প্যারবোলা স্যারকে মনে আছে তো?
খুঁজে পেতে হলে আসতে পারেন মেদিনীপুর বইমেলায়। না তিনি সত্যবান চক্রবর্তী নন। তবে জ্যামিতি তাঁর ঠোঁটস্থ, বীজগণিত, পাটিগণিতও গুলে খেয়েছেন। একের পর এক গাণিতিক সূত্র গরগর করে বলে দিতে পারেন। গোটা জীবনটাই যেন একটা অঙ্ক। একসময় নিজে শিক্ষকতা করতেন। এখন ষাটোর্ধ্ব মিহির সমাজদার ‘অঙ্কের ফেরিওয়ালা’।
প্যারাবোলা স্যারের মতো তিনিও জানেন না কেমন করে কবে এ নাম হয়ে গেল। তবে অঙ্কের প্রতি তাঁর দুর্নিবার মোহ তাঁকে করে তুলেছে অন্যরকম। বাড়ি দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটে। কিন্তু গোটা রাজ্যে জুড়ে ফেরি হয় হয় তাঁর অঙ্ক। কোথাও বইমেলা হচ্ছে শুনলেই তিনি হাজির হয়ে যান পসরা নিয়ে। তিনিই লেখক, তিনিই প্রকাশক, তিনিই বিক্রেতা। প্রথম থেকে দশম শ্রেণির অঙ্ক, বা তারও পরে, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার বিভিন্ন অঙ্কের সহজ সমাধান নিয়ে হাজির তিনি বইমেলায়।
মেদিনীপুরের বইমেলায় তাঁর স্টলে এখন বেশ ভিড়। হরেক রকম অঙ্কের বইও রয়েছে। মিহিরবাবু চান, আজকালকার ছেলেমেয়েরা ভীতি ভুলে অঙ্ককে ভালবাসুক। অঙ্কের মৌলিক ধারণাগুলো রপ্ত করুক। তাঁর কথায়, “মৌলিক ধারণাগুলো স্পষ্ট হয় না বলেই অঙ্ক নিয়ে একটা ভীতি কাজ করে। অথচ, অঙ্ক যে খুব কঠিন তা নয়। অঙ্ককে ভালবাসতে হবে।”
নিজে এক সময় ছাত্র পড়াতেন। স্ত্রী মাধবী সরকার বালুরঘাটের খাসপুর বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। অঙ্কের প্রতি ভালবাসা কি ছোটবেলা থেকেই? শুরুর দিনগুলোর অনেক কথা মনে পড়ে মিহিরবাবুর। এক সময় তাঁর মনে হত অঙ্ক কি কঠিন! কথা বলতে বলতে হেসে ফেলেন মিহিরবাবু। অষ্টম শ্রেণির অঙ্ক পরীক্ষায় পাশ করতে পারেননি।
তারপরই কেমন করে যেন বদলে গেল ছবিটা। ‘অঙ্ক পাগল’ মানুষটা বলেন, “সে দিন ফেল করেছিলাম বলেই জেদটা আরও চেপে বসে। দ্বিজেন কাটিয়ার নামে এক শিক্ষক আমাকে সহজ ভাবে অঙ্ক শেখান। ভীতিটা চলে যায়। আমার মনে হয়, সকলের কাছে অঙ্কটা এক মজার বিষয়ই হওয়া উচিত।” তাই তাঁর প্রথম লেখা বইয়ের নামও ‘অঙ্কের মজা’। নিজের লেখা বই নিয়ে এক সময় স্কুলে স্কুলে গিয়েছেন। ছাত্রছাত্রী-শিক্ষকদের দিয়েছেন। মিহিরবাবুর অভিজ্ঞতায়, “শুধু তো বই লিখলে হবে না। যাদের জন্য লেখা তাদের কাছে পৌঁছতে হবে। তাই এক সময় স্কুলে স্কুলে গিয়ে বই দিয়ে এসেছি। স্ত্রী পাশে থেকে উত্সাহ দিয়েছেন। তাই এ সব করতে পেরেছি।”
বৃহস্পতিবার মিহিরবাবুর স্টলে এসেছিল অষ্টম শ্রেণির ছাত্র সৌরভ পাল, ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী শ্রেয়সী দত্ত। অনেক বই কিনে নিতে নিতে সৌরভরা বলছিল, “অঙ্ক করতে একটু ভয়ই লাগে। তবে এখানে নতুন নতুন বই দেখে ভাল লাগছে। কিছু বিষয় খুব সহজ করে বোঝানো হয়েছে।”
বইমেলা ও মৈত্রী উত্সব সমিতির উদ্যোগেই এখন মেদিনীপুর শহরে চলছে বইমেলা। সমিতির অন্যতম সদস্য তথা শিক্ষক মধুসূদন গাঁতাইত বলেন, “দিন কয়েক ধরেই দেখছি, ওই স্টলে বেশ ভিড় হচ্ছে। ওখানে ভাল কিছু বইও রয়েছে। সহজ করে অঙ্ক শিখলে অঙ্কটাও একটা মজার বিষয় হয়ে ওঠে।” মিহিরবাবু যেন অঙ্কের ভাষাতেই সকলকে মজিয়ে রাখতে চান। অঙ্ককে যেন ম্যাজিকে পরিণত করতে চান।