দফায় দফায় ঝড়-বৃষ্টি, বোরো চাষে ক্ষতির আশঙ্কা

মাঠের পাকা ধান যখন ঘরে তোলার আশায় দিন গুনছেন চাষিরা, তখন বাধ সাধল প্রকৃতি। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার প্রায় সর্বত্রই বৃহস্পতিবার থেকে দফায় দফায় বৃষ্টির জেরে বোরো ধানের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষিরা। জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় এ বার প্রায় ১ লক্ষ ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। তার মধ্যে ২৫ শতাংশ জমির ধান ইতিমধ্যেই কাটা হয়ে গিয়েছে

Advertisement

সামসুদ্দিন বিশ্বাস ও কৌশিক মিশ্র

হলদিয়া ও এগরা শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৫ ০১:০৪
Share:

জমা জলে ক্ষতি আশঙ্কায় কাটা ধান সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন চাষিরা। এগরার মহাবিশ্রা গ্রামে। — নিজস্ব চিত্র।

মাঠের পাকা ধান যখন ঘরে তোলার আশায় দিন গুনছেন চাষিরা, তখন বাধ সাধল প্রকৃতি। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার প্রায় সর্বত্রই বৃহস্পতিবার থেকে দফায় দফায় বৃষ্টির জেরে বোরো ধানের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষিরা।

Advertisement

জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় এ বার প্রায় ১ লক্ষ ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। তার মধ্যে ২৫ শতাংশ জমির ধান ইতিমধ্যেই কাটা হয়ে গিয়েছে। দিন দশেকের মধ্যে বাকি জমির ধানও কাটার উপযুক্ত হয়ে যাবে। তার আগেই বৃহস্পতিবার থেকে দফায় দফায় ঝড় ও বৃষ্টির জেরে অধিকাংশ ধান জমিতে জল জমে রয়েছে। বৃষ্টির সঙ্গে প্রবল হাওয়াতেও গাছ থেকে ধান ঝ়রে পড়ছে। অনেক জমিতে কাটা ধানও জলে ভিজে নষ্ট হতে বসেছে। ভিজে ধান থেকে অঙ্কুর বেরিয়ে যাওয়ায় সমস্যায় চাষিরা। ফলে অনেকে বাধ্য হয়ে অনেকে সময়ের আগেই ধান কেটে নিচ্ছেন।

কৃষি দফতর সূত্রে খবর, জেলায় মূলত হলদিয়া, মহিষাদল, নন্দকুমার, ময়না, কাঁথি-২ ও ৩ ব্লক, ভগবানপুর-১ ও ২ ব্লক, এগরা-১ ও ২ ব্লক ও পটাশপুর-১ ব্লকে বোরো ধানের ক্ষতি হয়েছে। জেলা কৃষি দফতরের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, জেলার ১১টি ব্লকে প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমির বোরো ধানের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে পটাশপুর-১ ও ময়না ব্লকে। পটাশপুর-১ ব্লকের প্রায় ১০ হাজার হেক্টর ও ময়না ব্লকের প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমির ধানের ক্ষতি হতে পারে।

Advertisement

জেলা কৃষি দফতরের উপ-অধিকর্তা (প্রশাসন) সুশান্ত মহাপাত্র জানান, গত কয়েকদিন দফায় দফায় বৃষ্টির পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন অংশে ঝড়ও হয়েছে। এর ফলে জেলার প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে ধানের ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিক রির্পোটে জানা গিয়েছে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘অনেক জায়গায় জমিতে ধান কাটা অবস্থায় পড়ে রয়েছে। বৃষ্টির জন্য মাঠ থেকে চাষিরা ওই ধান তুলতে পারেননি। জলের তলায় ধান থাকার ফলে অঙ্কুর হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তাছাড়া অনেক জায়গায় ঝড়বৃষ্টির ফলে জমিতে ধানও ঝরে পড়েছে। ফলে ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছেই।’’

মহিষাদলের বামুনিয়ার চাষি ভবানীপ্রসাদ তুং জানান, দু’দিনের বৃষ্টিতে জমির কাটা ধান জলে ডুবে রয়েছে। যে সব জমিতে ধান কাটা হয়নি, সেখানে প্রবল ঝোড়ো হাওয়ায় ধান গাছগুলি জলে নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মহিষাদলের মছলন্দপুরের এক চাষি তপন মাইতি জানান, জলে ডুবে থাকায় ধানে অঙ্কুর দেখা দিচ্ছে। অঙ্কুর যুক্ত ধান থেকে ভাল চাল হয় না। মহিষাদল ব্লকে সহ-কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) মৃণালকান্তি বেরা জানান, বৃহস্পতিবারের ঝড় বৃষ্টিতে ব্লকে প্রায় সাড়ে তিনশো হেক্টর ধান জমিতে ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। শুক্রবার ও শনিবারের বৃষ্টির ফলে আরও প্রায় ২ হাজার দু’শো হেক্টর জমিতে ক্ষতি হতে পারে।

বিগত কয়েকদিন দফায় দফায় বৃষ্টির জেরে অধিকাংশ চাষের জমি জলমগ্ন। প্রবল ঝোড়ো হাওয়ায় ধান গাছগুলিও দুর্বল হয়ে পড়েছে। ফলে ক্ষতির পরিমাণ কমাতে দ্রুত ধান কাটতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকে। এগরা-১ ব্লকের মহাবিশ্রা গ্রামের কৃষক রাধাকৃষ্ণ আচার্য বলছিলেন, ‘‘এখন কালবৈশাখীর সময়। তবে প্রতিদিন বৃষ্টি হওয়ায় মাঠে জল জমে পাকা ধানের ক্ষতি হচ্ছে।’’

ধানের ক্ষতির বিষয়ে এগরা মহকুমা কৃষি আধিকারিক কল্লোল পাল জানান, গত কয়েক দিনের ঝড়-বৃষ্টিতে পাকা ধানের ক্ষতি হয়েছে। মূলত, ভগবানপুর-১ ও পটাশপুর-১ ব্লকে ক্ষতির পরিমাণ বেশি। এ ছাড়াও এগরা-১ ও ২, পটাশপুর-২ ব্লকেও ধানের ক্ষতি হয়েছে। এ বার এগরা মহকুমায় প্রায় ৪৮ হাজার হেক্টর জমির মধ্যে ৩০ হাজার হেক্টর জমির বোরো চাষের ত্ক্ষতি হয়েছে। এই মর্মে জেলা প্রশাসনের কাছে প্রাথমিক রিপোর্ট পাঠিয়েছি। শীঘ্রই পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তৈরি করে পাঠাব।

একইভাবে, ভগবানপুর-১ ব্লকের চড়াবাড় গ্রামের চাষি সুবল ঘড়াই বলেন, ‘‘নিজের সবকিছু দিয়ে মাঠে ধান ফলিয়েছি। এখন ধান পাকার সময় ঝড়জলে সব নষ্ট হয়ে যেতে বসেছে। আমি নিঃস্ব হয়ে যাব।’’ এ বিষয়ে ভগবানপুর ১ ব্লকের বিডিও উমাশঙ্কর দাস বলেন, ‘‘কালবৈশাখীতে এলাকার কৃষকদের চাষের ক্ষতি হয়েছে। তবে ক্ষতির পরিমাণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ পটাশপুর-২ ব্লকের বিডিও বুলবুল বাগচিরও বক্তব্য, ‘‘ব্লকে ঝড় ও বৃষ্টিতে ঘরবাড়ি ও ফসলের প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। এ ব্যাপারে রিপোর্ট মহকুমা প্রশাসনে পাঠাব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement