বিক্রির আগে রঙে ডোবানো হচ্ছে মাছ। নিজস্ব চিত্র।
ফ্যাকাশে মাছ দেখে অনেক ক্রেতাই মুখ ফিরিয়ে চলে যাচ্ছেন দেখে আর দেরি করলেন না মাছ বিক্রেতা। মাছের টাটকা-তাজা ভাব ফেরাতে প্রকাশ্যে বাজারের মধ্যেই ফরমালিন ও রঙ মেশানো জলে মাছগুলি চুবিয়ে রেখে একটু তুলে নিয়ে ফের পসার সাজালেন। দেখা গেল এতক্ষণ যে মাছ ফ্যাকাশে সাহছিল তাই-ই এখন বেশ তাজা মনে হচ্ছে। মাছের দুর্গন্ধও প্রায় নেই। দিনে দুপুরে কেবল মাছ নয়, শাকসবজিতেও টাটকা-তাজা ভাব বজায় রাখতে এভাবেই বিভিন্ন বাজারে চলছে অবাধে রায়ায়নিক থেকে কৃত্রিম রঙ মেশানো। যা খাদ্যগুণ নষ্টের পাশাপাশি শরীরের পক্ষেও ক্ষতিকর। অথচ এই নিয়ে কোথাও প্রশাসনের কোনও নজরদারি নেই বলে অভিযোগ নিত্য বাজারে আসা মানুষজনের।
স্বাস্থ্য দফতরের নিয়ন্ত্রণাধীন খাদ্য নিরাপত্তা দফতর রয়েছে। জেলা ও মহকুমা ভিত্তিক খাদ্য নিরাপত্তা দফতরের অফিসারদের এলাকায় দোকান ও বাজারগুলিতে খাদ্যে ভেজাল আটকাতে অভিযানের বিধানও রয়েছে। সেই সঙ্গে জেলা মার্কেটিং বিভাগের টাস্কফোর্স, পুলিশ ও প্রশাসনকে নিয়ে বিভিন্ন বাজারে নজরদারি চালানোর কথা। কিন্তু আদপে সে সবের দেখাই মেলে না বলে অভিযোগ। উপরের ছবিটা এগরা বাজারের। তবে জেলার অন্যত্র কাঁথি, রামনগর, দিঘা তমলুক, হলদিয়ার বাজারে ঘুরলেও দেখা যায় এমন ছবি। বলছেন সেখানকার বাসিন্দারাই।
প্রসঙ্গত, গত কয়েক মাসের মধ্যে দিঘায় রাস্তার ধারে বিক্রি হওয়া কাঁকড়া খাওয়ার পর বিষক্রিয়া জনিত কারণে একাধিক মৃত্যুর ঘটনার অভিযোগ ওঠায় খাবারের মান যাচাই করতে অভিযানে নেমেছিল খাদ্য দফতর। কিন্তু সে সবই তাৎক্ষণিক বলে অভিযোগ সাধারণ মানুষের। তাঁদের অনেকেই বলছেন, কয়েক বছর আগে, আলুতে রঙ লাগিয়ে বিক্রির ক্ষেত্রে বিধি নিষেধ আরোপ করেছিল প্রশাসন। কিন্তু তার পর ফের যে কে সেই। কোথায় নজরদারি!
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মাছ বিক্রেতার কথায়, ‘‘রঙহীন ফ্যাকাশে মাছ ক্রেতাদের পছন্দ নয়। তাই সেই মাছকে রং মিশিয়ে দিতে টাটকা দেখিয়ে বিক্রি করতে হয়। অনেকে মাছের কানকোর রঙ দেখে টাটকা কিনা যাচাই করেন। সে জন্য রঙ মেশানো হয়। এতদি ধরে তো এটাই চলে আসছে। প্রশাসনেরও তো কেউ দেখতে আসেনা। তা ছাড়া এত ভয় করলে ব্যবসা করা যাবে না।’’
এগরা মহকুমায় ছোট বড় দেড়শোর বেশি বাজার রয়েছে। বিক্রেতারা এ সবের জন্য উল্টে ক্রেতাদের উপরই দায় চাপাচ্ছেন। তাদের দাবি, ক্রেতারা সব সময় টাটকা-তাজা চান। তাই তারাও সে ভাবেই চলেন। গত কয়েক বছর প্রশাসনের উদ্যোগে এগরা মহকুমায় বাজারগুলিতে এই নিয়ে কোনও সচেতনতা বা নজরদারি চালানো হয়নি বলে জানান বিক্রেতারা। খাবারে অনুমোদনহীন রঙ ও কেমিক্যাল ব্যবহারে যে ক্যানসার, কিডনি রোগ, গর্ভস্থ ভ্রূণনাশের মতো একাধিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তা নিয়েও প্রশাসনের তরফে কোনও প্রচার ও নজরদারি নেই বলে অভিযোগ ক্রেতাদের।
এ ধরনের রং মিশিয়ে খাদ্য সামগ্রী বিক্রির অভিযোগ প্রসঙ্গে জেলা মার্কেটিং বিভাগের আধিকারিক মিতা সাহা বলেম, ‘‘এ ধরনের কোনও তথ্য আমাদের কাছে নেই। তবে দ্রুত এলাকায় নজরদারি চালানো হবে। প্রয়োজনে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’