ফাইল চিত্র।
নবম-দশমে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগের আবহে পশ্চিম মেদিনীপুরের দু’শোরও বেশি শিক্ষক সম্পর্কে তথ্য-তালাশ শুরু করেছে শিক্ষা দফতর। কলকাতা হাই কোর্টে চলা অবৈধ নিয়োগ সংক্রান্ত মামলার প্রেক্ষিতেই এই পদক্ষেপ। বিজেপিও দাবি তুলেছে, জেলায় ‘ভুয়ো’ শিক্ষকের সংখ্যা দুই শতাধিক।
বৃহস্পতিবার জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি, পেশায় স্কুল শিক্ষক শঙ্কর গুছাইত ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ২০১ জন ভুয়ো শিক্ষকের তালিকা প্রকাশ। অবিলম্বে শিক্ষামন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চাই।’ জেলা শিক্ষা দফতর সূত্রেও খবর, একটি তালিকা জেলায় এসেছে ঠিকই। সেখানে ২০১ জন শিক্ষকের নামও রয়েছে। তবে সেটি প্রকাশিত হয়নি। দফতরের অন্দরে চালাচালি হয়েছে।
জানা যাচ্ছে, ওই শিক্ষকেরা যে সব স্কুলে কর্মরত, সেখানকার প্রধান শিক্ষকদের কাছে বুধবারই চিঠি পাঠিয়েছে জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) চাপেশ্বর সর্দারের দফতর। জানতে চাওয়া হয়েছে, সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের নাম, রোল নম্বর (এসএসসি- র), তাঁর বিষয়, স্কুলের নাম, স্কুলে যোগ দিয়েছেন কি না, এখনও পর্যন্ত স্কুলে কাজে রয়েছেন কি না, বেতন পাচ্ছেন কি না প্রভৃতি। চাপেশ্বর মানছেন, ‘‘সংশ্লিষ্ট স্কুলগুলির থেকে ওই শিক্ষকদের সম্পর্কে তথ্য চাওয়া হয়েছে। ওই তথ্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাতে হবে।’’
নিয়োগ সংক্রান্ত মামলার প্রেক্ষিতেই যে এই তথ্য-তালাশ, তা স্পষ্ট করা হয়েছে স্কুলে পাঠানো চিঠিতে। জেলার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলছেন, ‘‘শিক্ষা দফতরের চিঠি পেয়েছি। ওই ২০১ জনের মধ্যে একজন আমার স্কুলে ছিলেন।’’ তিনি জানাচ্ছেন, ‘‘ওই শিক্ষক ২০১৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর আমার স্কুলে যোগদান করেন। তারপর ২০২০ সালের ৯ ডিসেম্বর বদলি নিয়ে মুর্শিদাবাদে চলে যান। শিক্ষা দফতরে জানিয়ে দিচ্ছি।’’
প্রাথমিকে অবৈধ নিয়োগের মামলার প্রেক্ষিতে জেলা ভিত্তিক বরখাস্তের যে তালিকা প্রকাশ হয়েছিল, সেখানে পশ্চিম মেদিনীপুরের কারও নাম ছিল না। পরে অবশ্য ওই বরখাস্তের প্রক্রিয়ায় স্থগিতাদেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এখন চর্চায় নবম-দশমে ‘ভুয়ো’ শিক্ষক নিয়োগ। হাই কোর্টে এসএসসি জানিয়েছিল, ২০১৬ সালে নবম-দশমে ভুয়ো সুপারিশপত্র দেওয়া হয়েছে, এমন ১৮৩জন শিক্ষকের নাম তারা পেয়েছে। তবে শুনানিতে সিবিআই জানিয়েছে, ভুয়ো সুপারিশপত্র দেওয়া হয়েছে ৯৫২জনকে। এই পরিস্থিতিতে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা শিক্ষা দফতরে যে ২০১ জন শিক্ষক-শিক্ষিকার নামের তালিকা এসেছে, বিজেপির দাবি— তাঁরাই ‘ভুয়ো’ শিক্ষক।
জেলা বিজেপির সহ- সভাপতি শঙ্করের কথায়, ‘‘এটা শিক্ষা জগতের লজ্জা।’’ কিন্তু ওই তালিকা তো প্রকাশিত নয়? আর তালিকায় নাম থাকা সকলেই যে ‘ভুয়ো’ শিক্ষক, চিঠিতে এমন উল্লেখও নেই? শঙ্করের অবশ্য দাবি, ‘‘ভুয়ো শিক্ষকের তালিকাই এসেছে।’’ শিক্ষানুরাগী ঐক্যমঞ্চের রাজ্য সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারীরও বলছেন, ‘‘শিক্ষা-দুর্নীতিতে যুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক। কোনওভাবেই যোগ্য চাকরিপ্রার্থীরা যেন বঞ্চিত না হন।’’ এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুরের কো-অর্ডিনেটর অজিত মাইতির বক্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী তো আগেই বলেছেন, লাখ খানেক চাকরির মধ্যে কয়েকটা ভুল হতে পারে। ভুল সংশোধনের সুযোগ দিতে হবে।’’