manas bhunia

অভিষেকের ছবি বিলি মানসের

তিনি রাজ্য রাজনীতির মুখ। এক সময়ে তিনি ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতিও। কংগ্রেসে থেকেও হয়েছিলেন তৃণমূলের মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য।

Advertisement

দেবমাল্য বাগচী

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০২২ ০৮:৫৮
Share:

সবংয়ের একটি সভায় অভিষেকের ছবি বিলি। নিজস্ব চিত্র

দলকে ভালবাসতে গেলে নেতা-নেত্রীকেও ভালবাসতে হবে। সে ভালবাসা প্রকাশ পাবে পার্টি কার্যালয়ে ঝুলিয়ে রাখা নেতা-নেত্রীর ছবিতে। আর কেউ নন, এমন মত মন্ত্রী মানস ভুঁইয়ার। তাই আপাতত তিনি ব্যস্ত তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি বিলিতে।

Advertisement

তিনি রাজ্য রাজনীতির মুখ। এক সময়ে তিনি ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতিও। কংগ্রেসে থেকেও হয়েছিলেন তৃণমূলের মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। পরে দল বদলে তৃণমূলে যোগ দিয়ে পেয়েছিলেন রাজ্যসভার সাংসদ পদ। তাঁর স্ত্রী হয়েছিলেন তৃণমূল বিধায়ক। গত বিধানসভা নির্বাচনের পরে ফের হয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী। এতদিন তাঁর মুখে ছিল তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জয়ধ্বনি। এ বার মঞ্চ থেকে অভিষেকের ছবি বিলি করার কাজে নামলেন সেই মন্ত্রী তথা ‘তৃণমূল কর্মী’ মানস ভুঁইয়া। নিজের বিধানসভা কেন্দ্র সবংয়ের ৩০৬টি বুথে স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক মানস এই ছবি বিলির কাজে নেমেছেন বলে জানা গিয়েছে। সম্প্রতি সবংয়ের ব্লক তৃণমূল কার্যালয়ে এক কর্মী সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল। ওই মঞ্চেই প্রথম অভিষেকের বাঁধানো ছবি তুলে দিতে দেখা যায় মানসকে। এমনকি প্রতিটি বুথ অফিসেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবির সঙ্গেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বাঁধানো ছবি রাখার নির্দেশও দেন তিনি।

কেন এ কাজ করছেন তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে মানস বলছেন, ‘‘দলকে ভালবাসতে গেলে দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালবাসা থাকতে হয়। আমাদের দলের সর্বোচ্চ নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর ওঁর (মমতা) সেনাপতি যুব সমাজের আইকন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আমাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আমরা তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, প্রতিটি দলীয় কার্যালয়ে নেত্রীর ছবির কাছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি থাকবে।” রাজনৈতিক কারবারিদের একাংশের মত, ছবি বিলি বিষয়টি আদতে প্রতীকী। আসলে এ ভাবে মানস চাইছেন, মমতার উত্তরসূরি হিসেবে অভিষেককে ‘প্রতিষ্ঠা’ করতে। যদিও তৃণমূলের অন্দরেই কেউ কেউ বলছেন, ‘‘এমন প্রয়াস অতিরঞ্জিত।’’ কারণ, নেত্রীর পর যদি কেউ তৃণমূলে থেকে থাকেন তিনি অভিষেকই— বিষয়টি ইতিমধ্যেই প্রতিষ্ঠিত। ছবি বিলি করে প্রবীণ মন্ত্রী নিজেকে লঘু করে তুলছেন বলে মনে করছেন তৃণমূল কর্মীদের একাংশ।

Advertisement

তৃণমূল সূত্রের খবর, প্রথম দিনেই সবং বিধানসভার তৃণমূলের ১৬ জন অঞ্চল সভাপতির হাতে অভিষেকের ছবি তুলে দিয়েছেন মানস। এমনকি আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই বিধানসভার ৩০৬টি বুথের তৃণমূল কার্যালয়ের জন্য তিনি অভিষেকের ছবি বিলি করবেন বলে তৃণমূল সূত্রে খবর। বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রী মানস বলছেন, “আমি ঠিক করেছি, আমাদের সবং বিধানসভা এলাকার প্রতিটি বুথে অফিস গড়ে নেত্রীর ছবির পাশে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি থাকবে। ইতিমধ্যে আমি আমাদের ১৬টি অঞ্চলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই বাঁধানো ছবি তুলে দিয়েছি। পরে প্রতিটি অঞ্চলে সভা করে বুথের অফিসের জন্য ওই ছবি তুলে দেব।’’

মানসের এই অভিষেক ‘বন্দনা’ নতুন নয়! ২০১৬ সালে কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে আসার পর থেকেই মমতার পাশাপাশি অভিষেকের বন্দনা শোনা যায় রাজ্যের এই প্রবীণ নেতার মুখে। রাজ্য রাজনীতির বহু উত্থান-পতনের সাক্ষী মানস। কংগ্রেসে থাকাকালীন তিনি ছিলেন প্রথম সারির নেতা। তৃণমূলেও এখন যথেষ্ট গুরুত্ব বেড়েছে তাঁর। রাজ্যের জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রীর পাশাপাশি পরিবেশ মন্ত্রীর বাড়তি দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় সাংগঠনিক ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন মানস। গোয়া থেকে মেঘালয়ে সংগঠন মজবুত করতেও তাঁর উপর আস্থা রেখেছে দল।

দলের ভরসা বাড়ছে তাঁর উপর। আর তিনি বলছেন, ‘‘ভরসা থাকুক মমতা-অভিষেকে।’’ কখনও মনে হয় না ব্লকের বুথ কার্যালয়ে আপনার ছবি থাকুক? মানসের জবাব, ‘‘না।’’ সঙ্গে সংযোজন, “আমি মনে করি আমি ও গীতা ভুঁইয়া দলের কর্মী মাত্র।”

ভালবাসা মানে আর্চিস গ্যালারি! ভালবাসা মানে পার্টি অফিসের দেওয়ালে ঝুলতে থাকা মমতা-অভিষেকের ছবি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement