তনুশ্রী ও বিপ্লব। নিজস্ব চিত্র
লকডাউনে রক্তের সঙ্কট রয়েছে বিভিন্ন ব্লাড ব্যাঙ্কে। রক্তের অভাবেই ক্রমশ নেতিয়ে পড়ছিলেন থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীটি। শনিবার লকডাউনের দিনই তাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলেন তার শিক্ষক। দিলেন রক্ত।
কোলাঘাটের ক্ষেত্রহাট হারাধন ইনস্টিটিউটের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী তনুশ্রী পাঁজা দেড় বছর বয়স থেকে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত। তাঁকে মাসে দু’বার বি পজ়িটিভ রক্ত দিতে হয়। ২০১৫ সালে দুর্ঘটনায় মারা যান তনুশ্রী বাবা তরুণ পাঁজা। দুই মেয়ের পড়াশোনার খরচ চালানোর পাশাপাশি তনুশ্রীর চিকিৎসার খরচ চালাতে হিমশিম অবস্থা মা নিবেদিতার। তবে তাঁদের সংসার চলছিল।
সমস্যার শুরু হয় লকডাউনে। এই সময় রক্তের সঙ্কট দেখা দেওয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শ মতো তনুশ্রীকে মাসে একবার করে রক্ত দেওয়া হচ্ছে। গত ১১ জুলাই তাকে শেষবার রক্ত দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এর পরে একমাস হতে চললেও আর ওই গ্রুপের রক্ত মেলেনি বলে দাবি তনুশ্রীর পরিবারের। রক্তের অভাবে শারীরিক অবস্থা ক্রমশ খারাপ হচ্ছিল। শেষে রক্তদাতার খোঁজে বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে আবেদন জানানো হয়। তা দেখে এগিয়ে আসেন তনুশ্রীর এক সময়ের শিক্ষক বিপ্লব ভট্টাচার্য।
২০১৬ সালে তনুশ্রী যখন পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন, তখন ক্ষেত্রহাট হারাধন ইনস্টিটিউটে সহকারি শিক্ষক হিসাবে কর্মরত ছিলেন বিপ্লব ভট্টাচার্য। পরে তিনি কোলা ইউনিয়ন হাইস্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে বদলি হয়ে চলে যান। হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ছাত্রীর পরিবারের আবেদন দেখে তিনি তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এর পরেই শনিবার পাঁশকুড়া সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে তনুশ্রীকে রক্ত দেন বিপ্লব। তিনি বলেন, ‘‘তনুশ্রী আমার এক সময়ের ছাত্রী। ওর আর আমার রক্তের গ্রুপ একই। সময় মতো রক্ত দিতে না পারলে ওর জীবনহানির আশঙ্কা ছিল। তাই এই সিদ্ধান্ত।’’
শিক্ষকের ভূমিকায় খুশি তনুশ্রীর পরিবারও। মা নিবেদিতা বলেন, ‘‘এ দিন বুঝলাম শিক্ষক শুধু জ্ঞানদান করেন না— জীবন দানও করেন। উনি অন্য স্কুলে চলে গেলেও প্রাক্তন ছাত্রীর বিপদে যেভাবে পাশে দাঁড়িয়েছেন তাতে আমরা প্রতি কৃতজ্ঞ।’’ আর তনুশ্রীর কথায়, ‘‘স্যরকে ধন্যবাদ জানানোর ভাষা নেই। আমি সুস্থ হয়ে অনেক দূর পড়াশোনা করতে চাই।’’