নেপথ্যে রাজনীতি, দাবি বিজেপির

ছ’মাসের মধ্যেই বদলি খেজুরির ওসি

কেউ কাটিয়েছেন এক বছর। কারও মেয়াদ কেটেছে মাত্র ৬ মাস। তার মধ্যেই জেলার একাধিক থানার ওসিকে বদলি করা হয়েছে। যার মধ্যে নবতম সং‌যোজন খেজুরি

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

তমলুক শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৯ ০০:০১
Share:

প্রতীকী ছবি

কেউ কাটিয়েছেন এক বছর। কারও মেয়াদ কেটেছে মাত্র ৬ মাস। তার মধ্যেই জেলার একাধিক থানার ওসিকে বদলি করা হয়েছে। যার মধ্যে নবতম সং‌যোজন খেজুরি। গত বৃহস্পতিবার খেজুরি থানার ওসি কৃষ্ণেন্দু প্রধানকে দিঘা মোহনা উপকূল থানায় বদলি করা হয়েছে। দিঘা মোহনা উপকূল থানার ওসি গোপাল পাঠককে খেজুরি থানার ওসি করা হয়েছে। একইভাবে খেজুরি থানার অধীন হেঁড়িয়া ফাঁড়ির আইসি অভিজিৎ পাত্রকে কাঁথি থানার এসআই হিসেবে বদলি করা হয়েছে। কাঁথি থানার এসআই দীপক চক্রবর্তীকে হেঁড়িয়া ফাঁড়ির আইসি করা হয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভি সলোমন নেসাকুমার বৃহস্পতিবার এই বদলির নির্দেশ দেন।

Advertisement

জেলা পুলিশ-প্রশাসনের তরফে এই বদলিকে ‘রুটিন মাফিক’ বলা হলেও খেজুরির ওসির বদলির পিছনে সপ্তাহখানেক ধরে খেজুরিতে চলা গোলমালকেই কারণ হিসাবে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। জেলা পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, কয়েক দিন আগে খেজুরি থানার কণ্ঠীবাড়ি এলাকায় তৃণমূল এবং বিজেপি সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে তৃণমূল কর্মীদের মারধর ও দলীয় অফিস ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে বিজেপির বিরুদ্ধে। এমনকী আক্রান্ত দলীয় কর্মী-সমর্থকদের দেখতে এলাকায় গেলে বিধায়ক রণজিৎ মণ্ডলকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি সমর্থকরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে যাওয়া পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। গত বৃহস্পতিবারও খেজুরির হলুদবাড়ি পঞ্চায়েত অফিসে বিজেপির বিক্ষোভের ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ। এলাকায় আইনশৃঙ্খলা সামলাতে ব্যর্থতার জেরেই ওসি বদল বলে দাবি রাজনৈতিক মহলের। যদিও পুলিশ সূত্রে খবর, লোকসভা নির্বাচনের মুখে গত জানুয়ারি মাসে এগরা থানার ওসি কৃষ্ণেন্দু প্রধানকে খেজুরি থানার ওসি হিসেবে বদলি করা হয়েছিল। নন্দকুমার থানার ওসি অমিয়কুমার ঘোষকে এগরা থানার ওসি করা হয়েছিল।

কিন্তু জেলা পুলিশের একাংশ ও রাজনৈতিক মহলের মতে একটি থানায় সাধারণত ওসি হিসাবে একজন তিন বছর থাকতে পারেন। কিন্তু লোকসভা ভোটের মুখে ও ভোটের ফল বেরোনোর পর যে ভাবে বিভিন্ন থানার ওসি থেকে এসআইকে অন্য থানায় বদলি করা হচ্ছে তাতে প্রশাসনে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীরা। জেলা বিজেপি নেতৃত্বের একংশের অভিযোগ, পুলিশ নির্ভর শাসক দল ভোটে খারাপ ফলের দায়ভার এখন বিভিন্ন থানার অফিসারদের ঘাড়ে চাপাচ্ছে। তার জেরেই এই বদলি। পঞ্চয়েত ভোটের মতো লোকসভাতেও পুলিশের কাঁধে চেপে ভোট বৈতরণী পার হতে চেয়েছিল তৃণমূল। কিন্তু কেন্দ্রীয় বাহিনীর চাপে বহু ক্ষেত্রেই তা সম্ভব হয়নি। তারই ফল ভুগতে হচ্ছে বিভিন্ন থানার অফিসারদের।

Advertisement

লোকসভা ভোটের পর দেখা যায় শাসক দলের শক্ত ঘাঁটি খেজুরি বিধানসভায় কাঁথি লোকসভার তৃণমূল প্রার্থী শিশির অধিকারী মাত্র সাত হাজার ভোট লিড পেয়েছেন বিজেপি প্রার্থীর চেয়ে। এলাকায় ভোট ব্যাঙ্ক বৃদ্ধির পরেই বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের দাপট বাড়তে থাকে বলে অভিযোগ। গত কয়েকদিন ধরে খেজুরিতে অশান্তির ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। যদিও আইনশৃঙ্খলার অবনতির কথা মানতে নারাজ জেলা পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘লোকসভা ভোটের পরবর্তী সময়ে জেলার ময়না, এগরা, পটাশপুর থানার ওসি, কয়েকজন সার্কেল ইন্সপেক্টর এবং এসডিপিও-র বদলির নির্দেশ হয়েছে। খেজুরির ওসির বদলি রুটিন মাফিক হয়েছে। এর সঙ্গে রাজনৈতিক কোনও বিষয়ও নেই।’’

তবে ঘন ঘন এই বদলি নিয়ে ক্ষুব্ধ জেলা পুলিশের একাংশ। তাঁদের পাল্টা অভিযোগ, শাসক দলের লিড কমার ‘দায়’ তাঁদের ঘাড়ে চাপানো হচ্ছে। যার পরিণতিতে এই বদলি। অভিজ্ঞ, প্রবীণ অফিসারকে তুলনায় কম গুরুত্বপূর্ণ থানায় বদলি করা হচ্ছে। যদিও এ সব কথাকে একেবারেই ভিত্তিহীন ও অমূলক বলে উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল। খেজুরির তৃণমূল বিধায়ক রণজিৎ মণ্ডল বলেন, ‘‘ওসি বদলির সিদ্ধান্ত প্রশাসনিক বিষয়। এর সঙ্গে আমাদের দলের কোনও সম্পর্ক নেই।’’ যদিও বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তপন মাইতি বলেন, ‘‘খেজুরিতে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের উপর দমনপীড়ন করার উদ্দেশ্যেই ওসি বদল করা হয়েছে। এটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিকভাবে পরিকল্পনা করে হয়েছে। তবে খেজুরির মানুষের উপর পুলিশ অত্যাচার করলে আমরাও চুপ করে থাকব না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement