recruitment exam

পুর-হেফাজতে নেই ওএমআর!

রাজ্যে বিভিন্ন পুরসভায় নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে তৎপর এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। সম্প্রতি, পুর- দফতরে চিঠি দিয়েছে এই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।

Advertisement

বরুণ দে

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০২৩ ০৮:১৭
Share:

নিয়োগ পরীক্ষায় নেই কোনও ওএমআর শিট। প্রতীকী চিত্র।

এক চিঠিতে তোলপাড় পুরসভায়।

Advertisement

পুরকর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য জানতে চেয়ে চিঠি এসেছে মেদিনীপুর পুরসভায়। চিঠি চিঠির প্রেক্ষিতে তথ্য- তালাশে নেমে পুর- কর্তৃপক্ষ দেখছেন, পুরসভায় কর্মী নিয়োগে যে পরীক্ষা হয়েছিল, তার ওএমআর শিট (উত্তরপত্র), মেধা তালিকা—এ সব কিছুই নেই পুরসভায়। এক পুর আধিকারিক মানছেন, ‘‘তন্নতন্ন করে সব খোঁজা হয়েছে। এখানে ওএমআর শিট, মেধা তালিকা- এ সব নেই। এগুলি খুঁজে পাওয়া যায়নি।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘ও সব অবশ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার কাছেই থাকার কথা। যে সংস্থার মাধ্যমে নিয়োগ হয়েছিল।’’

এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি মেদিনীপুরের পুরপ্রধান সৌমেন খান। পুরসভার এগজিকিউটিভ অফিসার (ইও) সুভেশ বেরা অবশ্য মেনেছেন, ‘‘ওই চিঠির প্রেক্ষিতে যে পদক্ষেপ করার করা হয়েছে।’’ অর্থাৎ, প্রয়োজনীয় তথ্য পুর দফতরে পাঠানো হয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন পুরসভায় নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। ইডি- র পাশাপাশি তদন্ত চালাচ্ছে সিবিআই’ও। নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে মঙ্গলবারই ইডি- র হাতে গ্রেফতার হয়েছেন ‘কালীঘাটের কাকু’ ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। এই আবহে ওই চিঠি এসেছে মেদিনীপুর পুরসভায়। পুরকর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য জানতে চেয়েই চিঠিটি পাঠিয়েছে পুর- দফতরের ডাইরেক্টরেট অফ লোকাল বডিজ। ইডি- র তদন্তের প্রেক্ষিতেই ওই চিঠি। যে সময়কার নিয়োগ সংক্রান্ত তথ্য সবিস্তারে জানাতে বলা হয়েছে, সেই সময়ে (২০১২ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত) মেদিনীপুরেও বেশ কয়েকজন পুরকর্মী নিয়োগ হয়েছেন।

Advertisement

রাজ্যে বিভিন্ন পুরসভায় নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে তৎপর এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। সম্প্রতি, পুর- দফতরে চিঠি দিয়েছে এই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। ইডি- র চিঠি গিয়েছে মিউনিসিপ্যাল সার্ভিস কমিশন এবং পুর নগরোন্নয়ন দফতরে। একাধিক মহল মনে করাচ্ছে, শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতিতে গ্রেফতার করা হয়েছে হুগলির প্রোমোটার অয়ন শীলকে। অয়নের সল্টলেকের অফিসে তল্লাশি চালিয়ে বিভিন্ন পুরসভায় নিয়োগ সংক্রান্ত নথি উদ্ধার করেছিল ইডি। ওই অফিস থেকে বিভিন্ন পুরসভার বিভিন্ন পদে চাকরিপ্রার্থীদের ওএমআর শিট (উত্তরপত্র) পাওয়া গিয়েছিল বলেও দাবি করেছিলেন তদন্তকারী সংস্থা। ইডি মনে করছে, অয়নের সংস্থা যে সব উত্তরপত্রের মূল্যায়ন করেছে, সে সব ক্ষেত্রে দুর্নীতি হয়ে থাকতে পারে। বস্তুত, নিয়োগ দুর্নীতিতে প্রায় ১ হাজার জন চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে অয়ন ৪৫ কোটি টাকা তুলেছেন বলে মামলার চার্জশিটে দাবি করেছে ইডি। পুর- নিয়োগের জন্য চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে অয়ন ৩৫- ৪০ কোটি টাকা তুলেছেন বলে ইডি সূত্রে খবর। ইডি- র পাশাপাশি এই তদন্ত চালাচ্ছে সিবিআই’ও।

পুরসভা সূত্রে খবর, ২০১৪ সালের শেষের দিকে মেদিনীপুর পুরসভায় নিয়োগে এক বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছিল। ওই বিজ্ঞপ্তির ভিত্তিতে ১৭ জন পুরকর্মী নিয়োগ হয়েছিল। এক সংস্থার (এজেন্সি) মাধ্যমে। সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার (এসএই), লোয়ার ডিভিশন ক্লার্ক (এলডিসি), ড্রাইভার, মজদুর- এ সব পদে নিয়োগ হয়েছিল। সবথেকে বেশি নিয়োগ হয়েছিল মজদুর পদেই। সেই সময়ে পুরপ্রধান ছিলেন তৃণমূলের প্রণব বসু। প্রণব প্রয়াত হয়েছেন।

সূত্রের খবর, গত ৯ বছরে যে যে পুরপ্রধান হয়েছেন, তাঁদের নাম, যে যে এগজিকিউটিভ অফিসার (ইও) হয়েছেন, তাঁদের নামও জানতে চেয়েছে পুর- দফতর। মেদিনীপুরে এই সময়ের মধ্যে পুরপ্রধান থেকেছেন দু’জন। এগজিকিউটিভ অফিসার (ইও) থেকেছেন চারজন। কে, কবে থেকে কবে পর্যন্ত পুরপ্রধান ছিলেন। কে, কবে থেকে কবে পর্যন্ত এগজিকিউটিভ অফিসার (ইও) ছিলেন, চিঠির উত্তরে সে সবই জানানো হয়েছে। কত নিয়োগ হয়েছে, কী প্রক্রিয়ায় নিয়োগ হয়েছে, কোন সংস্থার (এজেন্সির) মাধ্যমে নিয়োগ হয়েছিল, সেই সংস্থার নাম- ঠিকানা, এ সবও জানানো হয়েছে। কিন্তু ওএমআর শিট (উত্তরপত্র) খুঁজে পাওয়া যায়নি? এক পুর- আধিকারিক বলেন, ‘‘ওই শিট খুঁজে পাওয়া যায়নি। পুর- হেফাজতে থাকলে নিশ্চয়ই খুঁজে পাওয়া যেত। দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার কাছেই ওই শিট থাকার কথা।’’ তিনি জুড়ছেন, ‘‘আমাদের কাছে যেটুকু তথ্য রয়েছে, তার ভিত্তিতেই চিঠির উত্তর দেওয়া হয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement