পুজোয় ঘুরে দাঁড়াচ্ছে গাড়ি-বাজারও। বিক্রি বাড়ল দু’চাকা, চার চাকার। খোঁজ নিল আনন্দবাজার
Two Wheelers

উৎসবে বাজার ভাল বাহনেরও

মেদিনীপুরেও এখন জিনিসপত্র চেনা করে মোটরবাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়ার মতো উদ্দাম মানুষের সংখ্যা খুব কম নয়। কেউ ইচ্ছে হলেই বাইকে করে কোলাঘাটের ধাবায় খেতে যান।

Advertisement

বরুণ দে

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০২২ ০৮:১৯
Share:

ঝাড়গ্রামের একটি শোরুমে বাইক দেখছেন ক্রেতা। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

করোনাপর্বে গাড়ি শিল্পে মন্দা দেখা দিয়েছিল। শুধু কলকাতা কিংবা বড় শহরগুলিতেই নয়, মেদিনীপুর-খড়্গপুরের মতো শহরেও গাড়ি বিক্রি কমেছিল। বণিকসভাগুলি মনে করিয়ে দিচ্ছে, এর আগে ২০০০ সালে এমন মন্দা দেখা গিয়েছিল। ছবিটা বদলাতে শুরু করেছে উৎসবের হাত ধরে। ঘুরে দাঁড়ানো শুরু গাড়ির বাজারও। বেড়েছে মোটরবাইক বিক্রি।

Advertisement

মেদিনীপুরেও এখন জিনিসপত্র চেনা করে মোটরবাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়ার মতো উদ্দাম মানুষের সংখ্যা খুব কম নয়। কেউ ইচ্ছে হলেই বাইকে করে কোলাঘাটের ধাবায় খেতে যান। কেউ আবার দু’চাকায় সওয়ার হয়ে বাঁকুড়া, পুরুলিয়াও ঘুরে আসেন। শহরে নতুন নতুন ব্র্যান্ডের বাইকও আসছে। পুজোর সময়ে নতুন বাইক কিনেছেন সৌম্যদীপ সরকার। সৌম্যদীপ বলছিলেন, ‘‘একটু আধুনিক একটা বাইক কিনলাম।’’ তিনি জুড়ছেন, ‘‘এমন এক- একটা ব্র্যান্ড আসছে, যার সঙ্গে আভিজাত্য, স্টাইল, আধুনিক প্রযুক্তি এবং পারফরম্যান্স- এই শব্দগুলো ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে।’’ তরুণ প্রজন্মের কাছে মোটরবাইক হল একটা নেশার মতো। কিছু বাইক আবার দেখনদারিতে চমক। লুকের দিক থেকেও অন্য রকম! বাজার যে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, সেটা একটা পরিসংখ্যানে চোখ বোলালেই স্পষ্ট হবে। জানা যাচ্ছে, মেদিনীপুর মহকুমায় ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর, ছ’মাসে বিক্রি হয়েছিল ১৬,৯৪৫টি বাইক। মাসে গড়ে ২,৮২৪টি। আর শুধু সেপ্টেম্বরে বিক্রি হয়েছিল ৩,৫৭৩টি মোটরবাইক। সেখানে ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর, এই সময়কালে বিক্রি হয়েছে ১৮,৩১৫টি মোটরবাইক। মাসে গড়ে ৩,০৫৩টি। আর শুধু সেপ্টেম্বরে বিক্রি হয়েছে ৩,৯২৬টি বাইক। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা পরিবহণ আধিকারিক অমিত দত্ত মানছেন, ‘‘এখন মেদিনীপুরেও গাড়ি বিক্রি বেড়েছে।’’ ২০১৮ সালের জানুয়ারি- অগস্টে বাইক বিক্রি হয়েছিল ২৯,৪৮০টি। মাসে গড়ে ৩,৬৮৫টি। ২০১৯ সালের জানুয়ারি-অগস্টে বাইক বিক্রি হয়েছিল ২৮,৮৯৫টি। মাসে গড়ে ৩,৬১১টি। মেদিনীপুর শহরে এখন আসছে নতুন ধাঁচের মোটরবাইকও। উৎসবের সময়ে গাড়ি কেনার স্বপ্নে বুঁদ হয়ে থাকেন যাঁরা, তাঁদের অনেকেই গাড়ির শোরুমমুখো হয়েছেন। চারচাকার ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক গাড়ি ছাড়াও দু’চাকার গাড়ির বাজারেও ছবিটা একই।

গত দু’বছর নানা ছাড়, সুবিধা, উপহার দিয়েও টানা যায়নি ক্রেতাদের। তবে করোনা পেরিয়ে এ বার পুজোয় বাইকের ব্যবসা ভালই হয়েছে বলে দাবি বিভিন্ন বাইক প্রস্তুতকারক সংস্থার শোরুমগুলির। খড়্গপুর শহরের ইন্দায় একাধিক সংস্থার মোটরবাইকের শোরুম রয়েছে। অধিকাংশ সংস্থার দাবি, বাইকের ইঞ্জিনে নানা পরিবর্তনে দাম বেড়েছে। তাতে মাঝারি দামের বাইক বেশি বিক্রি হয়েছে। মহিলাদের ক্ষেত্রে ঝোঁক দেখা গিয়েছে ইলেকট্রিক স্কুটারে। একটি মোটরবাইক সংস্থার খড়্গপুর শাখার সেলস ম্যানেজার সৌমিত্র শীল বলেন, ‘‘করোনার সময়ে আমাদের এই শোরুম খুলেছে। তবে ওই সময়ের পুজোর চেয়ে এ বার পুজোয় বাইক বিক্রি অনেকটা বেড়েছে। আমরা নানা ছাড় ও উপহার এই উৎসবের মরসুমে দিয়ে থাকি। তাতে ক্রেতারাও খুশি হয়েছেন। যে বিক্রি হয়েছে, তাতে আমরা সন্তুষ্ট।

Advertisement

কিছুটা ভিন্ন ছবি ঝাড়গ্রামে। ঝাড়গ্রাম শহরের জামদা এলাকার একটি শোরুমের সেলস ইনচার্জ জয় সিংহ বলছেন, ‘‘করোনা আবহে দু’বছর ভাল ব্যবসা হয়েছিল। ওই সময়ে যোগাযোগ সমস্যার কারণে অনেকেই বাইক কিনেছিলেন। এখন বাইকের তুলনায় চার চাকার গাড়ির দিকে ঝুঁকছেন ক্রেতারা। গত বছর দেড় হাজার বাইক বিক্রি হয়েছিল। এ বার বছর শেষ হতে চলল, এখনও পর্যন্ত ছ’শো বাইক বিক্রি হয়েছে।’’ অরণ্যশহরের পুরাতন ঝাড়গ্রামের একটি শোরুমের মালিক সুশান্ত সিংহ বলছেন, ‘‘পুজোর আগে সেপ্টেম্বরে মাসে ৩৫টি বাইক বিক্রি হয়েছে। আমাদের এখানে ১০০ এবং ১২৫ সিসির বাইক নেই। তা ছাড়া স্কুটির দামও ১ লক্ষ টাকা। তাই এ বার বাইক বিক্রির বাজার গত বারের তুলনায় কিছুটা কম।’’

(তথ্য সহায়তা: দেবমাল্য বাগচী, কিংশুক গুপ্ত)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement