নবজাতকের ঠাঁই মেঝেতেই। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।
চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে এক মহিলার মৃত্যুর পরও ছবিটা বিশেষ বদলায়নি। ঝাড়গ্রাম জেলা তথা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের একাংশ চিকিৎসক এখনও রয়েছেন নিজস্ব ‘মেজাজে’ই।
সোমবার সকালে মৃত্যু হয় মণিমালা ভট্টাচার্য নামে এক অন্তঃসত্ত্বা মহিলার। সেই ঘটনার জেরে বিক্ষোভ হয় হাসপাতালে। দুই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ ওঠে। ওই ঘটনার পরে সোমবারই রীতিমতো নোটিশ জারি করে ডিউটি আওয়ার্সে চিকিৎসকদের হাসপাতালে হাজির থাকার নির্দেশ জারি করেছিলেন ঝাড়গ্রামের সিএমওএইচ। তারপরও চিকিৎসকদের একাংশ ডিউটি আওয়ার্সে হাসপাতালে থাকছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে।
মঙ্গলবার মাঝরাতে ‘কল’ পেয়ে রোগিণীকে দেখতে এসে মেজাজ হারালেন হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ শিশিরকুমার মিদ্যা। শিশিরবাবুর বিরুদ্ধে এক অন্তঃসত্ত্বা মহিলাকে মানসিক ভাবে নিগ্রহের অভিযোগ উঠেছে। চিকিৎসকের ধমক-অপমানে আতঙ্কিত ওই আসন্ন প্রসবা মহিলাকে হাসপাতালে ভর্তি রাখার ঝুঁকি নেননি পরিজনরা। প্রসঙ্গত, মঙ্গলবারই মুখ্যমন্ত্রী চিকিৎসকদের রোগীর প্রতি আরও মানবিক হতে বলেছেন। কিন্তু সেই কথায় যে চিকিৎসকদের একাংশ গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজনও বোধ করেননি, এ দিনের ঘটনা তারই প্রমাণ।
ঘটনা হল, ঝাড়গ্রাম শহরের সুভাষপল্লি এলাকার বাসিন্দা চন্দ্রিকা চক্রবর্তী নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা। মঙ্গলবার গভীর রাতে তিনি অসুস্থ বোধ করায় তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক সমস্যার কথা শুনে চন্দ্রিকাদেবীকে প্রসূতি বিভাগে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু ওই সময় প্রসূতি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক শিশিরকুমার মিদ্যা হাসপাতালে ছিলেন না বলে অভিযোগ। প্রসূতি বিভাগের কর্তব্যরত নার্স শিশিরবাবুকে ‘কল’ দেন। প্রসূতি বিভাগের কোনও শয্যা খালি ছিল না। ফলে চিকিৎসাধীন এক মহিলার শয্যায় ঠাঁই হয় চন্দ্রিকাদেবীর। কিন্তু অন্য মহিলার শয্যায় থাকতে অস্বীকার করেন চন্দ্রিকাদেবী। তখন তাঁকে অন্য ঘরে ‘জায়গা’ করে দেওয়া হয়।
অভিযোগ, রাত একটায় প্রসূতি বিভাগে ভর্তি হলেও চিকিৎসক শিশিরবাবু আসেন রাত পৌনে দু’টোয়। চন্দ্রিকাদেবীর স্বামী সুদীপ্ত চক্রবর্তী বলেন, “চিকিৎসক হন্তদন্ত হয়ে ওয়ার্ডে ঢুকেই অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে আমার স্ত্রীকে অপমান করেন। জানান, আমার স্ত্রীর কিছুই হয়নি।” এমনকী শয্যা থেকে নামার জন্য চন্দ্রিকাদেবীকে ধমকাতে থাকেন। তড়িঘড়ি নামতে গিয়ে বাম গোড়ালি মচকে গিয়ে ফুলে যায় চন্দ্রিকাদেবীর। ওই অবস্থায় চিকিৎসক জানিয়ে দেন তিনি রোগিণীর কোনও দায়িত্ব নিতে পারবেন না। মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত সুদীপ্তবাবু বাধ্য হয়ে স্ত্রীকে রাত সওয়া দু’টো নাগাদ বাড়িতে ফিরিয়ে
নিয়ে যান।
বুধবার হাসপাতালের সুপার মলয় আদক এবং সিএমওএইচ (ঝাড়গ্রাম) অশ্বিনীকুমার মাঝির কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন সুদীপ্তবাবু। অভিযুক্ত চিকিৎসক শিশিরবাবুর বক্তব্য, “যেটুকু কর্তব্য সেটুকু করেছি। এর বেশি কিছু বলতে পারব না।”
সুপার মলয় আদক বলেন, “এমন হয়ে থাকলে খুবই দুঃখজনক ঘটনা। ওই চিকিৎসকের কাছে ব্যাখ্যা চাইব। জবাব সন্তোষজনক না হলে বিভাগীয় তদন্ত করা হবে।” সিএমওএইচ (ঝাড়গ্রাম) অশ্বিনীকুমার মাঝি বলেন, “ডিউটি আওয়ার্সে সমস্ত চিকিৎসকদের হাসপাতালে থাকতে হবে বলে সোমবারই নির্দেশ জারি করেছি। ডিউটি আওয়ার্সে কোনও কল বুক হাসপাতালের বাইরে যাবে না। নির্দেশ না-মানলে এবার কড়া পদক্ষেপ হবে।”