Swastha Sathi

Swastha Sathi : স্বাস্থ্যসাথী কার্ডেও মেলেনি চিকিৎসা

একমাত্র রোজগেরে ছেলেকে সুস্থ করে তোলার দায়িত্ব নিক সরকার। আর্তি হরিপদর  বাবা-মায়ের।

Advertisement

দিগন্ত মান্না

কোলাঘাট শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০২১ ০৭:০০
Share:

বাড়িতে হরিপদ সামন্ত। নিজস্ব চিত্র।

শরীরে ছিল না করোনার উপসর্গ। তবুও স্বাস্থ্য দফতরের ফরমান মেনে হাসপাতালে যাওয়ার জন্য উঠতে হয়েছিল অ্যাম্বুল্যান্সে। হাসপাতালে ঢোকার আগে পথ দুর্ঘটনায় মারা যান অ্যাম্বুল্যান্সের চালক ও আর এক করোনা আক্রান্ত। সে যাত্রায় প্রাণে বেঁচে গেলেও এখনও শয্যাশায়ী কোলাঘাটের গোপালনগরের বছর তেইশের যুবক হরিপদ সামন্ত। টাকার অভাবে থমকে রয়েছে চিকিৎসা। পরিবারের অভিযোগ, স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকলেও মেলেনি উন্নত চিকিৎসা। একমাত্র রোজগেরে ছেলেকে সুস্থ করে তোলার দায়িত্ব নিক সরকার। আর্তি হরিপদর বাবা-মায়ের।

Advertisement

দিল্লিতে সোনার কারিগর হিসেবে কাজ করতেন হরিপদ। গত বছর জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে বাড়ি ফিরে আসেন। পরিযায়ী শ্রমিক হওয়ায় তাঁর কোভিড পরীক্ষা করা হয়। রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে।যদিও হরিপদর শরীরে করোনার কোনও উপসর্গ ছিল না বলে দাবি পরিবারের। গত বছর ১৪ জুন কাকভোরে হরিপদকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় সরকারি অ্যাম্বুল্যান্স। গন্তব্য ছিল মেচগ্রামের বড়মা হাসপাতাল। হরিপদর সঙ্গে ছিলেন কোলাঘাটেরই আর একজন পরিযায়ী শ্রমিক। হাসপাতালে ঢোকার কিছুটা আগে একটি লরির পিছনে ধাক্কা মারে অ্যাম্বুল্যান্সটি। ঘটনাস্থলেই মারা যান অ্যাম্বুল্যান্সের চালক রাজু দাস। পরে হাসপাতালে মৃত্যু হয় অ্যাম্বুল্যান্সে থাকা একজন পরিযায়ী শ্রমিকের। দুর্ঘটনায় প্রাণে বেঁচে যান হরিপদ। তবে তাঁর কোমর, শিরদাঁড়া ও একটি হাঁটু ভেঙে যায়। তাঁকে ভর্তি করা এসএসকেএম হাসপাতালে। দু’মাস চিকিৎসার পর স্পাইনালে অস্ত্রোপচারের জন্য হরিপদকে একটি নার্সিং হোমে নিয়ে যান তাঁর পরিবারের সদস্যরা।এক মাসে খরচ হয় ৩ লক্ষ টাকা। কিন্তু তাতেও উঠে দাঁড়াতে পারেননি হরিপদ। কোমর থেকে পা পর্যন্ত অসাড় হয়ে গিয়েছে তাঁর। বিছানায় শুয়েই দিন কাটছে হরিপদর। পরিবারের দাবি উন্নত চিকিৎসার সাহায্য নিলে হরিপদ আবার উঠতে দাঁড়াতে পারবে। বাবা প্রশান্ত সামন্ত দিনমজুর। মা রিনা গৃহবধূ। টাকার অভাবে ছেলের চিকিৎসা করাতে পারছেন না তাঁরা। রিনার নামে স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড রয়েছে। কিন্তু অভিযোগ, সেই কার্ডে হরিপদর চিকিৎসা করাতে রাজি হয়নি কোনও বেসরকারি হাসপাতাল।

পরিবাররে প্রধান রোজগেরে শয্যাশায়ী হয়ে পড়ায় অভাব-অনটনে পড়েছে গোটা পরিবার। নিজের বলতে মাত্র এক কাঠা জমি রয়েছে প্রশান্তর। আর আছে একটা কাঁচা বাড়ি। প্রথম প্রথম আত্মীয়দের সহযোগিতায় চিকিৎসার খরচ কিছুটা জোগাড় হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী কালে চিকিৎসার জন্য কারও কাছ থেকেই আর সাহায্য মিলছে না বলে জানালেন হরিপদর বাবা।

Advertisement

পরিবারের দাবি দুর্ঘটনার পর প্রশসান থেকে অনেকেই বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন কারও দেখা নেই। বাড়িতে উঁকি মারেন না কোনও জনপ্রতিনিধিও। মা রিনা বলেন, ‘‘ছেলের শরীরে কোনও সমস্যা ছিল না। ও হাসপাতালে যেতে চায়নি। স্বাস্থ্য দফতরের লোকেরা জোর করে ওকে অ্যাম্বুল্যান্সে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। আর ফেরত পাঠাল শয্যাশায়ী করে। সংসারটা ছেলেই চালাত। আমরা কোনও আর্থিক সাহায্য চাই না। সরকার আমার ছেলের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়ে ওকে সুস্থ করে তুলুক। না হলে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে।’’

হরিপদর জামাইবাবু আশিস মল্লিক বলেন, ‘‘সরকার ওঁকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গিয়েছিল। তাই ওঁর দায়ভার সরকারের। কিন্তু ওঁর চিকিৎসার জন্য কোনও সরকারি সাহায্য আমরা পাইনি। আমার শাশুড়ির স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকা সত্ত্বেও কোনও নার্সিংহোম চিকিৎসা করতে চাইছে না।’’

এ বিষয়ে কোলাঘাটের বিডিও তাপস হাজরা বলেন, ‘‘ওই সময় আমি কোলাঘাটে ছিলাম না। তাই হরিপদ সামন্তর বিষয়টি জানি না। তবে আমি ওঁর পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement