সরানো হয়নি তৃণমূলের ফ্লেক্স, মেদিনীপুরের বটতলাচকে।
জেলায় ভোট মিটেছে প্রথম দু’দফায়। তারপর প্রায় এক মাস হতে চলল। তবু এখনও পশ্চিম মেদিনীপুরের নানা প্রান্তে এখনও দেওয়ালে জ্বলজ্বল করছে ভোটের লিখন। টাঙানো রয়েছে ব্যানার, পোস্টার, ফ্লেক্স।
নির্বাচনের আগে যতটা উৎসাহের সঙ্গে দেওয়াল লেখা, ব্যানার-ফ্লেক্স টাঙানোর কাজটা করেছিলেন রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থকেরা, ভোট শেষে সেগুলি সরাতে তার এক ভাগ উৎসাহও দেখা যায়নি। বাম-ডান সব দলের ক্ষেত্রেই ছবিটা এক। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও স্বীকার করছেন, দেওয়াল লিখন মোছা বা ব্যানার-পোস্টার সরানোর কাজটা যথাযথ ভাবে হচ্ছে না। পরিণাম দৃশ্য দূষণ। কোথাও বিশাল ব্যানারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে স্থানীয় প্রার্থীর ছবি, কোথাও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ছবি। সব মিলিয়ে হতশ্রী শহর।
মেদিনীপুর শহরের সুভাষনগরে রয়েছে সব দলেরই একাধিক দেওয়াল লিখন। বিজেপি-র পতাকারও ছড়াছড়ি। একই অবস্থা সিপাইবাজার থেকে খাপ্রেলবাজার সর্বত্র। সিপিআই প্রার্থী সন্তোষ রাণার ব্যানার যেমন রয়েছে তেমনই একাধিক জায়গায় বিজেপি, তৃণমূল, সিপিআই থেকে নির্দল প্রার্থীর দেওয়াল লিখনও রয়েছে। কোতবাজার, পোস্ট অফিস রোড, কলেজিয়েট বালিকা বিদ্যালয়ের গলিতে কোথাও সার দেওয়া পতাকা, ফেস্টুন আবার কোথাও দেওয়াল লিখনের ছড়াছড়ি।
এখনও পর্যন্ত কোনও রাজনৈতিক দলই দেওয়াল লিখন মুছতে উদ্যোগী হয়নি, ব্যানার-পোস্টারও সরাতে দেখা যায়নি কাউকে। যেটুকু সাফা হয়েছে তা সাম্প্রতিক ঝড়-বৃষ্টিতে। ঝোড়ো হাওয়ায় কোথাও মুখ থুবড়ে পড়েছে ফ্লেক্স, কোথাও উড়ে গিয়ে পোস্টার-ব্যানার পড়েছে মাঠে, নালায়, নদীতে। তারপরেও থেকে গিয়েছে অনেকই। এত ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুনের দাপাদাপি দেখে এক পর্যবেক্ষক এ বার প্রার্থীদের নিয়ে বৈঠকের সময় রসিকতা করে বলেছিলেন, ‘অন্য রাজ্যে এত ফ্ল্যাগ দেখিনি। হাজার হাজার পোস্টার খুলেছি। বাজেয়াপ্ত করার সময় ভাবছিলাম, এত পোস্টার রাখব কোথায়!’’ পাল্টা রসিকতা করে জবাবও দিয়েছিলেন এক প্রার্থী, ‘ভোট শেষে ফেরত দিয়ে দেবেন। আমাদের খরচ অনেকটাই বেঁচে যাবে।’ কেবলমাত্র সরকারি জায়গায় লাগানো ফ্ল্যাগ, পোস্টার খুলেছিলেন পর্যবেক্ষকেরা। তার বাইরে শয়ে শয়ে ফ্ল্যাগ দেখেছেন মাঠে, রাস্তার দু’ধারে। অবাক তো হওয়ারই কথা।
মেদিনীপুর হোমিওপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজের সরকারি দেওয়ালে উজ্জ্বল বাম-তৃণমূলের প্রচার। নিজস্ব চিত্র।
নির্বাচন শেষ। এ বার কি দেওয়াল মোছা যায় না? তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়ের জবাব, ‘‘স্থানীয় নেতৃত্ব অনেক ক্ষেত্রেই এই কাজ করেছেন। তারপরেও কোথাও থেকে গেলে তা সরিয়ে দিতে বলব।’’ বিজেপি-র জেলা সভাপতি ধীমান কোলে অবশ্য মানছেন, ‘‘ফ্ল্যাগ, ব্যানার, পোস্টার লাগাতে যে উৎসাহ থাকে খোলার সময় তা থাকে না।’’
এ ব্যাপারে জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনার বক্তব্য, “এখনও নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষ হয়নি। গণনার পরেও যদি দেখা যায় রাজনৈতিক দলগুলি দেওয়াল না মোছে বা ফ্ল্যাগ, ব্যানার, পোস্টার সরিয়ে দেয়, সে ক্ষেত্রে কমিশন তা করবে। তার খরচ প্রার্থীদের খাতে ধরা হবে।’’