চোখের জলে নাজিম স্মরণ মেদিনীপুরে  

ঝোলায় রয়েছে হরেক রকম উপহারও। কেক, চকলেট, বেলুন, আরও কত কী। বড়দিনের সময়ে এ ভাবেই সান্তা সেজে ইতিউতি ছুটে বেড়াতেন তিনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৮ ১৪:৩৬
Share:

লাল পোশাক, গালভর্তি সাদা দাঁড়ি, মাথায় টুপি, হাতে ঝোলা!

Advertisement

ঝোলায় রয়েছে হরেক রকম উপহারও। কেক, চকলেট, বেলুন, আরও কত কী। বড়দিনের সময়ে এ ভাবেই সান্তা সেজে ইতিউতি ছুটে বেড়াতেন তিনি। পুজো হোক কিংবা ইদ, সব উত্সবকেই মানুষের মিলন মেলায় পরিণত করতে নতুন নতুন উপায় বের করতেন। মেদিনীপুরের প্রাক্তন পুরপ্রধান নাজিম আহমেদ ছিলেন এমনই। সেই নাজিম আহমেদ নেই, এখনও যেন বিশ্বাস হয় না মেদিনীপুরের। বুধবার পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকীতে নাজিম আহমেদকে নানা ভাবে স্মরণ করল মেদিনীপুর।

অলিগঞ্জ অ্যাথলেটিক ক্লাবের উদ্যোগে পিপলস্‌ ব্যাঙ্কের প্রেক্ষাগৃহে এ দিন এক স্মরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সহায়তায় ছিল ফ্রেন্ডস ক্লাব ও এ টি ক্লাব। রক্তের সঙ্কট কাটাতে এক শিবিরও হয়। উদ্যোক্তাদের পক্ষে সোমনাথ কারক, শেখ সানিরা বলছিলেন, “নাজিম আহমেদকে মেদিনীপুরের মানুষ কখনও ভুলবে না। উনি বৈচিত্র্যময় ছিলেন।” এ দিনের স্মরণ অনুষ্ঠানে ছিলেন মেদিনীপুরের পুরপ্রধান প্রণব বসু, প্রাক্তন বিধায়ক রজনীকান্ত দোলই, কাউন্সিলর শম্ভুনাথ চট্টোপাধ্যায়, বিশিষ্ট চিকিত্সক হৃষিকেশ দে, প্রাক্তন ফুটবলার অমিয় ভট্টাচার্য প্রমুখ।

Advertisement

পুরপ্রধান প্রণববাবুর স্বীকারোক্তি, “উনি নতুন নতুন ভাবনাচিন্তা করতেন। পুরসভাকে নিয়ে অনেক ভাবতেন। উনিও পুরপ্রধান ছিলেন। আমিও পুরপ্রধান। আমি ওঁর জায়গায় পৌঁছতে পারিনি।” তাঁর কথায়, “নাজিম আহমেদকে স্মরণ করতে গেলে যে কথাগুলো বলতে হয় সেই কথাগুলো ২-৫ মিনিটে শেষ হওয়ার নয়।”

তিনি বলেন, “এক সময় উনি দলের প্রতীক পাননি। সেই সময় রেডিও চিহ্ন নিয়ে ভোটে দাঁড়িয়েও জিতেছেন।”

প্রাক্তন বিধায়ক রজনীকান্তবাবুর কথায়, “নাজিম অনেক জনপ্রিয় ছিলেন। মানুষের উপকার করতেন। মানুষ ওকে ভালবাসত।” চিকিত্সক হৃষিকেশ দেও বলছিলেন, “এক ডাকে সবাই চিনত ওকে। নাজিম গীতাও পড়তেন। মানুষই ছিল ওর কাছে সব।” প্রাক্তন ফুটবলার অমিয়বাবুর কথায়, “এ রকম বর্ণময় মানুষ পাওয়া কঠিন।”

স্মরণ অনুষ্ঠানে ছিলেন নাজিম সাহেবের স্ত্রী রহিমা আহমেদও। স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে চোখে জলে আসে অনেকেরই। কেউ কেঁদেছেন। কেউ কোনও ভাবে চোখের জলে বাঁধ দিয়েছেন।

২০১৪ সালের ২৫ এপ্রিল ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যান নাজিম আহমেদ। ট্রেন লাইনে ঝাঁপ দেন প্রাক্তন পুরপ্রধান। তবে তাঁর এ ভাবে চলে যাওয়াকে কেউই যেন মেনে নিতে পারেননি। আসলে শহর মেদিনীপুরের কাছে নাজিম আহমেদ মানেই অন্য রকম কিছু। কখনও বুলডোজারের মাথায় চড়ে বেআইনি নির্মাণ ভেঙেছেন। কখনও পুরসভার ভল্টে টাকা থাকায় সারা রাত পুরভবনের সামনে লাঠি হাতে পাহারা দিয়েছেন। দেখতে দেখতে পাঁচ বছর হয়ে গিয়েছে। কিন্তু স্মৃতি যেন এখনও টাটকা।

তিনি সকলকে নিয়ে চলতে ভালবাসতেন। একবার কারও সঙ্গে পরিচয় হয়ে গেলে সহজে তাঁকে ভুলতেন না।

কাউন্সিলর হিসেবেও দলমত নয়, মানুষই ছিল তাঁর কাছে একমাত্র পরিচয়। পুরপ্রধান হিসেবে নাজিম সাহেবকে শহর দেখেছে এক অন্য ভাবে, অন্য রূপে। এ দিনের স্মরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলেই একবাক্যে মেনেছেন, আজকের দিনে এমন মানুষ পাওয়া শুধু কঠিন নয়, বেশ কঠিন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement