সওয়ার: সাইকেলে চড়ে পলাশ, গৌরাঙ্গ ও প্রতাপ। নিজস্ব চিত্র
সাইকেলের দু’চাকায় দূষণ রোধের বার্তা— আর তা নিয়েই দিঘা থেকে দার্জিলিং পাড়ি দিচ্ছেন গৌরাঙ্গ কুইল্যা। শিল্পের সাফল্যে আগেই পেয়েছেন জাতীয় স্বীকৃতি পেয়েছেন, তার বাইরে পরিবেশ সচেতনতায় গৌরাঙ্গর ভূমিকাও অনেকখানি। বছর চল্লিশের শিল্পীর সঙ্গে জুটেছেন এক সিভিল ইঞ্জিনিয়ার প্রতাপ পণ্ডা। বয়স তাঁর ৫৯। সাইকেল নিয়ে এর আগে বহু অভিযানে যোগ দিয়েছেন প্রতাপ। এ বার গৌরাঙ্গ কুইল্যার আগ্রহে সমুদ্র থেকে পাহাড়ে অভিযান চালাবেন তাঁরা। সঙ্গে আছেন আর এক শিল্পী পলাশ গজেন্দ্র মহাপাত্র।
আজ, শনিবার দিঘার সৈকত থেকে রওনা হবেন তাঁরা। পথ প্রায় সাড়ে ন’কিলোমিটার। সব ঠিক থাকলে দার্জিলিং থেকে ফের দু’চাকার ভরসাতেই ফিরবেন তিন পরিবেশপ্রেমী। তিনজনই নন্দকুমারের বাসিন্দা। সকলেই শব্দ ও পরিবেশ দূষণ রোধে কাজ করছেন। এলাকায় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও গড়েছেন তাঁরা। তমলুক শহর ও নন্দকুমার পদযাত্রাও করেছেন জোরে মাইক বাজানো, এয়ার হর্নের বিরুদ্ধে। এ বার সেই সচেতনতা-বার্তা তাঁরা পৌঁছে দিতে চান রাজ্য জুড়ে।
কিন্তু এমন ভাবনা কেন?
গৌরাঙ্গের কথায়, ‘‘আমরা আধুনিক হচ্ছি। সেই জীবনযাপনে পরিবেশের দূষণও বাড়ছে নানা ভাবে। পরিবেশের স্বচ্ছতা রক্ষা ও শব্দ দূষণ রোধে আমাদের কী করা উচিত তা সকলকে জানাতেই এই অভিযান।’’
‘শব্দ দানব আর নয়, শান্তি ফিরুক বিশ্বময়’— বার্তা নিয়ে দিঘা থেকে নন্দকুমার, তমলুক, পাঁশকুড়া, ঘাটাল, আরামবাগ হয়ে বর্ধমান, শান্তিনিকেতন, শিলিগুড়ি হয়ে পৌঁছাবেন দার্জিলিং পাহাড়ে। যাওয়ার পথে বিভিন্ন জায়গায় থেমে তাঁরা মনীষীদের মূর্তিতে মাল্যদান করবেন। স্থানীয় মানুষকে বোঝাবেন শব্দ দূষণ রোধের প্রয়োজনীয়তা এবং কর্তব্য।
প্রতাপবাবু সাইকেল চালানোয় পটু। ১৯৯৬ সালে প্রায় তিন হাজার কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিয়েছিলেন। হলদিয়া থেকে কাঠমান্ডু পর্যন্ত বিশ্বশান্তির বার্তা নিয়ে গিয়েছিলেন সে বার। তাঁর কথায়, ‘‘এ বার দূষণ রোধের বার্তা। মানুষকে বোঝাতেই এতটা পাড়ি।’’ ২৮ দিনের যাত্রাপথে প্রতিদিন গড়ে ৯০ কিলোমিটার রাস্তা পার হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রাখছেন।
এ জন্য তিনটি আধুনিক সাইকেল কিনেছেন তাঁরা। গত কয়েক দিনে সাইকেল চালানো অভ্যাসও করেছেন। সম্প্রতি হলদিয়া-মেচেদা জাতীয় সড়ক ও মুম্বই রোড ধরে উলুবেড়িয়া পর্যন্ত মহড়া দিয়েছেন। গৌরাঙ্গ আশাবাদী, ‘মনে হয় কোনও অসুবিধা হবে না। ছোটবেলায় তো গ্রামের রাস্তায় সাইকেলই ছিল একমাত্র ভরসা। এখন আর চালানো হয় না। তাই একটু মহড়া দিয়ে নিলাম।’’ আশাবাদী পলাশও। তাঁর কথায়, ‘‘পাহাড়ে জঙ্গলে ঘুরেছি এর আগেও। কিন্তু এ ভাবে মানুষের জন্য কিছু করা হয়নি। আশা করি আমরা সফল হব। দূষণ রোধে মানুষ সচেতন হলেই পরিষ্কার হবে প্রকৃতি।’’