মুশকিল আসান দিদি, ঘর পেল অনাথ কিশোরী 

সুনীতার মামাবাড়ি ডেবরার বালিচকের চককুমারে। বাবা বিদিশ মাইতি বছর পনেরো আগে মারা যান। মা রীতা বছর দুয়েক আগে মারা যান।

Advertisement

বরুণ দে

শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:৫২
Share:

প্রতকী চিত্র।

মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ঘর চেয়ে আবেদন করেছিল মেয়েটি। আবেদনে সাড়া দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সরকারি প্রকল্পে ঘর পেল সুনীতা মাইতি। সুনীতা অনাথ। দুই পৃথক দুর্ঘটনায় তার বাবা- মা মারা গিয়েছেন। সে এখন মামাবাড়িতে থাকে। সরকারি প্রকল্পে ঘর তৈরির টাকা পেয়ে খুব খুশি সুনীতা।

Advertisement

বছর সতেরোর মেয়েটির কথায়, ‘‘দিদিকে (মুখ্যমন্ত্রী) ঘর দেওয়ার জন্য বলেছিলাম। দিদি আবেদনে সাড়া দিয়ে আমাকে ঘর দিয়েছেন। আমি খুব খুশি।’’ পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক রশ্মি কমল মানছেন, ‘‘সুনীতাকে সরকারি প্রকল্পে ঘর দেওয়া হয়েছে।’’ জেলা প্রশাসনের এক সূত্রের দাবি, এমন সহায়তা দেওয়ার নজির খুব বেশি নেই। সুনীতা এখনও সাবালক হয়নি। তা-ও সবদিক বিবেচনা করে তাকে সরকারি প্রকল্পে ওই সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ ছিল, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পদক্ষেপ করতে হবে। সেই মতো পদক্ষেপ করা হয়েছে।’’ শুক্রবারই ঘর তৈরির প্রথম কিস্তির টাকা পেয়েছে সুনীতা।

Advertisement

গত সেপ্টেম্বরে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সফরে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ডেবরায় তিনি প্রশাসনিক বৈঠক করেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীকে নিজেদের সমস্যার কথা জানানোর জন্য রাস্তার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন স্থানীয় কয়েকজন। ডেবরা থেকে ফেরার পথে গাড়ি থেকে নেমে তাঁদের সমস্যার কথা শোনেন মুখ্যমন্ত্রী। স্থানীয়দের ওই ভিড়ে ছিল সুনীতা। মুখ্যমন্ত্রীকে সে বলেছিল, ‘‘আমি অনাথ। আমার বাবা- মা নেই। দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন। মামাবাড়িতে থাকি। একটা ঘর পেলে ভাল হত।’’ পাশেই ছিলেন জেলাশাসক রশ্মি কমল। মেয়েটির আবেদন খতিয়ে দেখে দ্রুত পদক্ষেপ করার জন্য জেলাশাসককে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী।

সুনীতার মামাবাড়ি ডেবরার বালিচকের চককুমারে। বাবা বিদিশ মাইতি বছর পনেরো আগে মারা যান। মা রীতা বছর দুয়েক আগে মারা যান। বিদিশের বাড়ি ছিল বেলদায়। সুনীতার ছোটবেলা সেখানেই কেটেছে। বিদিশের গ্যারাজ ছিল। তিনি গাড়ি সারাইয়ের কাজ করতেন। গ্যারাজে একটি লরির স্টেপনি পাল্টানোর কাজ করার সময়ে ওই লরির চাপায় তাঁর মৃত্যু হয়। আচমকা লোহার পাত সরে লরিটি বসে যায়। সুনীতারা এক ভাই, এক বোন। সুনীতা ছোট। বাবার মৃত্যুর পরে মায়ের সঙ্গে মামাবাড়িতে চলে আসে সুনীতারা।

বছর দুয়েক আগে রীতাও মারা যান। সে-ও এক দুর্ঘটনায়। প্রদীপ জ্বালিয়ে সন্ধ্যা দিচ্ছিলেন রীতা। হঠাৎ হাওয়ায় প্রদীপের আগুন শাড়িতে লেগে যায়। মুহুর্তে শাড়ি পুড়ে যায়। অগ্নিদগ্ধ হন রীতা। পরে তাঁর মৃত্যু হয়।

মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে সেপ্টেম্বরেই সুনীতার মামাবাড়িতে যান প্রশাসনের আধিকারিকেরা। অনাথ মেয়েটির সঙ্গে দেখা করেন তাঁরা। সুনীতা এখন বালিচক গার্লস হাইস্কুলের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। প্রশাসনের আধিকারিকেরা দেখেন, সত্যিই ওই কিশোরীর একটি ঘর প্রয়োজন। এরপরই তোড়জোড় শুরু হয়। সেপ্টেম্বরে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছিল সুনীতা।

তার ঘর তৈরির টাকা পেতে ডিসেম্বর হল কেন?

প্রশাসনের এক সূত্র জানাচ্ছে, খড়্গপুর বিধানসভার উপ- নির্বাচনের জন্য পশ্চিম মেদিনীপুরে আদর্শ আচরণবিধি চালু ছিল। তাই ওই বিধি উঠতেই দ্রুত পদক্ষেপ করা হয়েছে। আরেক সূত্র মনে করিয়ে দিচ্ছে, একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সরকারি প্রকল্প অনুমোদিত হয়। এই সময়ের মধ্যে সেই প্রক্রিয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, ‘‘ঘরটি যাতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তৈরি হয় সেদিকে নজর রাখা হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement