—ফাইল চিত্র।
উত্তমকুমারের স্মৃতি বিজড়িত সরডিহা স্টেশনে ভবিষ্যতে আর দাঁড়াবে না সুপার ফাস্ট স্টিল এক্সপ্রেস।এমনই আশঙ্কায় মঙ্গলবার রাতে স্টেশন ম্যানেজারকে স্মারকলিপি দিলেন এলাকাবাসীর একাংশ। বিধানসভা ভোটের আগে এমন আশঙ্কায় অস্বস্তি শুরু হয়েছে গেরুয়া শিবিরে।
দক্ষিণ-পূর্ব রেলের টাটা খড়্গপুর শাখার সরডিহা স্টেশনটি আছে ঝাড়গ্রামের মানিকপাড়া এলাকায়। ছোট হলেও বহু যাত্রী এই স্টেশনের উপরে নির্ভরশীল। সত্তরের দশকের গোড়ায় পীযূষ বসু পরিচালিত ‘বাঘবন্দি খেলা’ সিনেমার শ্যুটিং হয়েছিল ওই ছোট স্টেশনে। সিনেমায় এই স্টেশনটির নাম ছিল ‘রানিপুর’। ১৯৭৪ সালে উত্তমকুমার যখন সরডিহা স্টেশনে শ্যুটিং করেছিলেন, তখন কেবল ওই সময়কার হাওড়া-বোম্বাই এক্সপ্রেসটিই একমাত্র সরডিহায় থামত। পরে ওই এক্সপ্রেস ট্রেনের স্টপেজ উঠে যায়। তখন টাটা-খড়্গপুর শাখার মাত্র চারটি লোকাল ট্রেন সরডিহায় দাঁড়াতো। এখন লোকালের সংখ্যা বাড়লেও করোনা পরিস্থিতিতে এই শাখায় এখনও লোকাল ট্রেন চলছে না।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সরডিহা স্টেশনের পরিকাঠামোর উন্নতি হয়েছে। আগে ছিল চারটি প্ল্যাটফর্ম। এখন তা বেড়ে হয়েছে সাতটি। নতুন ফুটওভার ব্রিজ হয়েছে। নিত্যযাত্রীদের দাবিতে ২০০৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে টাটা-হাওড়া স্টিল সুপার ফাস্ট এক্সপ্রেস সরডিহা স্টেশনে স্টপেজ দেওয়া শুরু করে। লকডাউনের পরে সম্প্রতি স্টিল এক্সপ্রেস যাতায়াত শুরু করেছে। এখন অগ্রিম আসন সংরক্ষণ করতে হচ্ছে। সরডিহা স্টেশনে রিজার্ভেশন কাউন্টার না থাকায় যাত্রীরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনলাইনে আসন সংরক্ষণ করেন। কিন্তু মঙ্গলবার ১ ডিসেম্বর থেকে অনলাইনে সরডিহা স্টেশন থেকে অগ্রিম আসন সংরক্ষণ করা যাচ্ছে না।
যাত্রীদের অভিযোগ, অনলাইনে স্টিল এক্সপ্রেসে সরডিহা স্টেশন থেকে টিকিট কাটার সুযোগই নেই। অথচ ট্রেনটি মঙ্গলবার ও বুধবারও যথারীতি সরডিহা স্টেশনে থেমেছে। ওই ট্রেনে অগ্রিম আসন সংরক্ষণ করা যাচ্ছে না, রেল সূত্রে অবশ্য সেই ব্যাখ্যা মিলছে না। সদুত্তর দিতে পারেননি সরডিহার স্টেশন ম্যানেজারও।
মানিকপাড়ার বাসিন্দা চঞ্চল দে, সমীর পাল, মুনমুন ছাওছেরিয়ার ক্ষোভ, ‘‘স্টিল এক্সপ্রেস ছাড়া আর কোনও দূরপাল্লার এক্সপ্রেস ট্রেন সরডিহায় থামে না। আরও বেশ কিছু এক্সপ্রেস ট্রেনের স্টপেজ দেওয়ার দাবি থাকলেও মানা হয়নি। এখন স্টিলের টিকিট অগ্রিম বুকিংও করা যাচ্ছে না। আমাদের আশঙ্কা স্টিল এক্সপ্রেসের স্টপেজও তুলে দেওয়া হতে পারে।’’
বিধানসভা ভোটের আগে এই নিয়ে বিজেপিকে তোপ দেগেছে রাজ্যের শাসকদল। বুধবার ঝাড়গ্রামের রূপছায়া মোড়ের দলীয় কার্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠকে জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র সুব্রত সাহা অভিযোগ করেন, কেন্দ্র সরকার মর্জিমতো ট্রেন চালাচ্ছে। সরডিহা স্টেশনে স্টিলের স্টপেজ তুলে দেওয়ার চক্রান্ত হচ্ছে। তাই সরডিহা থেকে স্টিল এক্সপ্রেসের অগ্রিম বুকিং তুলে দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি বুঝে সমস্যা মেটানোর জন্য ইতিমধ্যেই রেলমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন ঝাড়গ্রামের বিজেপি সাংসদ কুনার হেমব্রম। সাংসদের আশ্বাস, ‘‘রেলমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে সমস্যা মেটাতে পদক্ষেপ করব।’’ খড়গপুর রেলের জনসংযোগ আধিকারিক আদিত্য চৌধুরী বলেন, ‘‘বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।’’