হস্তক্ষেপ করেছিলেন খোদ দলের মহাসচিব। তাতেও জামবনির জট কাটল না। উল্টে ‘অনুকূল পরিবেশ’ না থাকার ব্যাখ্যা দিয়ে পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠনই স্থগিত করে দিল জেলা প্রশাসন।
জামবনির দুবড়ায় গত ২৮ অগস্ট দেহ মিলেছিল তৃণমূল নেতা চন্দন ষড়ঙ্গীর। তারপর সাত দিনে পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠনের পরিবেশ নিয়ে প্রশাসন কোনও বার্তা দেয়নি। কিন্তু মঙ্গলবার, বোর্ড গঠনের দিন সকালেই জানানো হয় এই প্রক্রিয়া আপাতত স্থগিত থাকছে। ঝাড়গ্রামের জেলাশাসক আয়েষা রানি বলেন, “পুলিশের রিপোর্টের ভিত্তিতে ওখানে অনুকূল পরিবেশ না থাকায় আপাতত সভাপতি নির্বাচন স্থগিত রাখা হয়েছে।” খুনের সাত দিন পরে এই সিদ্ধান্ত কেন? জেলাশাসকের জবাব, “পুলিশ যেমন রিপোর্ট দিয়েছে সেই মতো পদক্ষেপ করা হয়েছে।”
বিরোধীরা অবশ্য বিঁধছে। সিপিএমের ঝাড়গ্রাম জেলা সম্পাদক পুলিনবিহারী বাস্কে বলেন, ‘‘তীব্র গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে কে সভাপতি হবেন ঠিক করতে পারছিল না তৃণমূল। সেই কারণেই অনুকূল পরিবেশ না থাকার দোহাই দিয়ে প্রশাসনকে ব্যবহার করে সভাপতি নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে।’’ বিজেপির ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি সুখময় শতপথীরও বক্তব্য, ‘‘তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যে রাজ্য নেতৃত্বও নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না।’’
২০ আসনের জামবনি পঞ্চায়েত সমিতিতে ১৪টিতেই জিতেছে তৃণমূলের প্রার্থীরা। ৫টি আসন পেয়েছে বিজেপি, একটি সিপিএম। বোর্ড গঠনে বাধা না থাকলেও নিহত চন্দন ঘনিষ্ঠ ব্লক তৃণমূল সভাপতি নিশীথ মাহাতো ও জেলা যুব তৃণমূলের সভাপতি দেবনাথ হাঁসদা এবং দলের এসটি সেলের জেলা সভাপতি অর্জুন হাঁসদা ও জামবনি পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী সভাপতি সমীর ধলের বিরোধে সভাপতির নাম চূড়ান্ত করা যাচ্ছিল না।
সোমবার রাতে দুই গোষ্ঠীর নেতা ও পঞ্চায়েত সমিতির নির্বাচিত সদস্যদের কলকাতায় নিজের বাড়িতে ডেকেছিলেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান সুকুমার হাঁসদা, জামবনি ব্লক তৃণমূলের সভাপতি নিশীথ মাহাতো, জেলা যুব তৃণমূলের সভাপতি দেবনাথ হাঁসদারা রাতে পার্থবাবুর কাছে পৌঁছন, সঙ্গে ছিলেন জামবনি পঞ্চায়েত সমিতির নির্বাচিত তিন জন সদস্য। কিন্তু বাকি ১১ জনকে নিয়ে জেলা এসটি সেলের সভাপতি অর্জুন অনেক রাতে কলকাতায় পৌঁছন। তখন আর আলোচনা সম্ভব ছিল না। সূত্রের খবর, এরপরই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলে সভাপতি নির্বাচন স্থগিত করতে জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেন পার্থবাবু।
তৃণমূল নেতারা অবশ্য এ নিয়ে কিছু বলছেন না। অর্জুন শুধু বলেন, “জ্যামে আটকে যাওয়ায় কলকাতায় পৌঁছতে রাত হয়ে গিয়েছিল।” নিশীথের মোবাইল বন্ধ ছিল। আর তৃণমূলের ঝাড়গ্রাম জেলা চেয়ারম্যান সুকুমার হাঁসদা বলেন, “সভাপতি নির্বাচন আপাতত বন্ধ। আমি বাইরে আছি।”
গোপীবল্লভপুর-২ ব্লক এবং নয়াগ্রাম ব্লকে অবশ্য মহাসচিবের ঠিক করে দেওয়া প্রার্থীরাই সভাপতি ও সহ-সভাপতি হয়েছেন। গোপীবল্লভপুর-২ ব্লকে ১১-৬ ভোটে তৃণমূলের হিমসাগর সিংহ সভাপতি পদে নির্বাচিত হন। আর কালিপদ সুর-সহ সভাপতি হয়েছেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। সহ-সভাপতি নির্বাচনে বিজেপি সদস্যরা যোগ দেননি। নয়াগ্রামে সভাপতি হন সঞ্চিতা ঘোষ ও সহ-সভাপতি তরণী রাউত। বিরোধী বিজেপি এখানেও ভোটাভুটিতে যায়নি।