‘শান্তি নীড়’ হয়নি, শিকেয় দেহ সংরক্ষণ

পুরভোটের পর  দু’বছর কেটে গেলেও এখনও ওই প্রকল্পের জন্য একটা ইটও গাঁথা হয়নি।

Advertisement

কেশব মান্না

হলদিয়া শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৯ ০০:৪২
Share:

প্রতীকী ছবি।

কর্মসূত্রে অনেক পরিবারের ছেলেমেয়েরা বাইরে থাকেন। পরিবারের কেউ মারা গেলে তাঁদের এখানে এসে পৌঁছনোর অপেক্ষায় মৃতদেহ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে পুরসভার তরফে বলা হয়েছিল। দীর্ঘদিনের দাবি মিটতে চলেছে এই ভেবে খুশি হয়েছিলেন হলদিয়ার মানুষ। কিন্তু পুরভোটের পর দু’বছর কেটে গেলেও এখনও ওই প্রকল্পের জন্য একটা ইটও গাঁথা হয়নি।

Advertisement

সোলাটের বাসিন্দা দুর্গাপদ নিশ্রর আক্ষেপ, ‘‘একমাত্র মেয়ে বেঙ্গালুরুতে থাকে। আমি মারা গেলে ওখান থেকে এসে হয়তো মেয়ে দেহই দেখতে পাবে না। তার আগেই সৎকার করে ফেলা হবে। এত বড় শিল্প-বন্দর শহরে মৃতদেহ সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকা জরুরি। পুরভোটের সময় এর ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে শুনেছিলাম। কিন্তু তারপর আর এই নিয়ে কোনও সাড়াশব্দ নেই।’’ কর্মসূত্রে ছেলেমেয়েরা বাইরে থাকেন এমন অনেক পরিবারের মুখেই শোনা গিয়েছে এক সুর।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত পুরভোটের আগে মৃতদেহ সংরক্ষণের জন্য ‘শান্তি নীড়’ বানানোর পরিকল্পনা করেছিল তৃণমূল পরিচালিত হলদিয়া পুরসভা। সতীশ সামন্ত পার্ক এবং স্থানীয় একটি আবাসনের সামনে জমিতে ‘শান্তি নীড়’ তৈরির কথা ছিল। কিন্তু তার পর দু’ বছর কাটতে চললেও আজও কাজ শুরু না হওয়ায়, হতাশ ও ক্ষুব্ধ শিল্প শহরের মানুষ। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, সাংসদ তহবিলের অর্থে ‘শান্তি নীড়’ তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আগের পুরবোর্ড। কিন্তু যে হাতিবেড়িয়ায় যে জমিতে তৈরি হওয়া কথা ছিল, তাতে আপত্তি জানান স্থানীয় লোকজন। স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, এখানে শান্তি নীড় থাকা আবশ্যক। কিন্তু জনবহুল এলাকায় জমি চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে ভুল হয়েছিল। প্রসঙ্গত, ওই এলাকায় সতীশচন্দ্র সামন্ত পার্কে সব সময় ভিড় থাকে। পাশেই হাতিবেড়িয়া রেল স্টেশন, একটি আবাসন ছাড়াও অনেক বসতি রয়েছে। এমন জনবহুল এলাকায় মৃতদেহ সংরক্ষণের জন্য নির্মাণ হলে এলাকার মানুষ অসুবিধায় পড়বেন বলে আশঙ্কা পুর কর্তৃপক্ষের।

Advertisement

২০১৭ সালে হলদিয়া পুরভোটের আগে তৎকালীন পুরবোর্ড তড়িঘড়ি ‘শান্তি নীড়’ তৈরির জন্য ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিল। পুরভোটের প্রচারে শাসক দল দাবি করেছিল, ‘শান্তি নীড়’ হলে মৃতদেহ সংরক্ষণ করা সহজ হবে।

হলদিয়া পুর কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, প্রথমে যেখানে ‘শান্তি নীড়’ তৈরির কথা ছিল, সেখানে তা হচ্ছে না। বদলে দেভোগ এলাকায় যে হাসপাতাল রয়েছে, সেখানে ‘শান্তি নীড়’ তৈরির পরিকল্পনা হয়েছে। এ ব্যাপারে জেলা স্বাস্থ্য দফতরে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্য দফতরের সম্মতি মেলেনি বলে দাবি পুরসভার। বিকল্প হিসেবে হলদিয়া মহকুমা হাসপাতালের মর্গের কাছে ফাঁকা জমিতে ‘শান্তি নীড়’ তৈরির ব্যাপারে আগ্রহী বর্তমান পুরবোর্ড।

জমি নিয়ে এ হেন ডামাডোলের মধ্যে সাংসদ তহবিলের অর্থ ফেরত চলে গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। হলদিয়া পুরসভার পুর পারিষদ নারায়ণচন্দ্র প্রামাণিক বলেন, ‘‘হলদিয়ায় ‘শান্তি নীড়’ অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু আমরা যে জমিতে তৈরি করতে চাইছি, স্বাস্থ্য দফতর তাতে সম্মতি না দেওয়ায় কাজ এগোনো যাচ্ছে না।’’ হলদিয়া পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সুধাংশু মণ্ডল বলেন, ‘‘সাংসদ তহবিলের টাকা ফেরত চলে যাওয়ায় অসুবিধা হবে না। কোথায় ‘শান্তি নীড়’ হবে পুরবোর্ডে তা ঠিক হলে ফের প্রকল্পের রূপরেখা ও বাজেট তৈরি করে সাংসদের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হবে।’’

তবে কি পুরভোটের বৈতরণী পার করতেই ‘শান্তি নীড়’ নিয়ে তাঁদের দীর্ঘদিনের দাবিকে জাগিয়ে তুলেছিল শাসক দল। প্রশ্ন হলদিয়াবাসীর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement