রসায়নে নোবেলজয়ী হিদেকি শিরাকাওয়ার সঙ্গে নম্রতা।—নিজস্ব চিত্র।
শালবনি থেকে জাপান, যেন এক স্বপ্নের উড়ান। মেধার ভিত্তিতে সুযোগ পেয়ে এক শিক্ষামূলক ভ্রমণে ৭ দিন জাপানে ঘুরে এলেন শালবনি নোট মুদ্রণ কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের ছাত্রী দ্বাদশ শ্রেণির নম্রতা ভট্টাচার্য।
শুধু জাপানে যাওয়া ও বেড়ানো নয়। সেখানে ২০০০ সালে রসায়নে নোবেলজয়ী হিদেকি শিরাকাওয়ার পরীক্ষাগারে বসে তাঁরই সামনে তাঁর গবেষণার সফল রূপায়ণ দেখানো! মহাকাশচারী মামোরু মোহরির সঙ্গে বসে তাঁর অভিজ্ঞতার কথা শোনা। আর মিরাইকেনে ফিউচার সায়েন্স মিউজিয়ামে গিয়ে মানব রোবট দেখা।
সম্প্রতি সেই সফর সেরে ফিরেছেন নম্রতা। তাঁর চোখ-মুখে এখন জাপান নিয়ে অপার মুগ্ধতা। তিনি বলেন, ‘‘দুটো জিনিস এখনও চোখের সামনে ভাসছে। এক, হিদেকি শিরাকাওয়ার পরীক্ষাগারে বসে কথা বলেছি। তাঁরই গবেষণা দেখাতে গিয়ে এক বারে সফল হয়েছি। ভাল লাগবে না। আর দুই, মহাকাশচারী মামোরু মোহরির মুখ থেকে তাঁর নানা অভিজ্ঞতা শোনা! আমি ভাবতেই পারছি না।” জাপান থেকে ফিরে নম্রতা আরও নম্র হয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘জাপানের মানুষ এতটাই শান্ত আর নম্র কল্পনা করা যায় না। সব সময়ে বিনয়ের সঙ্গে অবলীলায় অন্যকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন। নিজেরাই নিজের কাজ করেন। আমিও এ বার সেই চেষ্টা করব। অন্যদের পরামর্শ দেব।’’
নোট মুদ্রণ প্রেসে কাজ করেন নম্রতার বাবা তাপস ভট্টাচার্য। তিনি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। মেয়ের ইচ্ছা বিজ্ঞানী হবেন। মেয়ে জাপান যাওয়ার জন্য মনোনীত হয়েছে জানার পর থেকেই খুশির অন্ত নেই তাপসবাবুর। বলেন, “মেয়ে এই বয়সেই মেধার জোরে এত বড় সুযোগ পাবে ভাবিনি। প্রত্যেক বাবা-মাই চান তাঁর সন্তানেরা মেধাবী হোক, মানুষ হোক। এই ধরনের শিক্ষামূলক ভ্রমণে সূযোগ পাওয়ায় সত্যি গর্বিত।” তাপসবাবুরা আদতে কলকাতার বাসিন্দা। চাকরি সূত্রে পরিবার নিয়ে শালবনিতে। কিন্তু শালবনি থেকেও যে শুধুমাত্র মেধার জন্যই সকলকে পিছনে ফেলে এত বড় শিক্ষামূক ভ্রমণের সূযোগ পাওয়া যায় নম্রতা প্রমাণ করে দেখিয়ে দিল।
এই স্কুল থেকে আরও এক জন কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে। সে হল একাদশ শ্রেণির প্রমিত রাউত। ৪৭তম কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় স্প্রিং বোর্ড ডাইভিংয়ে ২টি সোনা ও ১ রূপো পেয়েছে সে। ফলে কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের সর্বভারতীয় প্রতিযোগিতায় সুযোগ পেয়েছে সে। এই ঘটনায় বেজায় খুশি বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ শিবলাল সিংহ। তিনি বলেন, “এই দু’ই ছাত্রছাত্রী স্কুলের নাম উজ্জ্বল করেছে। আমি চাই, স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা ওদের দেখে উত্সাহিত হোক। তা হলে ভবিষ্যতে অন্যরাও এই ভাবেই এগিয়ে যাবে।”