প্রধান নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বেআব্রু হয়ে পড়ল ঝাড়গ্রাম ব্লকের মানিকপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতে। সোমবার মানিকপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের নতুন প্রধান নির্বাচন করার জন্য শাসক দলের দু’টি গোষ্ঠীর তরফে দু’জন পদ-প্রার্থীর নাম প্রস্তাব করা হয়। এই পরিস্থিতিতে ভোটাভুটির মাধ্যমে নতুন প্রধান নির্বাচিত হন চন্দনা মাহাতো। বিরোধীদের অবশ্য কটাক্ষ, “প্রধান পদে একাধিক নাম প্রস্তাব হওয়াটা শাসক দলের দস্তুর। কারণ, তৃণমূলে সবাই নেতা। তাই উচ্চ নেতৃত্বের কোনও হুইপ নিচু তলায় মানা হয় না। সোমবার মানিকপাড়াতে সেটাই হয়েছে।”
তৃণমূল পরিচালিত মানিকপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট সদস্য সংখ্যা ১৫। এর মধ্যে তৃণমূল সদস্য ১১ জন। চার জন বিরোধী সদস্যের মধ্যে দু’জন কংগ্রেসের, এক জন ফরোয়ার্ড ব্লক ও এক জন সিপিএম সদস্য। আগের প্রধান মৌমিতা মাহাতো গত ৭ এপ্রিল ঝাড়গ্রামের বিডিও-র কাছে ইস্তফাপত্র জমা দেন। ইস্তফাপত্রে পারিবারিক কারণে প্রধান পদ থেকে অব্যহতি চান মৌমিতাদেবী। তবে তিনি পঞ্চায়েত সদস্য থাকবেন। যদিও স্থানীয় সূত্রের খবর, কয়েক মাস ধরে ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের উন্নয়ন তহবিলের খরচ নিয়ে শাসক দলের দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে তুমুল দ্বন্দ্ব শুরু হয়। যা মেনে নিতে পারছিলেন না মৌমিতাদেবী। মৌমিতাদেবীর ইস্তফাপত্রটি গৃহীত হয়। পঞ্চায়েত আইন অনুযায়ী এক মাসের মধ্যে নতুন প্রধান নির্বাচন করতে হয়।
সোমবার মানিকপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েত কার্যালয়ে প্রধান নির্বাচনের জন্য সভা ডাকেন বিডিও। ১৫ জন সদস্যই সভায় হাজির হন। ঝাড়গ্রাম ব্লকের জয়েন্ট বিডিও ইদ্রিশ আলির উপস্থিতিতে দুপুর বারোটা নাগাদ প্রধান নির্বাচনের কাজ শুরু হয়। মানিকপাড়ার উপ প্রধান নন্দলাল মাহাতো দলীয় পঞ্চায়েত সদস্য চন্দনা মাহাতোর নাম প্রধান পদের জন্য প্রস্তাব করেন। অন্য দিকে, তৃণমূলের এক পঞ্চায়েত সদস্য শকুন্তলা টুডু প্রধান পদের জন্য দলেরই আর এক পঞ্চায়েত সদস্য পুষ্পবালা মাহাতোর নাম প্রস্তাব করেন। শাসক শিবিরের দু’টি গোষ্ঠী দু’জন প্রার্থীর নাম প্রস্তাব করায় ভোটাভুটি অনিবার্য হয়ে পড়ে। ভোটাভুটি এড়ানোর জন্য সব রকম চেষ্টা করেছিলেন তৃণমূলের ঝাড়গ্রাম ব্লক নেতৃত্ব। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তৃণমূলের ঝাড়গ্রাম ব্লক সভাপতি অনিল মণ্ডলের অনুগামীদের সঙ্গে স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা জেলা পরিষদ সদস্য তপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুগামীদের তীব্র রেষারেষি রয়েছে। তবে এলাকায় অনিলবাবুর অনুগামীদের দাপট বেশি। এ দিন পঞ্চায়েত কার্যালয়ের বাইরে জমায়েত হওয়া শাসক দলের দু’টি গোষ্ঠীর লোকজনের মধ্যে উত্তপ্ত বাদানুবাদ শুরু হয়। পরে মানিকপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতে আসেন ঝাড়গ্রামের বিডিও অনির্বাণ বসু।
বিডিও-র উপস্থিতিতে পঞ্চায়েত আইন অনুযায়ী পাঁচ নম্বর ফর্মে ‘ওপেন ব্যালটে’ ভোটাভুটির ব্যবস্থা করা হয়। বিরোধী চার সদস্য অবশ্য ভোটাভুটিতে যোগ দেননি। তৃণমূলের এগারো জন পঞ্চায়েত সদস্যের মধ্যে ৯ জন চন্দনা মাহাতোকে সমর্থন করেন। মাত্র দু’জন সদস্য পুষ্পবালা মাহাতোকে ভোট দেন। গরিষ্ঠ সদস্যদের সমর্থনে প্রধান পদে নির্বাচিত হন অনিল-গোষ্ঠীর অনুগামী হিসেবে পরিচিত চন্দনা মাহাতো। এ দিন তৃণমূলের অন্য গোষ্ঠীর একাধিক সদস্য চন্দনাদেবীকে সমর্থন করেন। বিরোধীদের অবশ্য কটাক্ষ, এ দিন দলের অন্য গোষ্ঠীর পঞ্চায়েত সদস্যদের ‘কেনাবেচা’ করেও ভোটাভুটি এড়াতে পারেন নি নেতৃত্ব।
এদিন প্রধান পদে নির্বাচিত হওয়ার পরে চন্দনাদেবী বলেন, “এলাকার উন্নয়নে সাধ্য মতো চেষ্টা করব। সব সময় মানুষের পাশে থাকব।” তৃণমূলের ঝাড়গ্রাম ব্লক সভাপতি অনিল মণ্ডল বলেন, “দলীয়স্তরে চন্দনা মাহাতোকে প্রধান করার সিদ্ধান্ত হয়। চন্দনাদেবীকে সমর্থন করার জন্য পঞ্চায়েতের ১১ জন দলীয় সদস্যকে হুইপও জারি করা হয়। যাঁরা দলীয় সিদ্ধান্ত না মানেন নি, তাঁদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”