‘মন কি বাতে’ নরেন্দ্র মোদী। — ফাইল চিত্র।
সকাল থেকে অপেক্ষা করছিলেন ওঁরা। অনেকক্ষণ পরে ‘মন কি বাত’-এ বক্তৃতা শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু রবিবার দিঘায় সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে পারেননি মৎস্যজীবীরা। সৌজন্যে যান্ত্রিক ত্রুটি। তাই আনন্দের মধ্যেও ঘিরে রইল হতাশা।
এ দিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ৯৯ তম ‘মন কী বাত’ কর্মসূচি ছিল। প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে জানানো হয়েছিল, গোটা দেশের ১২টি রাজ্যের মানুষের সুবিধা-অসুবিধার কথা শুনবেন তিনি। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল এই অনুষ্ঠান। পশ্চিমবঙ্গের একমাত্র জেলা হিসাবে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সৈকত নগরী দিঘার মৎস্যজীবীদের সঙ্গে কথা বলার পরিকল্পনা ছিল মোদীর। ৩ মার্চ থেকে খোলা হয়েছিল হেল্প লাইন নম্বর ১৮০০১১৭৮০০। বলা হয়েছিল, কেউ এই নম্বরে ফোন করে তাঁর সমস্যা ও তাঁর সঙ্গে হওয়া বিশেষ ঘটনার কথা জানাতে পারেন। ওল্ড দিঘার ব্যারিস্টার কলোনিতে বাঁধা হয়েছিল মঞ্চ। সেখানে চারশো কাছাকাছি মৎস্যজীবী উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীকে তাঁদের সমস্যার কথা জানাতে পারেননি তাঁরা।
রামনগর-১ ব্লকের বসন্তপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত সাতারা গ্রামের বাসিন্দা স্বপন মাইতি। নিজের ট্রলার ব্যবসা রয়েছে শঙ্করপুরে। তিনি বলছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর কাছে সরাসরি নিজেদের পেশার সমস্যার কথা তুলে ধরার জন্য এসেছিলাম। কিন্তু যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে সরাসরি কথা বলতে পারিনি। এর জন্য খানিকটা হতাশ।’’ আরেক মৎস্যজীবী বললেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা চলাকালীন দূরদর্শনের তরফে প্রশ্ন করা হয়েছিল, কেন্দ্রীয় সরকারের মৎস্যজীবী যোজনা তে কী কী সুবিধা পেয়েছি? তাছাড়া আমাদের কী সমস্যা রয়েছে সে সম্পর্কেও জানতে চাওয়া হয়েছিল।’’ জবাবে ওই মৎস্যজীবী বলছেন, ‘‘কিছু কিছু ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুবিধা মৎস্যজীবীরা পাচ্ছেন। তবে গত কয়েকবছরে সমুদ্র এমনিতে মাছের খরা চলছে। তারপর ডিজেলের অস্বাভাবিক মূল্য বেড়েছে। তাই ডিজেলের উপরে যাতে কেন্দ্র সরকার ভর্তুকির বন্দোবস্ত করে তার আবেদন জানিয়েছি।’’ রামনগরের ঘেরসাই থেকে এসেছিলেন বিপ্লব মণ্ডল নামে আরেক মৎস্যজীবী। দিঘা মোহনাতে তাঁর মাছের আড়ৎ রয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে বাড়ির অসুবিধার কারণে চলে যেতে হয়েছিল। নিজের মুখে সমস্যার কথা না জানাতে পারলেও যে ভাবে গোটা দেশের মানুষের কাছে মন কী বাত কর্মসূচির মাধ্যমে আজকে দিঘার মৎস্যজীবীদের বিষয়ে তুলে ধরা হয়েছে এবং বারে বারে এখানকার ছবি দেখানো হয়েছে তাতে খুশি। মৎস্যজীবীরা আপ্লুত হয়েছেন।’’
প্রসঙ্গত, মাসখানেক আগে রামনগরের দলীয় কর্মসূচিতে গিয়ে মৎস্যজীবীদের সঙ্গে জনসংযোগ করার কথা বলেছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎপ্রকাশ নড্ডা। তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। তাই একজন মৎস্যজীবীর সঙ্গে কথা বলেই চলে যেতে হয়েছিল নডডাকে। সে বারও হতাশ হয়েছিলেন নড্ডার সঙ্গে সাক্ষাৎপ্রার্থী মৎস্যজীবী এবং পান চাষিরা।
এ দিনের কর্মসূচিতে বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য অনুপ চক্রবর্তী-সহ বেশ কয়েকজন পদাধিকারী ও উপস্থিত ছিলেন। তবে এ দিনের কর্মসূচির শেষে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা তথা বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি অসীম মিশ্র বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে আমাদের জেলার মৎস্যজীবীদের মন কী বাত কর্মসূচিতে যুক্ত করার কথা বলা হয়েছিল। সেই মাফিক তারা যুক্ত হয়েছেন। উপকূলবর্তী দিঘা এবং আশেপাশে এলাকার মৎস্যজীবীদের জীবন যাত্রার ছবি একাধিকবার এ দিন দূরদর্শনের পর্দায় গোটা দেশের কোটি কোটি মানুষ দেখেছেন। দেশবাসীর কাছে আমাদের এলাকার মৎস্যজীবীদের গৌরবান্বিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এতে আমরা অত্যন্ত খুশি।’’
অন্যদিকে, এ দিন বিকালে নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের দেবীপুর স্কুল মাঠ থেকে কর্মী সভাতে হরিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন ১৪ টি সংসদের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে বিজেপি। ওই কর্মী সম্মেলনে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও ছিলেন।