প্যাকেটবন্দি হয়ে আসছে কাঁঠাল। নিজস্ব চিত্র।
দেবীর নৈবেদ্যের পাতে প্রয়োজন কাঁঠাল। কিন্তু করোনা আবহে সেই কাঁঠালই এখন অমিল। কিন্তু কাঁঠাল ছাড়া পুজো হবে কি করে! তাই ১৯৪ বছরের পারিবারিক পুজোর কাঁঠাল এল বেঙ্গালুরু থেকে। অর্ডার দেওয়া হয়েছিল অনলাইনে। একটি বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে প্যাকেট বন্দি সেই কাঁঠাল এসে পৌঁছেছে ঝাড়গ্রাম শহরের বাছুরডোবায় সেন পরিবারে।
সেখানে এখন দেবীবরণের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। দুর্গামণ্ডপে প্রতিমা তৈরির কাজও শেষ পর্যায়ে। সেন পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ১২৩৫ বঙ্গাব্দে পূর্ববঙ্গের ময়মনসিংহে র আকুয়াপাড়ায় পুজোটি শুরু করেছিলেন ভূস্বামী রামরতন সেনশর্মা। পারিবারিক পেশা কবিরাজি হলেও রামরতন ছিলেন ময়মনসিংহের মহারাজা সূর্যকান্ত আচার্যচৌধুরীর দেওয়ান। সেই ঐতিহ্যের পুজো ঠাঁইনাড়া হয় দেশভাগের পরে। রামরতনের উত্তরসূরিরা চলে আসেন ঝাড়গ্রামে। পূর্ববঙ্গে পুজো হত একচালার প্রতিমায়। পঞ্চাশের দশকের গোড়ায় ঝাড়গ্রামে পুজো শুরু হয় ঘটে। প্রায় ছয় দশক পরে ২০১২ সাল থেকে ফের মূর্তি গড়ে পুজো হচ্ছে। তখন থেকেই প্রতি বছর মূর্তি তৈরি করছেন পূর্ব মেদিনীপুরের মৃৎশিল্পী সঞ্জীব দাস। সেন পরিবারের তরুণ সদস্য দেবব্রত সেন জানালেন, অকাল বোধনের পুজোয় অসময়ের ফল কাঁঠাল দেওয়ার রীতি রয়েছে। কিন্তু আশ্বিন মাসে ঝাড়গ্রামের বাজারে কাঁঠাল পাওয়া যায় না। আগে কলকাতা থেকে কাঁঠাল আনানো হত। করোনা আবহে গত বছর কাঁঠাল পেতে খুবই সমস্যা হয়েছিল। তাই এবার আগে ভাগে অনলাইনে বেঙ্গালুরুর একটি সংস্থার কাছ থেকে কাঁঠাল কেনা হয়েছে। অষ্টমীতে দেবীর নৈবেদ্যের পাতে আম ও নবমীতে কাঁঠাল দেওয়া হয়।
সেন পরিবার সূত্রে জানা গেল, পূর্ববঙ্গে পুজোটির সূচনা-কর্তা রামরতনের নাতি প্রবোধকুমার সেন ছিলেন ময়মনসিংহের রাজ এস্টেটের ম্যানেজার। ঝাড়গ্রামে সেন পরিবারের বেশ কিছু জমিজমা ও বিষয় সম্পত্তি ছিল। দেশভাগের পরে প্রবোধবাবু সপরিবারে চলে আসেন ঝাড়গ্রামে। ১৯৫২ সাল পর্যন্ত পরিবারের শরিকরা পূর্ববঙ্গে দুর্গাপুজো করেছিলেন। প্রবোধবাবুর উদ্যোগে ঝাড়গ্রামের বাছুরডোবায় নতুন করে তৈরি হয় সেন পরিবারের ভদ্রাসন। ১৯৫৩ সালে প্রবোধবাবুর উদ্যোগে ঝাড়গ্রামের বাড়িতে শুরু হয় দুর্গাপুজো। এখন পুজোর দায়িত্বে রয়েছেন প্রয়াত প্রবোধবাবুর দুই ছেলে ৮৪ বছরের সুবোধ সেন এবং ৬৮ বছরের বরুণকুমার সেন। জমিদারের পুজোর সেই জৌলুস আজ ইতিহাস।
সুবোধ ও বরুণ বলছেন, ‘‘১৯৪ বছরে দুই বাংলার নানা দুর্যোগে কখনও পুজোয় ছেদ পড়েনি। গত বছরের মতো এবারও স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাতে গোনা কয়েকজন স্বজন-পড়শিকে নিয়ে ঐতিহ্যের পুজো হবে। প্রথা মেনেই দেবীকে নবমীতে কাঁঠাল নিবেদন করা হবে।’’