ডিওয়াইএফ জোনাল সম্মেলন

সদস্য সংগ্রহ ঢিমেতালে, নতুন মুখে জোর

একের পর এক এলাকায় নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। প্রতিবাদ- আন্দোলনে মহিলা ‘মুখ’ চাই। অথচ, সিপিএমের যুব সংগঠনে সেই নতুন ‘মুখ’-এর বড় অভাব। কোনও রাখঢাক গুড়গুড় না-করে এ কথা মেনে নিলেন ডিওয়াইএফ নেতৃত্ব।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৫ ০০:৫৯
Share:

একের পর এক এলাকায় নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। প্রতিবাদ- আন্দোলনে মহিলা ‘মুখ’ চাই। অথচ, সিপিএমের যুব সংগঠনে সেই নতুন ‘মুখ’-এর বড় অভাব। কোনও রাখঢাক গুড়গুড় না-করে এ কথা মেনে নিলেন ডিওয়াইএফ নেতৃত্ব। ডিওয়াইএফের মেদিনীপুর শহর জোনাল নেতৃত্বের স্বীকারোক্তি, সংগঠনে এবং আন্দোলনে যুবতীরা এগিয়ে আসছেন না। অথচ, সমাজ ব্যবস্থায় একজন যুবকের চেয়ে একজন যুবতীর সমস্যা অনেক।

Advertisement

শুক্রবার সন্ধ্যায় ডিওয়াইএফের মেদিনীপুর শহর জোনাল সম্মেলন হয়। উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের জেলা সম্পাদক দিলীপ সাউ, জেলা সভাপতি চিন্ময় পাল প্রমুখ। জেলায় দীপক সরকারের জমানা শেষে এখন নতুন জেলা সম্পাদক তরুণ রায়ের জমানা শুরু হয়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যুব সংগঠনে বড়সড় রদবদল হয়েছে। সরে গিয়েছেন জোনাল সম্পাদক, জোনাল সভাপতি-সহ জোনাল কমিটির প্রায় ৮০ শতাংশ সদস্য। বদলে নতুনদের কমিটিতে ঠাঁই দেওয়া হয়েছে। ডিওয়াইএফের শহর জোনাল সম্পাদক ছিলেন স্নেহাশিস দত্ত। নতুন সম্পাদক হয়েছেন শেখ আবদুল রাফে। জোনাল সভাপতি ছিলেন কুন্দন গোপ। নতুন সভাপতি হয়েছেন সমীর দাস। অন্যদিকে, জোনাল কমিটির সহ- সম্পাদক হয়েছেন সুলতানা খাতুন, সুব্রত চক্রবর্তী। সহ- সভাপতি হয়েছেন গৌরব সিংহ, বীরেন ঘোষ, মানস প্রামাণিক। কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পেয়েছেন অরিন্দম দত্ত। সুব্রত বছর দুয়েক আগে এসএফআইয়ের শহর জোনাল সভাপতি ছিলেন। দলবিরোধী কাজের অভিযোগে পরে সুব্রত সহ ১৮ জন ছাত্র নেতাকে পদ থেকে সরিয়ে দেয় জেলা এসএফআই।

বস্তুত, এই ‘অসময়’- ও সংগঠনের নতুন শহর জোনাল কমিটি গঠন নিয়ে ঐক্যমতে পৌঁছতে বেশ বেগ পেতে হয় ডিওয়াইএফ নেতৃত্বকে বলে দলেরই এক সূত্রে খবর। কমিটিতে কে কে থাকবেন, কোন পদে থাকবেন, সেই নিয়ে চাপানউতোর চলে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ছাত্র- যুব সাব কমিটিকে আলোচনায় বসতে হয়। সেখানেও দাবি- পাল্টা দাবি ওঠে। ওই সূত্রে খবর, সিপিএমের জেলা নেতৃত্ব যা চেয়েছিলেন, জোনাল নেতৃত্ব তা চাননি। মতবিরোধের সূত্রপাত এখানেই। একাধিক পদ নিয়ে এই দুই স্তরের মতপার্থক্য দেখা দেয়। পরে অবশ্য আলোচনার মাধ্যমেই সমাধানসূত্র বেরোয়। ডিওয়াইএফ নেতৃত্ব অবশ্য মতবিরোধের কথা মানতেই চাননি। নেতৃত্বের বক্তব্য, সর্বসম্মতিক্রমেই নতুন কমিটি গঠন হয়েছে। যাঁদের বয়স ৪০ পেরিয়ে গিয়েছে, তাঁদের আর পদে রাখা হয়নি। দলীয় সূত্রে খবর, যে ভাবে সদস্য সংগ্রহ চলছে, সেই নিয়েও সম্মেলনে উদ্বেগ প্রকাশ করেন নেতৃত্ব। নেতৃত্বের মতে, এ ভাবে সদস্য সংগ্রহ চললে, লক্ষ্যমাত্রার ধারেকাছে পৌঁছনো যাবে না। এ বার সদস্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে ১০,০০০। অবশ্য এখনও এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। যেখানে ২০১২ সালে সদস্য ছিল ৯,৪৩৯। ২০১৩ সালে ৯,৩৭৭ এবং ২০১৪ সালে ৮,০৫৫।

