খড়্গপুরের পুরাতন বাজার এলাকার এই মোড়েই হামলা হয় ট্রাফিক পুলিশের উপর।— নিজস্ব চিত্র।
পুরভোটের ফলপ্রকাশের পরে রেলশহর খড়্গপুরে পুলিশ-মাফিয়াকে সঙ্গে নিয়ে সন্ত্রাস ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছিল শাসক তৃণমূলের বিরুদ্ধে। এ বার সেই রেলশহরেই দিনেদুপুরে মার খেলেন এক পুলিশকর্মী।
শহরের পুরাতন বাজার মোড়ে রবিবার সকালে কর্তব্যরত এক ট্রাফিক পুলিশের মাথায় মদের বোতল দিয়ে আঘাত করে এক যুবক। তারপর থেকেই তোলপাড় গোটা শহর। বিরোধীদের মতে, একের পর এক এলাকায় আক্রান্ত হওয়ায় পুলিশের মনোবল তলানিতে এসে ঠেকছে। কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে না। আর এ সবের প্রেক্ষিতেই পুলিশের উপর হামলার ঘটনা বাড়ছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ অবশ্য বলেন, “খড়্গপুরের ওই ঘটনার পর দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হয়েছে। মামলা রুজু হয়েছে। দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে মোটর বাইকটি।”
রাজ্যে পুলিশের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা নতুন নয়। থানা-ফাঁড়ি এমনকী, রাস্তাতেও বারবার হামলা হচ্ছে পুলিশের উপর। দিন কয়েক আগে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী পর্যন্ত বলতে বাধ্য হয়েছেন, “পুলিশ আক্রান্ত হলে প্রশাসনের কড়া ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।” পুলিশ কর্মীদের একাংশ অবশ্য মানছেন, যে ভাবে একের পর এক ঘটনা ঘটছে, তাতে আগামী দিনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে কড়া হাতে অশান্তির মোকাবিলা করা কঠিন হতে পারে। অনেকে হয়তো আইনভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সাহসই পাবেন না। রোষে পড়ার ভয় থাকবে। পুলিশের আক্রান্ত হওয়ার তালিকাটা দীর্ঘ হচ্ছিল। রবিবার তাতে খড়্গপুরের নামও জুড়ল।
পুলিশের আক্রান্ত হওয়া নিয়ে সরব হয়ে অবশ্য পুলিশকেই বিঁধছে বিরোধীরা। তাদের বক্তব্য, একের পর এক ঘটনায় পুলিশ নিষ্ক্রিয় থাকার ফলেই আইনভঙ্গকারীরা উত্সাহিত হয়েছে। তারা ভাবছে সরকারটা তাদেরই। পুলিশ তাদের কিছু করতে পারবে না। বিজেপির জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায় বলেন, “এ দিন সকালে আমাদের পার্টি অফিসের সামনেই ঘটনাটি ঘটে। শুধু সাধারণ মানুষ নন, এখন পুলিশও নিরাপদ নয়।” তাঁর কথায়, “খড়্গপুরে বিরোধীদের আটকানোর জন্য যে ভাবে পুলিশ সমাজবিরোধীদের মাঠে নামিয়ে ছিল, তাদের অস্ত্র বলে মনে করেছিল, এখন পুলিশকে তারই ফল ভোগ করতে হচ্ছে!” সিপিএমের জেলা সম্পাদক তরুণ রায় বলেন, “পুলিশ যদি দুষ্কৃতীদের আড়াল করার চেষ্টা করে, তাহলে দুষ্কৃতীরা উত্সাহিত হবেই। তৃণমূলের নেতা-নেত্রীরাই তো পুলিশকে চমকাচ্ছেন- ধমকাচ্ছেন। অথচ, পুলিশ আইনানুগ কোনও পদক্ষেপ করছে না।” জেলা কংগ্রেস সভাপতি বিকাশ ভুঁইয়ার কথায়, “পুলিশই যদি এ ভাবে মার খায়, তাহলে সাধারণ মানুষ নিজেদের কতটা সুরক্ষিত বলে মনে করবেন? মানুষের নিরাপত্তা কোথায়?’’
এ দিন মেদিনীপুরে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায়ও বলেন, “পুলিশ আক্রান্ত হচ্ছেন। পুলিশ বাহিনীর মনোবল তলানিতে এসে ঠেকছে। তাঁরা প্রতিকার পাচ্ছেন না। এই পরিস্থিতির পরিবর্তন করতেই হবে।” ‘সেভ ডেমোক্র্যাসি ফোরাম’- এর পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা শাখার এক সদস্যের কটাক্ষ, “যে রাজ্যে পুলিশকে প্রাণ বাঁচাতে টেবিলের তলায় লুকোতে হয়, মদ্যপ অবস্থায় থানা ভাঙচুর করা দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অন্য পথে শাস্তির মুখ দেখতে হয়, সেই রাজ্যে খড়্গপুরের মতো ঘটনা ঘটবে, এ
আর নতুন কি!”