রক্ত জোগাড়ের পর স্বস্তিতে শেখর সেনগুপ্ত। — নিজস্ব চিত্র।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দিদির রক্তের প্রয়োজন।
শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টায় তমলুক জেলা হাসপাতাল থেকে ফোন পেয়ে আত্মারাম খাঁচাছাড়া অবস্থা পাঁশকুড়ার শেখর সেনগুপ্তর। ধর্মঘটের দিনে পাঁশকুড়া থেকে ৩০ কিলোমিটার উজিয়ে কী ভাবে তমলুকে যাবেন, তা ভেবেই ঘামতে শুরু করলেন শেখরবাবু। তখনই তাঁর মনে পড়ল, বৃহস্পতিবার হাসপাতাল থেকে ফেরার পথে তিনি শুনেছিলেন বাস মালিকরা আশ্বাস দিচ্ছেন ধর্মঘটে বাস চলবে। সেই সাহসে ভর করেই নেমে পড়লেন পথে।
প্রথমে পাঁশকুড়া থেকে ট্রেনে মেচেদা। সেখান থেকে দ্রুত পেয়ে গেলেন বাসও। সাড়ে ১১টা নাগাদ শেখরবাবু তমলুক হাসপাতালে কোনও ঝক্কি ছাড়াই পৌঁছে গেলেন। হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্কের সামনে দাঁড়িয়ে শেখরবাবু বলছেন, ‘‘গতকাল বাড়ি ফেরার পথে শুনেছিলাম, মেচেদা বাসস্ট্যান্ড বাস মালিক সংগঠন আজ বাস চালানোর ঘোষণা করছিলেন। কিছুটা সেই সাহসেই আমি বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েছিলাম। হাসপাতালে আসতে কোনও সমস্যাই হয়নি।’’
এ দিন জেলার প্রায় সর্বত্র রাস্তায় বাস ছিল পর্যাপ্ত। তবে বেসরকারি বাস ছিল তুলনায় কম। ফলে অন্যদিনের মতোই তমলুক জেলা হাসপাতালের বহির্বিভাগে রোগীদের ভিড় ছিল। জেলার বিভিন্ন সরকারি অফিসেও কর্মীদের উপস্থিতির হার ছিল স্বাভাবিক। এ দিন তমলুক শহরের মানিকতলায় মেচেদা-হলদিয়া রুটের বাস অবরোধের চেষ্টা করলে পুলিশ ছ’জন সিপিএম কর্মীকে গ্রেফতার করে। নন্দকুমার থেকেও ৯জনকে ধরা হয়। সকালে তমলুক প্রধান ডাকঘরের প্রবেশপথ আটকে এসইউসি কর্মীদের বিক্ষোভে প্রথমে কাজ ব্যাহত হয়। পরে অবশ্য ফের কাজ শুরু হয়। মেচেদার রামচন্দ্রপুর হাইস্কুলের প্রবেশপথ আটকে বাম সমর্থকরা ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ঢুকতে বাধা দেয় বলে অভিযোগ। পুলিশের হস্তক্ষেপে স্কুল চালু হয়।
ধর্মঘটের বিরুদ্ধে জেলার বিভিন্ন এলাকায় মিছিল করে তৃণমূল সমর্থকরাও। তমলুক শহরে তৃণমূল কাউন্সিলর চঞ্চল খাঁড়ার নেতৃত্বে বাইক মিছিল হয়। পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, ‘‘ধর্মঘটের সমর্থনে তমলুক ও নন্দকুমারে সড়ক অবরোধের জন্য ১৫জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ছাড়া জেলার কোথাও কোনও গোলামালের ঘটনা ঘটেনি।’’