প্রতীকী ছবি।
টেক্কা দিতে এক দশক পরে প্রথা ভাঙল তৃণমূল!
সোমবার, ৪ জানুয়ারি তৃণমূলের ছোট আঙারিয়া দিবস। প্রতিবছরের মতো এ বারও গড়বেতায় দিনটি পালন করবে তৃণমূল। আজই আবার শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়ে গড়বেতায় বিজেপির জনসভা। শক্তি প্রদর্শন করতে মরিয়া দুই দলই।
গেরুয়া শিবিরকে টেক্কা দিতে শেষ মুহূর্তে সভাস্থল বদল করেছে তৃণমূল। ছোট আঙারিয়ার বদলে স্মরণসভা হবে ফুলবেড়িয়ার কাছে বোষ্টমমোড়ে। ছোট আঙারিয়া গ্রাম থেকে তার দূরত্ব আড়াই কিলোমিটার। ধাদিকা-কল্যাণচক রাস্তার পাশেই বোষ্টমমোড় ফুটবল ময়দানে সভার জন্য রবিবার সকাল থেকেই শুরু হয়েছে মঞ্চ বাঁধার কাজ।
২০০১ সালের ৪ জানুয়ারির রাতে ছোট আঙারিয়া গ্রামে তৃণমূল কর্মী বক্তার মণ্ডলের বাড়িতে 'সিপিএম গণহত্যা' চালায় বলে অভিযোগ অধুনা শাসকদলের। ২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর থেকে প্রতিবছর সেই ঘটনায় নিহত দলীয় কর্মীদের স্মরণে এই গ্রামে বড় সভা করে তৃণমূল। ২০১৮ সালে ছোট আঙারিয়া গ্রামে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের পরে সভার পরিসর বাড়ে। এ বারও গ্রামেই সভার তোড়জোড় হচ্ছিল। প্রথমে ছোট আঙারিয়ায় দু’টি স্থান দেখা হয়। কিন্তু সেগুলি তুলনায় ছোট। তাই শনিবার সন্ধ্যাতেই ব্লক তৃণমূল নেতৃত্ব ঠিক করেন, সভা হবে বোষ্টমমোড়ের বড় মাঠে। প্রথমে ছোট আঙারিয়া গ্রামের তৃণমূল কর্মীরা আপত্তি জানালেও পরিস্থিতি বুঝে এ বারের মতো স্থান বদলে রাজি হন তাঁরাও।
রবিবার ছোট আঙারিয়া গ্রামে স্মৃতিস্তম্ভের সামনে দাঁড়িয়ে বক্তার মণ্ডল, মহব্বত মণ্ডলেরা বলেন, ‘‘এ বার অন্যত্র সভা করা হলেও, পরের বার থেকে ফের এই গ্রামেই স্মরণসভা হবে।’’ বক্তার জানান, সভার আগে এখানে এসে শহিদ বেদিতে মাল্যদান করে যাবেন নেতৃবৃন্দ।
দশ বছরের প্রথা ভেঙে সভার স্থান বদল কেন? তৃণমূলের ব্লক সভাপতি সেবাব্রত ঘোষ ও বিধায়ক আশিস চক্রবর্তীর জবাব, ‘‘ছোট আঙারিয়া গ্রামে বেশি লোক জমায়েতের জন্য সেরকম বড় জায়গা নেই। তাই সেখানে শহিদ বেদিতে মাল্যদান করে কিছুটা দূরে বোষ্টমমোড়ে সভা হবে। প্রচুর মানুষ আসবেন।’’ তৃণমূল সূত্রে খবর, একই দিনে গড়বেতায় বিজেপির সভায় শুভেন্দু থাকবেন। সেই সভাকে লোক সংখ্যার নিরিখে টেক্কা দিতেই শেষ বেলায় বড় মাঠে সভার আয়োজন করা হচ্ছে। তৃণমূলের সভায় দলের জেলা নেতাদের পাশাপাশি সাংসদ, মন্ত্রীদেরও থাকার কথা।
প্রস্তুতিতে পিছিয়ে নেই গেরুয়া শিবিরও। গড়বেতা হাইস্কুল মাঠে বড়সড় মঞ্চ বাঁধা হয়েছে। সভাস্থল ও গড়বেতায় শুভেন্দু-সহ বিজেপি নেতাদের ছবির ফ্লেক্সে ভরিয়ে দেওয়া হয়েছে। দলের গড়বেতা বিধানসভার সংযোজক তারাচাঁদ দত্ত বলেন, ‘‘৫০০ ছবির হোর্ডিং লাগানো হয়েছে সভাস্থল ও তার আশেপাশের এলাকায়।’’ দিলীপ ঘোষের পাশে শুভেন্দুর ছবি দেওয়া তোরণও করা হয়েছে গড়বেতার রাস্তায়। সভায় অন্য দল থেকে অনেকেই বিজেপিতে যোগদান করবেন বলে দলের জেলা সহ-সভাপতি মদন রুইদাস জানান। সে ক্ষেত্রে কারা যোগদান করবেন তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। খোলসা করে না বললেও মদন বলেন, ‘‘যোগদান হবে, চমকও আছে।’’
বিজেপির সভার আগে গড়বেতা জুড়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবিতে ছয়লাপ করে দিয়েছে তৃণমূলও। মমতার ছবির সঙ্গে কোথাও লেখা ‘দিদির সঙ্গে মেদিনীপুর’, কোনওটায় লেখা ‘সোনার বাংলার কারিগর’। পাশাপাশিই দেখা গিয়েছে শুভেন্দুর ছবি দেওয়া বিজেপির ফ্লেক্স ও মমতার ছবি দেওয়া তৃণমূলের বোর্ড। সব মিলিয়ে যুযুধান দুই শিবিরের সভা ঘিরে তেতে উঠেছে গড়বেতা।