চৈতন্যপুুর পঞ্চায়েতে দুয়ারে সরকারের একটি শিবিরে ইট পেতে লাইন। নিজস্ব চিত্র।
এক দিন আগে রাজ্যে শুরু হয়েছে ‘দুয়ারে সরকার’ শিবির। বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পেতে ওই শিবিরগুলিতে প্রতিদিন উপচে পড়ছে ভিড়। শিকেয় উঠেছে করোনা বিধি। কিন্তু সারা বছরই ওই সব সরকারি প্রকল্পে আবেদন করা এবং আবেদনের স্থিতি দেখার জন্য এক বছর আগে রাজ্য জুড়ে ‘বাংলা সহায়তা কেন্দ্র’ (বিএসকে) চালু করেছিল রাজ্য সরকার। অভিযোগ, কেন্দ্রগুলি কার্যত প্রচারহীন ভাবে চলছিল। তাই এখন ভিড় বাড়ছে ‘দুয়ারে সরকার’ শিবিরে।
প্রশাসন সূত্রের খবর, বিভিন্ন দফতরের অনলাইন পরিষেবা আরও বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে গত বছর রাজ্য সরকার চালু করে ‘বাংলা সহায়তা কেন্দ্র’। জন্য গ্রাম পঞ্চায়েত অফিস, বিডিও অফিস,স্বাস্থ্য কেন্দ্র, গ্রন্থাগার ইত্যাদি সরকারি জায়গায় একজন করে ডাটা এন্ট্রি অপারেটর নিয়োগ করে রাজ্য। পূর্ব মেদিনীপুরে ২৭৬টি ‘বাংলা সহায়তা কেন্দ্র’ চালু হয়। এই সহায়তা কেন্দ্রগুলির মাধ্যমে রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য সাথী, কৃষক বন্ধু, খাদ্য সাথী, জমির পর্চা তৈরি, জমির চরিত্র বদলের মতো প্রকল্পে আবেদন করা যায়। বিনামূল্যে যে কোনও আবেদনের বর্তমান স্থিতিও দেখার সুযোগ রয়েছে ‘বাংলা সহায়তা কেন্দ্রে’। কিন্তু অভিযোগ, প্রচারের অভাবে এরকম একটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি সহায়তা কেন্দ্রের কথা জানেই না আমজনতার একটা বড় অংশ। ফলে গত এক বছর ধরে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে আবেদন করতে পারেননি অনেকেই।
বিষয়টি সরব হয়েছে রাজ্যের বিরোধী দল বিজেপি থেকে শুরু করে কৃষক সংগ্রাম পরিষদ। বিজেপির অভিযোগ, আসলে এ ধরনের শিবির করে রাজ্য সরকার আমজনতার কাছে চমক তৈরি করতে চাইছে। অথচ, চাইলেই আমজনতা এই শিবিরের বদলে সারা বছর নিজের সুবিধা মতো দফতরে গিয়ে প্রকল্পের সুবিধা নিতে পারেন। এখনের মতো শিবিরে হুড়োহুড়ি করতে হবে না। বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার সম্পাদক দেবব্রত পট্টনায়েক বলেন, ‘‘দুয়ারে সরকার একটা লোক দেখানো কর্মসূচি। যে সমস্ত প্রকল্পের সুবিধা এই কর্মসূচির মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে, সেগুলি তো সরকারি অফিসে নির্দিষ্ট দফতরই করতে পারত। গত বছর কোটি কোটি টাকা খরচ করে রাজ্য সরকার বাংলা সহায়তা কেন্দ্র চালু করল। তার সুফল কোথায়? আবার কেন দুয়ারে সরকার করতে হচ্ছে?’’
আর পাঁচটা সরকারি প্রকল্পের সঙ্গে এবারের ‘দুয়ারে সরকার’ শিবিরে বাড়তি যোগ হয়েছে ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’। বিরোধীদের দাবি, ওই প্রকল্পের সুবিধা পেতে আমজনতা এবার শিবিরে গেলেও প্রচার ঠিক মতো হলে অন্য সময় বাংলা সহায়তা কেন্দ্র থেকে অন্য প্রকল্পের সুবিধা পেতে পারতেন তাঁরা। প্রচার যে হয়নি, সেই দাবি করছে কৃষক সংগ্রাম পরিষদ। সংগঠনের সম্পাদক নারায়ণচন্দ্র নায়কে বলেন, ‘‘সরকারি অফিসে বাংলা সহায়তা কেন্দ্র থাকলেও সেগুলির প্রচার না থাকায় মানুষজন সে বিষয়ে জানতে পারছেন না।’’
পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি বলছেন, ‘‘নির্বাচন ও ইয়াস পরবর্তী সময়ে বাংলা সহায়তা কেন্দ্রগুলি ঠিকভাবে কাজ করতে পারেনি। তবুও গত এক বছরে বিএসকে'র মাধ্যমে এক লক্ষেরও বেশি আবেদন নিয়ে কাজ করেছি। বর্তমানে দুয়ারে সরকারের পাশাপাশি বাংলা সহায়তা কেন্দ্রগুলিও সমানে কাজ করছে।’’