ছোট থেকেই কানে শুনতে পায় না বছর চোদ্দোর শুভজিৎ মিদ্যা। গত বৃহস্পতিবার নন্দীগ্রাম থেকে সে হলদিয়া মহকুমা হাসপাতালে এসেছিল কানের পরীক্ষা করাতে। কিন্তু হাসপাতালের তরফ জানিয়ে দেওয়া হয়, অডিওমেট্রিক যন্ত্র খারাপ। তাই এই পরীক্ষা সম্ভব নয়। তাকে রেফার করে দেওয়া হয় কলকাতায়।
চৈতন্যপুরে অঙ্কিতা মণ্ডলও এসেছিল কানের পরীক্ষা করাতে। কিন্তু রেফারের চিঠি হাতে একই উত্তর শুনে হাসপাতাল থেকে ফিরে গিয়েছে সেও।
গত ছ’মাস ধরে হলদিয়া মহকুমা হাসপাতালে বিকল হয়ে প়ড়ে রয়েছে এই অডিওমেট্রিক যন্ত্র। হাসপাতালের সুপার সুমনা দাশগুপ্ত স্বীকার করে নিয়েছেন সমস্যার কথা। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আগামী সপ্তাহে পরিষেবা চালু হয়ে যাবে বলে আশা করছি।’’
কী এই অডিওমেট্রিক যন্ত্র?
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, কেউ বধির কি না তা প্রাথমিকভাবে যাচাই করে এই অডিওমেট্রিক যন্ত্রই। তাই যদি কেউ মনে করেন তিনি কানে শুনতে পাচ্ছেন না তাহলে প্রথমে তাঁকে এই পরীক্ষাই করতে হয়। আর যদি পরীক্ষায় দেখা যায়, ওই ব্যক্তি বধির তখন তাকে প্রতিবন্ধীর শংসাপত্র দেওয়া হয়। কিন্তু গত ছ’মাস ধরে হলদিয়া মহকুমা হাসপাতালে এই পরিষেবা বন্ধ। কেউ হাসপাতালে এই পরীক্ষা করাতে এলেই তাঁকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, কলকাতার বনহুগলির কলকাতার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর হিয়ারিং হ্যান্ডিক্যাপড হাসপাতালে পরীক্ষা করিয়ে আসার জন্য। এর মধ্যে অনেকেই সময়-সুযোগের অভাবে এত দূর গিয়ে উঠতে পারছেন না। ফলে ভরসা তমলুক জেলা হাসপাতাল। তবে সেখানেও সমস্যা। শুভজিৎ মিদ্দা ও অঙ্কিতা মণ্ডল নামের দুই খুদে বাবা-মায়ের সঙ্গে গিয়েছিল সেখানে কানের পরীক্ষা করাতে। কিন্তু জেলা হাসপাতালের রিপোর্টেও ত্রুটি রয়েছে বলে তা বাতিল হয়ে গিয়েছে। হলদিয়া মহকুমা হাসপাতালের ইএনটি বিশেষজ্ঞ সুদীপ মাইতির কথায়, ‘‘জেলা হাসপাতালের পরিকাঠামো এই পরীক্ষার জন্য যথেষ্ট নয়। তাই কলকাতায় রেফার করা হয়েছে।’’
ফলে মিলছে না প্রতিবন্ধী শংসাপত্র। কিন্তু স্পেশ্যাল স্কুলে ভর্তি হতে গেলে তো এই শংসাপত্র বাধ্যতামূলক। ফলে স্কুলে ভর্তিতে সমস্যা বাড়ছে। সরকার অনুমোদিত প্রতিবন্ধী স্কুলের শিক্ষক পার্থ সেন বলেন, ‘‘ আগে জেলাশাসক অন্তরা আচার্য নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রতিবন্ধী ছাত্রছাত্রীদের সহযোগিতা করতে হবে। সেখানে স্বাস্থ্য দফতর ও প্রশাসনের আধিকারিকরা উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু এখন কেন এমন হল বুঝতে পারছি না।’’ রাজ্য প্রতিবন্ধী সম্মিলনীর সহ সভাপতি পান্নালাল দাসের অভিযোগ, ‘‘ছ’মাস ধরে মহকুমা হাসপাতালে পরিষেবা বন্ধ। অসুস্থ শিশুগুলো হয়রানির শিকার হচ্ছে। এটা একেবারেই কাম্য নয়।’’
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিতাইচন্দ্র মণ্ডলের কথায়, ‘‘হলদিয়া মহকুমা হাসপাতালে অডিওমেট্রিক মেশিনই নেই। ভাড়া করে পরিষেবা দেওয়া হত। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি চাকরি পেয়ে যাওয়ায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা ওয়াকিবহাল। আশা করি সমস্যা মিটে যাবে।’’ কবে সমস্যা মিটবে অপেক্ষায় হলদিয়া।