে থাকার আর্জি জানিয়েছে। তপনবাবু, সন্ধ্যাদেবী ডাক বিভাগে চিঠিও পাঠিয়েছেন। ডাক বিভাগকে গ্রাহকদের সমস্যার বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার আর্জি জানিয়েছেন। তপনবাবুরাও চাইছেন, ডাকঘরটি পুরনো জায়গাতেই থাকুক। যুক্তমঞ্চের পক্ষে সত্যেন্দ্রনাথ মহাপাত্র বলেন, “ডাক বিভাগ এটিকে বোগদা থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার দূরে খড়্গপুর শহরের একপ্রান্তে স্থানান্তর করতে চায়। আমরা এই উদ্যোগকে ধিক্কার জানাচ্ছি এবং সর্বশক্তি দিয়ে এর মোকাবিলা করার অঙ্গীকার করছি।”
যুক্তমঞ্চের বক্তব্য, খড়্গপুর রেলস্টেশনের জন্মলগ্ন থেকে রয়েছে বোগদা ডাকঘর। এই ডাকঘর থেকে অনেকে পেনশন তোলেন। অনেক আমানতকারীও রয়েছেন। এখান থেকে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের পরিষেবাও নেন অনেকে। বয়স্ক মানুষদের পক্ষে আরও সাত কিলোমিটার দূরে যাওয়া অসম্ভব। বীরেন্দ্রনাথবাবু বলেন, “ডাকঘরটি বোগদা থেকে স্থানান্তরিত হলে সব পরিষেবা গ্রহণকারী চরম সমস্যায় পড়বেন। এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে জনস্বার্থবিরোধী।’’ যুক্তমঞ্চের বক্তব্য, ডাক- কর্তৃপক্ষ তাদের আশ্বস্ত করেছে যে বোগদা ডাকঘরটি স্থায়ী ভাবে স্থানান্তর হচ্ছে না। এই স্থানান্তর অস্থায়ী। ডাকঘরটি দীর্ঘদিন সংস্কার হয়নি। তাই সংস্কার করা জরুরি। স্থানান্তর হলে সংস্কার শুরু হবে। ডাক বিভাগের সিনিয়র সুপারিন্টেনডেন্ট রসিকলাল হেমব্রম বলেন, ‘‘রেলের ওই ঘরটি সংস্কারের প্রয়োজন। তাই ডাকঘরটি অস্থায়ী ভাবে স্থানান্তরের কথা ভাবা হয়েছে।’’ ডাক বিভাগের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘বোগদা থেকে ডাকঘর সরানোর কোনও ইচ্ছা আমাদের নেই। কিন্তু ওই বিপজ্জনক ঘরে কোনও সরকারি দফতর চলতে পারে না।’’
যুক্তমঞ্চ অবশ্য এই যুক্তি মানতে নারাজ। বীরেন্দ্রনাথবাবু বলেন, “ডাক বিভাগের তেমন ভাবনা থাকলে ডাক বিভাগ এবং রেল দফতর পারস্পরিক আলোচনা করে সংস্কারের সমস্যা সমাধানে সচেষ্ট হতে পারত। স্থানান্তর কখনও এই সমস্যার সমাধান হতে পারে না। সংস্কারের জন্য স্থানান্তর করা হলে স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় স্থানান্তর করা হোক।’’