Advertisement

ঠিক কি ভাবে সংগঠনে মহিলা ‘মুখ’- এর ঘাটতির কথা মেনেছেন ডিওয়াইএফ নেতৃত্ব? জোনাল সম্মেলনে পেশ করা সম্পাদকীয় প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘যুব সমাজের অর্ধেক যুবতী। এদের বাদ দিয়ে আমরা কখনওই সংগঠনের অগ্রগতি ঘটাতে পারি না। আমাদের সংগঠনে এবং আন্দোলনে যুবতীদের অংশগ্রহন করানো যাচ্ছে না বললেই চলে। অল্প কিছু যুবতীকে সংগঠনে আনা গেলেও তাদের ধারাবাহিক করানোর ক্ষেত্রে আমাদের দুর্বলতা আছে। তিন বছরে একবার মাত্র জোনাল যুবতী কনভেনশন এবং জেলা যুবতী কনভেনশনে কয়েকজন যুবতীকে পাঠানো ছাড়া যুবতীদের যুক্ত করার ক্ষেত্রে আর কোনও সাফল্য অর্জন করা যায়নি।’ আরও বলা হয়েছে, ‘আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় একজন যুবকের চেয়েও একজন যুবতীর যে বর্ধিত সমস্যা, সামাজিক অন্যায়, অবিচার, পণপ্রথা, নারী নির্যাতন সহ অনান্য সমস্যাগুলো উপলব্ধির মধ্যে রেখে যুবতীদের সংগঠিত করার জন্য আমাদের আন্তরিক ও যত্নবান হতে হবে।” প্রতিবেদনে স্বীকার করা হয়েছে, ‘পুরসভার বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ রয়েছে। এ নিয়ে লাগাতার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। অথচ, এই সময়ের মধ্যে যে ভাবে প্রচার সংগঠিত করা দরকার ছিল, তা
করা যায়নি।’

সাংগঠনিক দুর্বলতার কথাও মেনে নিয়েছেন সিপিএমের যুব নেতৃত্ব। কেমন? প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘২০১২ সালের সম্মেলনের পরে জোনাল কমিটির সভা হয়েছে ৩৬টি। বর্ধিত সভা হয়েছে ৮টি। সভায় গড় উপস্থিতি ৫০- ৬০ শতাংশ। উপস্থিতির অভাবে কয়েকটি সভা বাতিলও করতে হয়। জোনাল কমিটির ২ জন প্রথম থেকেই কাজের মধ্যে নেই। এক বছর পর থেকে আরও ৩ জন কাজের মধ্যে নেই। বিগত এক বছর ধরে আরও ৪ জন কাজের মধ্যে নেই। ফলে গত এক বছর ধরে ১১ জন সদস্যকে নিয়ে জোনাল কমিটি পরিচালিত হয়েছে। এদের মধ্যেও আবার ৩- ৪ জনের ধারাবাহিকতার অভাব ছিল।’ সংগঠনের কর্মসূচিগুলোয় কর্মীদের উপস্থিতি সে ভাবে ঘটানো যায়নি মেনে নিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ইউনিট কমিটিগুলোকে যেমন সংগঠনের প্রাণ কোষ বলা হয়, তেমন আন্দোলন হচ্ছে সংগঠনের প্রাণশক্তি। আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যে দিয়েই সংগঠন বিকশিত হয়। এবং এর মধ্যে দিয়েই নতুন নতুন যুবদের সংগঠনের পতাকা তলে সামিল করানো যায়। নির্বাচনী ফলাফল যুবদের মধ্যে একটা আড়ষ্টতা তৈরি করেছিল। যুবদের একটা ভাল অংশ চাওয়া পাওয়ার আশায় বিরোধী শিবিরে যোগ দিচ্ছে। এবং প্রতিক্রিয়া শক্তি এদের কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে। ধারাবাহিক জনসংযোগ গড়ে তোলায় ঘাটতি রয়েছে।’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement