প্রতীকী ছবি।
মাস দেড়েক আগে এগরায় রাস মেলায় বেলুন বিক্রেতার দোকানে গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে জখম হয়েছিলেন ওই বেলুন ব্যবসায়ী-সহ মেলায় আসা দুই বাসিন্দা। তাঁদের মধ্যে একজন গুরুতর জখম হয়েছিলেন। প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই ওই মেলার অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে মেলার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। ঘটনার রেশ কাটার আগে সোমবার সন্ধ্যায় নন্দকুমার থানার বহিচবেড়িয়া গ্রামে স্থানীয় এক ক্লাবের উদ্যোগে কালীপুজো উপলক্ষে আয়োজিত মেলা চত্বরে ফের গ্যাসবেলুনের সিলিন্ডার ফেটে আহত হলেন বেলুন বিক্রেতা। শেখ নজরুল নামে ওই বেলুন বিক্রেতাকে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে প্রথমে তমলুক জেলা হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করে। অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সিলিন্ডার ফেটে ওই বেলুন বিক্রেতার পায়ের একাংশ ঝলসে গিয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে।
ঘটনার রাতেই পুলিশ মেলাস্থলে যায়। দুর্ঘটনার জেরে মেলা-সহ সব অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। যদিও মঙ্গলবার থেকে ফের ওই মেলা চালু হয়েছে। কিন্তু পরপর এধরনের ঘটনায় মেলা চত্বরে আসা মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে মেলার আয়োজক ক্লাব -সংগঠন ও স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসনের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ উঠেছে। কারণ অধিকাংশ মেলাচত্বরে গ্যাসবেলুন ছাড়াও বিভিন্ন রকম খাবারের দোকান বসে। ওই সব খাবার দোকানে গ্যাস সিলিন্ডার জ্বেলে রান্না করা হয়। কিন্তু গ্রামীণ এই সব মেলা আয়োজনের ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময় পুলিশ- প্রশাসনের অনুমতি নেওয়া হয় না বলে অভিযোগ। এগরার রাসমেলার মতো নন্দকুমারের বহিচবেড়িয়া গ্রামেও মেলার আয়োজনে পুলিশ-প্রশাসনের অনুমতি ছিল না বলে পুলিশ জানিয়েছে। ফলে ওই মেলাচত্বরে খাবারের দোকান বা বেলুনের দোকান বসার জন্য আয়োজকদের যে সব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন ছিল তার কিছুই ছিল না বলেও অভিযোগ উঠেছে।
দমকল দফতর সূত্রে খবর, মেলার চত্বরে সতর্কতামূলক অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা করতে হয় আয়োজকদেরই। মেলার আয়তন ও দোকানের সংখ্যার ভিত্তিতে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র ও জরুরি ভিত্তিতে জল তোলার পাম্প মেশিন রাখার ব্যবস্থা রাখা বাধ্যতামূলক রয়েছে। মেলা আয়োজনের জন্য স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসন ও দমকলের অনুমতি নিয়ে হয়। তমলুক দমকল কেন্দ্রের আধিকারিক কল্যাণ ধাড়া বলেন, ‘‘মেলা আয়োজনের জন্য আমাদের কাছে অনুমতি নিতে এলে মেলা আয়োজকদের আগুন লাগার সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে মেলায় অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্র এবং জলের পাম্প রাখার জন্য বলা হয়। কিন্তু আমাদের কাছে না এলে এবিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ থাকে না। বহিচবেড়িয়া গ্রামের ওই মেলা কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছে কোনও অনুমতি নেয়নি।’’
বহিচবেড়িয়া গ্রামের হাইস্কুল মাঠে কালীপুজো উপলক্ষে মেলা শুরু হয়েছে ২৮ ডিসেম্বর। চলবে ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত। কিন্তু মেলাচত্বরে এমন দুর্ঘটনার পরেও ওই মেলা চলছে বহাল তবিয়তেই। মেলার আয়োজক ক্লাব (টক্কর ক্লাব) সভাপতি তন্ময় ভৌমিকের দাবি, ‘‘মেলার জন্য প্রশাসনের কাছে অনুমতি নেওয়া হয়নি ঠিক। তবে মেলা চত্বরে আগুন নেভানোর জন্য বালতি ভরে বালি ও জল রাখা হয়েছে। তা ছাড়া ওই বেলুন বিক্রেতাকে আমরাই উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করেছি।’’