রাস্তার ধার থেকে সরানো হচ্ছে নির্মাণসামগ্রী। রবিবার। নিজস্ব চিত্র
বার বার দুর্ঘটনা ঘটেছে এর জন্য। তবু জাতীয় সড়ক থেকে রাজ্য সড়কের ধারে নির্মাণ সামগ্রী (ইট-বালি, স্টোনচিপস) রাখার বিরাম নেই। রাস্তা থেকে ওই সব নির্মাণ সামগ্রী সরাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে বার বার পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ উঠেছে। মাঝেমধ্যে পুলিশের অভিযান হলেও তা যে যথেষ্ট নয়, তারও প্রমাণ মিলেছে।
সড়ক দুর্ঘটনা রোধে রাজ্য সরকারের তরফে ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ কর্মসূচি চালু হয়েছে কয়েক বছর আগেই। মোটরসাইকেল আরোহীদের হেলমেট, গাড়ি চালকদের ‘সিট বেল্ট’ পরা বাধ্যতামূলক করা সহ বিভিন্ন সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশ-প্রশাসনের তরফে পদক্ষেপও করা হচ্ছে। কিন্তু জাতীয় বা রাজ্য সড়কের ধারে নির্মাণসামগ্রী রেখে দেওয়ার প্রবণতা এখনও বন্ধ করা যায়নি বলে অভিযোগ। কিন্তু দিঘায় শিল্প সম্মেলন উপলক্ষে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জেলা সফররের আগে দিঘা-নন্দকুমার ১১৬ বি জাতীয় সড়ক ও হলদিয়া-মেচেদা ৪১ জাতীয় সড়ক সহ জেলার রাজ্য সড়কগুলির ধার থেকে ইট-বালি, পাথরকুচি সহ বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রী সরানোর অভিযানে এখন তৎপর পুলিশ-প্রশাসন। আগামী ১১ ও ১২ ডিসেম্বর দিঘায় শিল্প সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও দেশ-বিদেশের শিল্পপতিরা যোগ দেবেন। এ ছাড়াও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতরের মন্ত্রী ও উচ্চপদস্থ কর্তারা সম্মেলনে যোগ দিতে দিঘায় আসবেন।
প্রশাসন সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রী ও বিভিন্ন শিল্পসংস্থার কর্তারা হেলিকপ্টারে দিঘায় আসবেন। কিন্তু রাজ্যের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী ও সরকারের উচ্চপদস্থ কর্তারা সড়ক পথে কলকাতা থেকে দিঘায় পৌঁছবেন। তাই দিঘা যাওয়ার পথে জেলার প্রবেশদ্বার হিসেবে চিহ্নিত কোলাঘাটে রূপনারায়ণ সেতু থেকে জাতীয় সড়ক ধরে নন্দকুমার হয়ে দিঘা পর্যন্ত পুরো রাস্তায় যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর জন্য ওই সড়ক পথের দু’ধারে ফেলে রাখা বালি, পাথরকুচি-সহ বিভিন্ন সামগ্রী সরিয়ে ফেলার জন্য সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ ও ব্লক প্রশাসনের তরফে অভিযান চালানো হচ্ছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, গত শুক্রবার থেকে কোলাঘাট, তমলুক, নন্দকুমার, চণ্ডীপুর, মারিশদা, কাঁথি, রামনগর থানার পুলিশ সড়কের ধারে রাখা বালি, পাথর-সহ বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রী সরানোর অভিযানে নেমেছে। রবিবারেও অভিযান চলেছে। এছাড়াও সড়কের বিভিন্ন জায়গায় গর্ত সহ বেহাল অংশ মেরামতি করা হয়েছে। যদিও নন্দকুমার-দিঘা জাতীয় সড়কে চণ্ডীপুর বাজারে বাসস্ট্যান্ডের কাছে রাস্তার ধারে ফুটপাথ দখল করে গত ২৪ নভেম্বর অনুষ্ঠিত এক সমাবেশের তোরণ রবিবার পর্যন্ত এখনও সরানো হয়নি। ব্যবসায়ীদের একাংশের অভিযোগ, সড়কের ধারে অস্থায়ী দোকানও বসতে দেওয়া হচ্ছে না। অথচ এই ব্যস্ত বাজারে বাসস্ট্যান্ডের কাছে রাস্তার দু’পাশ দখল করে তৈরি তোরণ তিন সপ্তাহ ধরে রয়েছে। ফলে বাজারের কাছে সড়কে পথচারী ও সাইকেল চালকদের যাতায়াতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
শিল্প সম্মেলনের দিকে লক্ষ্য রেখে সড়কের ধার থেকে নির্মাণসামগ্রী সরাতে অভিযানের কথা অবশ্য মানতে চাননি পুলিশ। জেলা পুলিশ ট্রাফিক আধিকারিক প্রদীপকুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘সড়ক নিরাপত্তা (রোড সেফটি) নিয়ে সম্প্রতি জেলায় প্রশাসনিক বৈঠকে আলোচনা হয়েছিল। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জাতীয় ও রাজ্য সড়ক সহ বিভিন্ন রাস্তায় অভিযান চালানো হচ্ছে। চণ্ডীপুর বাজারের কাছে তোরণের বিষয়টি দেখা হচ্ছে।’’
তবে শিল্প সম্মেলন শেষ হয়ে যাওয়ার পরে ফের দিঘা-নন্দকুমার জাতীয় সড়কের দু’পাশ দখলের পুরনো ছবি ফের ফেরে কিনা সেটাই দেখার!