চিল্কিগড়ের উদ্যান। নিজস্ব চিত্র
দেখেই জানা যাবে গাছের নাম। বিশেষ প্রজাতির গাছটি কোন উদ্ভিদবিজ্ঞানী চিহ্নিত করেছিলেন জানা যাবে তাঁর নামও। চিল্কিগড়ে প্রাচীন গাছগাছড়ার গায়ে এ বার লাগানো হয়েছে নেমপ্লেট। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর প্রকাশ কর্মকারের নেতৃত্বে একটি দল গত কয়েক মাস ধরে জঙ্গলের প্রাচীন গাছগাছড়া গুলিকে চিহ্নিত করার কাজ করেছেন। নতুন রূপে সেজে ওঠা চিল্কিগড়ের জঙ্গলের আনুষ্ঠানিক প্রকাশ হবে কাল, ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবসে।
জামবনি ব্লকের চিল্কিগড়ে ডুলুং নদীর কূল ঘেঁষা প্রাচীন দুষ্প্রাপ্য গাছগাছড়ার গভীর জঙ্গলের মাঝে রয়েছে কনকদুর্গার প্রাচীন মন্দির। ৬১ একর এলাকা জুড়ে থাকা ওই জঙ্গলে প্রায় তিনশোর বেশি প্রজাতির প্রাচীন দুষ্প্রাপ্য গাছগাছড়া ও ভেষজ উদ্ভিদ রয়েছে। পুরো এলাকাটির দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে কনকদুর্গা মন্দির উন্নয়ন কমিটি ও জামবনি পঞ্চায়েত সমিতি।
উদ্ভিদবিদ্যার গবেষকদের বক্তব্য, ঝাড়গ্রামে মূলত, শাল, পিয়ালের মতো শুষ্ক পর্ণমোচী গাছের বনভূমি রয়েছে। যদিও ডুলুং নদীর কুলঘেঁষা চিল্কিগড়ের ৬১ একর জঙ্গলের চরিত্র নিরক্ষীয় চিরহরিৎ বৃষ্টি অরণ্যের মতো। জঙ্গলে নানা প্রজাতির প্রাচীন কাষ্ঠল লতানো গাছ রয়েছে। জামবনি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সমীর ধল বলেন, “জঙ্গলে বেড়াতে আসা লোকজন প্রাচীন গাছ গাছড়াগুলির নাম জানতে চান, কিন্তু এ সংক্রান্ত তথ্য না থাকায় পর্যটন কেন্দ্রের স্বেচ্ছাসেবকরা জবাব দিতে হিমসিম খান। বেড়াতে আসা মানুষজন নিজেরাই যাতে প্রতিটি গাছের সম্পর্কে নেমপ্লেট থেকে জানতে পারেন, সেই জন্যই এই উদ্যোগ।”
চিল্কিগড়ের জঙ্গল এলাকাটিকে হেরিটেজ ঘোষণার জন্য প্রস্তাব দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ জীববৈচিত্র্য পর্ষদ। এ জন্য স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হয়েছে। মন্দির চত্বরটিকে সরকারি ভাবে প্লাস্টিক-পলিথিন বর্জিত পরিবেশ বান্ধব এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। মন্দির চত্বর লাগোয়া জঙ্গলে বনভোজন ও আগুন জ্বালানো নিষিদ্ধ হয়েছে। বনভোজনের জন্য তৈরি হয়েছে বিকল্প জায়গা। চিল্কিগড়ে পর্যটকদের থাকার জন্য অতিথিশালা তৈরির কাজ চলেছে জোরকদমে। পর্যটকদের কাছে জীববৈচিত্র্যে ভরপুর চিল্কিগড়ের জঙ্গল ও কনকদুর্গার প্রাচীন মন্দিরকে তুলে ধরার জন্য জামবনি ব্লক প্রশাসনের উদ্যোগে ‘কনক-অরণ্য’ নামে একটি স্বল্প দৈর্ঘ্যের তথ্যচিত্রও ইউটিউবে আপলোড করা হয়েছে। জামবনির বিডিও মহম্মদ আলিম আনসারি বলেন, “জঙ্গলের গাছগুলির নেমপ্লেট লাগানো হলে শিক্ষামূলক ভ্রমণে আসা পড়ুয়া ও গবেষকরা সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবেন।”