বন্যার সময়ে ক্ষতি হয়েছিল এই ঢালাই রাস্তার। এখনও সারাই হয়নি। ঘাটাল পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডে। ছবি: কৌশিক সাঁতরা
চলতি বছরে দফায় দফায় বন্যায় ভেসেছে ঘাটাল শহর। টানা পাঁচবার বানভাসি হওয়ায় ঘাটাল পুরসভায় রাস্তঘাট, নর্দমা, সার্কিট বাঁধ-সহ সাবির্ক পরিকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। বন্যার পরপরই পুর-শহরকে পুরনো চেহারা ফিরিয়ে দিতে তৎপর হয়েছিল জেলা প্রশাসন। বন্যার ক্ষতি মেরামতে ১৪ কোটি টাকা চেয়েছিল ঘাটাল পুরসভাও। কিন্তু বন্যার পরে পাঁচ মাস অতিক্রান্ত। পরিকাঠামো উন্নয়নে এক টাকাও বরাদ্দ হয়নি বলে অভিযোগ। ফলে, পুরভোটের আগে ঘাটাল শহরে উন্নয়নকাজ পুরোপুরি থমকে। ভেঙে যাওয়া পরিকাঠামো মেরামতিও শুরু করেনি পুরসভা। বাড়ছে ক্ষোভ।
প্রায় প্রতি বছর বন্যার ধাক্কা সামলেই এগোয় ঘাটাল শহর। বড় বন্যা হলে ক্ষতির পরিমাণ বাড়ে। এ বার যেমনটা হয়েছে। দফায় দফায় বন্যার ফলে ঘাটাল পুরসভার পশ্চিম পাড়ের ১২টি ওয়ার্ডে বহু রাস্তার ক্ষতি হয়েছে। মহকুমা শাসকের দফতরের পাঁচিল ভেঙেছে। পুব দিকের একটা বড় অংশও জলমগ্ন হয়েছিল। সব মিলিয়ে পুরসভার ২০ কিমি ঢালাই রাস্তা আর প্রায় ৪০ কিমি মাটির রাস্তার ক্ষতি হয়েছে। নষ্ট হয়েছে নর্দমাও। জলের তোড়ে পুরসভা এলাকার বিভিন্ন রাস্তা ও খালের উপর থাকা একাধিক কালভার্ট ভেঙেছে। ক্ষতি হয়েছে আড়গোড়ার বিতর্কিত সার্কিট বাঁধের। এই বাঁধের কাজ শেষ হওয়ার আগেই ঠিকাদারকে টাকা মেটানোর অভিযোগ ছিল পুরসভার বিরুদ্ধে। বন্যার জলে ওই বাঁধের একাধিক জায়গা ভেঙে যায়। পুরো বাঁধটিও বেশ নড়বড়ে। তাছাড়া ঘাটাল পুর-হাসপাতালটি জলের তলায় চলে যাওয়ায় নষ্ট হয়েছে নানা আসবাব। বিদ্যুতের খুঁটি, পানীয় জলের পাইপ, কল-সহ অনেক কিছুরই ক্ষতি হয়েছে।
এই সব ক্ষতি পূরণে কোনও উদ্যোগ শুরু হয়নি এখনও। বিগত পুরবোর্ডের মেয়াদ ফুরোনোর পর থেকেই ঘাটালে উন্নয়ন কাযর্ত বন্ধ বলে অভিযোগ। টাকার অভাবে আটকে রয়েছে সামান্য রাস্তা সংস্কার। তার সঙ্গে জুড়েছে বন্যার ক্ষয়ক্ষতি। বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শনে এসে শহরকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৎপর হয়েছিল প্রশাসনও।সেই সময় রাজ্য প্রশাসনের পদস্থ আধিকারিকরা ঘাটালে এসে দ্রুত ক্ষয়ক্ষতির হিসাব পাঠানোর নির্দেশও দিয়েছিলেন। বারবার এসেছিলেন জেলা শাসক রশ্মি কমল। পুরসভাও ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট-সহ সংস্কারের টাকা চেয়েছিল। জানা গিয়েছে, তিন দফায় মোট ১৪ কোটি লক্ষ টাকা ক্ষতির হিসাব পাঠিয়েছিল ঘাটাল পুরসভা। তারপর মাস পাঁচেক কেটেছে। বন্যার ক্ষতি ভরাটে এক পয়সাও বরাদ্দ হয়নি। ঘাটাল পুরসভার প্রশাসক বিভাস ঘোষ মানছেন, “বন্যায় ক্ষতির যে হিসেব দেওয়া হয়েছিল, সেই টাকা মেলেনি। তাই পুরোদমে কাজ শুরু করা যায়নি।”