খড়্গপুর গ্রামীণ হাসপাতাল

রোগীর ঝুলন্ত দেহ, বেআব্রু নিরাপত্তা

নিয়মের বালাই নেই, নেই নিরাপত্তাও। শুক্রবার ভোরে খড়্গপুরের হিজলি গ্রামীণ হাসপাতালের মেল ওয়ার্ডে এক রোগীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের পরে সেই ছবিটাই বেআব্রু হল।৬০ শয্যার এই গ্রামীণ হাসপাতালে রোগীদের আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনও নিয়মই মানা হয় না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:৪৫
Share:

জরুরি বিভাগের ভিতরে কুকুরের নিশ্চিন্ত আশ্রয়। নিজস্ব চিত্র।

নিয়মের বালাই নেই, নেই নিরাপত্তাও। শুক্রবার ভোরে খড়্গপুরের হিজলি গ্রামীণ হাসপাতালের মেল ওয়ার্ডে এক রোগীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের পরে সেই ছবিটাই বেআব্রু হল।

Advertisement

৬০ শয্যার এই গ্রামীণ হাসপাতালে রোগীদের আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনও নিয়মই মানা হয় না। গত ৬ সেপ্টেম্বর জ্বর নিয়ে ভর্তি হওয়া কচি সিংহ (৩৮) তাই অনায়াসে বৃহস্পতিবার বিকেলে বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন। পূর্বপাতরি গ্রামের বাড়ি থেকে ফিরে ফের হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে পড়েন তিনি। রাতে তাঁর চিৎকার শুনতে পান অন্য রোগীরা। তবে হাসপাতালের কেউ আসেননি বলে অভিযোগ। তারপর শুক্রবার ভোরে বিছানার ধারেই জানলায় লাগানো দড়ির ফাঁসে ওই যুবকের ঝুলন্ত দেহ দেখতে পাওয়া যায়।

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, ওই রোগী আত্মঘাতী হয়েছেন। কিন্তু ১৬ জন রোগীর মাঝে ওয়ার্ডের মধ্যে কী ভাবে সেটা সম্ভব হল সেই প্রশ্ন উঠছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরিশচন্দ্র বেরাও বলেন, “প্রাথমিকভাবে ঘটনাটি আত্মহত্যার বলেই মনে হচ্ছে। বিষয়টি পুলিশ দেখছে। তবে এতজন রোগীর মধ্যে কী ভাবে ওই রোগী আত্মহত্যা করলেন সেটা আমাকে ভাবাচ্ছে। খড়্গপুরের অতিরিক্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের রিপোর্ট চেয়েছি। রিপোর্ট পেলে পদক্ষেপ করা হবে।”

Advertisement

এই হাসপাতালে কোনও নিরাপত্তারক্ষী নেই। রোগীরা যখন-তখন বাইরে বেরিয়ে যান। আর ওয়ার্ডের ভিতরে অবাধে ঘুরে বেড়ায় কুকুর-বেড়াল। তবে বৃহস্পতিবার রাতে মেল ওয়ার্ডের পাশের ঘরেই ছিলেন হাসপাতালের নার্স ও কর্মীরা। তবু রাত ১১টা থেকে কচি চেঁচানো সত্ত্বেও কেউ কেন এলেন না সেই প্রশ্ন উঠেছে। ওই ওয়ার্ডের রোগী রামু হাঁসদা, নবীন মাণ্ডিরা বলেন, “রাতে হাসপাতালের কর্মীদের ডাকাডাকি করছিল ছেলেটি। রেগে গিয়ে লাঠি হাতে একটা ঘড়িও ভাঙে সে। আমরা ভয়ে ওয়ার্ড ছেড়ে বেরিয়ে বাইরে চলে যাই। সারা রাত বাইরেই ঘুমিয়েছিলাম। ভোরে দেখি এই কাণ্ড।’’ যদিও হাসপাতালের কর্তব্যরত কর্মীদের দাবি, ভোর চারটে নাগাদ কচিকে শয্যায় চুপ করে বসে থাকতে দেখা গিয়েছে। তারপরে এই ঘটনা ঘটেছে। ঘটনায় মৃতের পরিবারের তরফে কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। মৃতের দাদা বিনোদ সিংহ বলেন, “বৃহস্পতিবার বিকেলে ভাই বাড়িতে গিয়েছিল। কোনও অশান্তি হয়নি।
হাসপাতালে ফিরে এমন ঘটনা ঘটাবে ভাবতে পারিনি।’’

শুধু ঢিলেঢালা নিরাপত্তা নয়, এই হাসপাতালের পরিবেশও অপরিচ্ছন্ন। এ দিনও দেখা গেল জরুরি বিভাগে ঢোকার মুখেই নিশ্চিন্তে জিরোচ্ছে কুকুরের পাল। রোগীদের খাবারের উচ্ছিষ্ট খাচ্ছে এক দল বেড়াল। রোগী ও পরিজনেদের অভিযোগ, শুধু রাত নয়, দিনেও নার্স ও চিকিৎসকের দেখা মেলে না। চিকিৎসাধীন অবনী মাহাতো বলেন, “দিনে একবার ডাক্তার আসেন। সারাদিনে আর কেউ আসে না।’’

খড়্গপুরের অতিরিক্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দেবাশিস পালের অবশ্য দাবি, “ডেকেও নার্স ও কর্মীদের সাড়া পাওয়া যায় না এই অভিযোগ ঠিক নয়। একজন রোগীর এমন মৃত্যুতে ভয় পেয়ে কয়েকজন রোগী সাময়িক ভাবে বাইরে গিয়েছিলেন। পরে ফিরেও আসেন। ভোরে তো আমাদের কর্মীরাই দেখেছেন, ওই রোগী বিছানায় বসে ছিলে। পরে তাঁর ঝুলন্ত দেহ মেলে।”

এই হাসপাতালে কর্মীরও অভাব রয়েছে। ৬ জন চিকিৎসকের পদ, অথচ আছেন ৪ জন। সাফাইকর্মী রয়েছেন মাত্র ৩ জন। আর চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর ৩৯টি পদ থাকলেও লোক আছেন মাত্র ৮ জন। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরিশচন্দ্রবাবু বলেন, “ওখানে কর্মীর অভাব রয়েছে ঠিকই। তবে কর্মীরা ডাকলে আসেন না এই অভিযোগ ঠিক নয়। আর গ্রামীণ হাসপাতাল হওয়ায় কুকুর-বেড়াল হয়তো আছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement