বিরবাহা হাঁসদার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঝাড়গ্রামে বুধবার। ছবি: দেবরাজ ঘোষ
পঞ্চায়েতগুলির বোর্ড গঠনের ঠিক আগে জেলায় ঘুরে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঝাড়গ্রামে দু’দিন থাকলেন। কিন্তু ডাক পেলেন না জেলা তৃণমূলের শীর্ষ নেতা-নেত্রীরা। স্বভাবতই হতাশ তাঁরা। জেলা তৃণমূলের এক নেতা বলছেন, ‘‘পঞ্চায়েত ভোটে বিপুল জয়ের পর আশা ছিল, নেত্রী ডেকে হয়তো কিছু বার্তা দেবেন। লোকসভা ভোটের আগে পরবর্তী কর্মসূচির নিদান দেবেন। তাই একটু হতাশ তো লাগছেই।’’
মুখ্যমন্ত্রী আলাদা করে কাউকে না ডাকলেও মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদাকে মঙ্গলবার টুরিস্ট কমপ্লেক্সে আদিবাসী সামাজিক সংগঠনের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর পাশে দেখা গিয়েছিল। আর বুধবার আদিবাসী দিবসের মঞ্চে জেলা সভাপতি দুলাল মুর্মুর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীকে কথা বলতে দেখা যায়।
সূত্রের খবর, পঞ্চায়েতের বোর্ড সুষ্ঠুভাবে যাতে গঠন হয় সেটা দুলালকে দেখতে বলেছেন নেত্রী। দুলাল বলছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী ব্যস্ততার মধ্যে সরকারি কর্মসূচিতে এসেছিলেন। বুধবার রাত্রিযাপনের কথা থাকলেও সভা সেরে দুপুর দু’টো নাগাদ ফিরে যান তিনি। তাই হয়তো দলীয় বৈঠকের সময় হয়নি।’’ মন্ত্রী বিরবাহাও বলছেন, ‘‘ব্যস্ততার জন্য মুখ্যমন্ত্রী সভা সেরে ফিরে যান। দলের সাংগঠনিক বিষয়ে কোনও কথা হয়নি। তবে মুখ্যমন্ত্রী মানুষের কাজ করতে বলেছেন।’’
জেলার এক প্রবীণ নেতা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, গত মে মাসে জেলায় নবজোয়ার কর্মসূচিতে এসে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, তিনি ফের আসবেন। অভিষেক ঝাড়গ্রামে বাড়তি নজর দিচ্ছেন। দলের তরুণ প্রজন্মকে আগামী দিনে তিনি গুরু দায়িত্বও দিতে পারেন বলে সূত্রের খবর। তৃণমূলের পরামর্শদাতা সংস্থার সদস্যরাও নিরন্তর জেলায় দলের সাংগঠনিক অবস্থা ও নেতা-নেত্রীদের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করছেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষদের অনুমান, দলের নিয়ম পাল্টেছে। আগাম কর্মসূচি ছাড়া শীর্ষস্তরে দলীয় বৈঠকও এখন হয় না।
তাছাড়া, একাংশ নেতা পঞ্চায়েত বা দলের পদের জন্য দরবার করতে পারেন। অন্য দিকে, অভিষেকের দফতর থেকে যোগ্যতার মাপকাঠিতে পদ বন্টনের কথা বলা হচ্ছে। অনুমান, এমন সব কারণেই মুখ্যমন্ত্রী জেলার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক এড়িয়েছেন। তবে পঞ্চায়েতে বড় জয় পেলেও জেলায় গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জেরবার তৃণমূল। লোকসভার আগে তা নিয়ে বার্তা দেবেন নেত্রী, তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের এমন আশা ছিল। এ যাত্রায় অবশ্য তা হল না। তবে আদিবাসী ও কুড়মিদের নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যে ভারসাম্য বজায় রেখে চলতে চান সেটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন মমতা। কোনও সমস্যা বা দাবি নিয়ে প্রাথমিক আলোচনার জন্য মন্ত্রী বিরবাহার সঙ্গে উভয় সম্প্রদায়কেই যোগাযোগ করতে বলেছেন। ২০২১ সালে বিরবাহা মন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই ক্রমাগত দলে তাঁর গুরুত্ব বেড়েছে। মুখ্যমন্ত্রীও যে তাঁকে স্নেহ করেন, সেটা সরকারি ও দলীয় কর্মসূচিতে বোঝাও যায়। এ দিনও আদিবাসী দিবসের সভাস্থলে মুখ্যমন্ত্রী পৌঁছতেই তাঁকে আদিবাসী প্রথার পাঞ্চি শাড়ি জড়িয়ে দেন মন্ত্রী বিরবাহা। তারপর এই জঙ্গলকন্যাকে পাশে নিয়েই আদিবাসী নৃত্যদলের মহিলাদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী নাচের তালে পা মিলিয়েছেন।
গত ১৫ নভেম্বর বিরসা মুন্ডার জন্মদিন উপলক্ষে বেলপাহাড়ির সাহাড়ির সরকারি সভা থেকে ঝাড়গ্রাম রিপোটার্স ক্লাবের জন্য জেলা সংবাদভবনের উদ্বোধন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বুধবার সভা সেরে ফেরার পথে তাঁর সেখানে যাওয়ার কথা থাকলেও সময়াভাবে যেতে পারেননি মুখ্যমন্ত্রী। তবে মুখ্যমন্ত্রী ফিরে যাওয়ার পরই তাঁর নির্দেশে সংবাদ ভবন যান মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা। সঙ্গে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ আদিবাসী উন্নয়ন ও সংস্কৃতি পর্ষদের সদস্য শিবশঙ্কর সরেন, আইএনটিটিইউসি-র জেলা সহ-সভাপতি সৌমেন আচার্য, টিএমসিপির জেলা সভাপতি বিশ্বনাথ মাহাতো।