নির্দল কুড়মি প্রার্থীদের সমর্থনে কুড়মিদের মিছিল। বুধবার ঝাড়গ্রাম ব্লকের মানিকপাড়ায়। নিজস্ব চিত্র
কুড়মিদের জনজাতি তালিকাভুক্তির বিরোধিতায় সরব একাধিক আদিবাসী সংগঠন। অথচ পঞ্চায়েত ভোটের ময়দানে উলটপুরাণ!
আদিবাসী সংরক্ষিত আসনে কুড়মি সমাজের সমর্থনে সাঁওতাল, লোধা ও ভূমিজ সম্প্রদায়ের প্রার্থীরাও রয়েছেন ভোটের লড়াইয়ে! নয়াগ্রাম ব্লকের বালিগেড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ভড়রুবনি গ্রাম সংসদের নির্দল প্রার্থী শিলাবতী টুডুকে সমর্থন করছেন কুড়মিরা। অন্যদিকে, খড়িকামাথানি গ্রাম পঞ্চায়েতের ঘোড়াতোড়িয়া বুথের কুড়মি সমাজের সমর্থনে নির্দল প্রার্থী হয়েছেন লোধা শবর সম্প্রদায়ের জবা ভক্তা। বড়খাঁকড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের কদমডিহা গ্রাম সংসদ আসনটিও আদিবাসী সংরক্ষিত। ওই আসনে কুড়মি সমাজের সমর্থনে নির্দল প্রার্থী হয়েছেন লোধা সম্প্রদায়ের বাবলু প্রামানিক। চাঁদাবিলা অঞ্চলের গোখুরপাল গ্রাম সংসদের নির্দল প্রার্থী আদিবাসী ভূমিজ সম্প্রদায়ের সুকান্তি সিং লড়ছেন কুড়মিদের সমর্থনে। নয়াগ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির আদিবাসী সংরক্ষিত ৪ নম্বর আসনে কুড়মি সমাজের সমর্থনে লড়ছেন নির্দল প্রার্থী শিব মুর্মু। তিনি পেশায় শিক্ষক। এ রকমই জেলার বিভিন্ন সংরক্ষিত আসনে আদিবাসী নির্দল প্রার্থীদের সমর্থন করছে কুড়মি সমাজ।
জেলা পরিষদের একটি আসনে নির্দল প্রার্থী হয়েছেন জেলা পরিষদের বিদায়ী বন-ভূমি কর্মাধ্যক্ষ মামনি মুর্মু। মামনিকে টিকিট দেয়নি তৃণমূল। তিনি নির্দলে ভোটে প্রার্থী হওয়ায় শাসকদল তাঁকে বহিষ্কারও করেছে। ওই আসনে মামনিকে সমর্থনের কথা জানিয়েছে কুড়মি সমাজ। মামনি অবশ্য এ বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ। তাঁর মন্তব্য, ‘‘ভোটের পর যা বলার বলব।’’
আজ, বৃহস্পতিবার পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারের শেষ দিন। নয়াগ্রাম ব্লকের নিগুই এলাকার জনসভা থেকে নির্দল কুড়মি প্রার্থীদের ভোটে জেতানোর ডাক দেবেন আদিবাসী কুড়মি সমাজের মূল মানতা (মুখ্য উপদেষ্টা) অজিতপ্রসাদ মাহাতো। সেই সঙ্গে আদিবাসী সংরক্ষিত আসনগুলিতে এলাকার ভোটারদের ইতিকর্তব্যও বাতলে দেবেন অজিত। সভায় চমক হিসেবে কয়েকজন নির্দল আদিবাসী প্রার্থীকেও হাজির করা হতে পারে। আদিবাসী কুড়মি সমাজের রাজ্য নেতা মনোরঞ্জন মাহাতো বলছেন, ‘‘জঙ্গলমহলে কুড়মি ও আদিবাসীরা যুগ ধরে সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করছেন। দুই সম্প্রদায়ই পরস্পরের সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কুড়মিদের সঙ্গে আদিবাসী বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর ভ্রাতৃত্ববোধ অটূট রয়েছে। বিচ্ছিন্ন ভাবে হয়তো নানা প্রতিবাদ হচ্ছে। কিন্তু আদিবাসী জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশের সঙ্গে কুড়মিদের সৌভ্রাতৃত্ব অটূট।’’
সূত্রের খবর, আদিবাসী সংরক্ষিত আসনগুলির ভোটারদের অবস্থান কী হবে তা নিয়ে সংশয়ে ছিলেন কুড়মিদের একাংশ। এরপরই দুই সম্প্রদায়ের চিরাচরিত সম্পর্কের ভিত্তিতে বেছে বেছে নির্দল আদিবাসী প্রার্থীদের সমর্থন করা হয়েছে। মনোরঞ্জন বলছেন, ‘‘যে সব নির্দল আদিবাসী প্রার্থী আমাদের সমর্থন চেয়েছেন আমরা তাঁদের সমর্থন করছি। কেউ কেউ আমাদের সমর্থনে প্রার্থীও হয়েছেন।’’ আর যে সব আদিবাসী সংরক্ষিত আসনে কুড়মিদের সমর্থিত নির্দল প্রার্থী নেই? আদিবাসী কুড়মি সমাজের মূল মানতা অজিতপ্রসাদ মাহাতো বলছেন, ‘‘কুড়মিদের উদ্দেশ্যে বার্তা দিতে নয়াগ্রামের সভায় থাকব। আমাদের দাবির প্রতি যাঁরা সহানুভূতিশীল, সেই সব নির্দল প্রার্থীকেই সমর্থন করা হচ্ছে। কোনও স্বীকৃত রাজনৈতিক দলকেই কুড়মিরা ভোট দেবেন না। যেসব আদিবাসী নির্দল প্রার্থী আমাদের সমর্থন চাননি, তাঁদের এলাকার ভোটাররা ভোটবাক্সে সাদা ব্যালট জমা দেবেন।’’
কুড়মিদের অবস্থান প্রসঙ্গে ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহলের জেলা পারগানা ঢাঙ্গা হাঁসদা বলছেন, ‘‘ভোট নিয়ে আমরা কোনও মন্তব্য করছি না। কাউকে প্রভাবিতও করতে চাই না। আমাদের সংগঠন অরাজনৈতিক। কে কাকে ভোট দেবেন সেটা তাঁর ব্যক্তিগত ও গোপনীয় বিষয়।’’