—ফাইল চিত্র
বাম আমলে তৎকালীন মহকুমাশাসক আর এ ইজরায়েল ঝাড়গ্রাম মহকুমায় চালু করেছিলেন ‘দুয়ারে প্রশাসন’। বাম সরকার অবশ্য ইজরায়েলের সেই উদ্যোগকে সেভাবে মান্যতা দেয়নি। তবে মমতা-সরকারের ‘দুয়ারে সরকার’ মনে করিয়ে দিচ্ছে জঙ্গলমহলের পুরনো প্রশাসক ইজরায়েলের সেই কর্মসূচির কথা। গত ২৬ নভেম্বর রাজ্য সরকার এক নির্দেশিকা জারি করে জানিয়েছে, রাজ্যের পঞ্চায়েত ও পুর-এলাকায় চালু হচ্ছে ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচি।
ওই কর্মসূচি ১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে। চারটি পর্যায়ে ওই কর্মসূচি চলবে আগামী বছরের ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত। এর মাধ্যমে বিভিন্ন দফতরের আধিকারিকেরা এলাকায় এলাকায় শিবির করে সরকারি দশটি প্রকল্পের পরিষেবা সরাসরি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন। প্রতিটি ব্লক, প্রতিটি পঞ্চায়েত এবং পুর-এলাকায় ওয়ার্ড-ভিত্তিক ওই কর্মসূচি হবে।
প্রশাসন সূত্রে খবর, প্রথম পর্যায়ে শিবির করে আবেদনপত্র নেওয়া হবে। সে সব পরিষেবা ‘অন দ্য স্পট’ দেওয়া সম্ভব, সেগুলি তৎক্ষণাৎ দেওয়া হবে। যে সব পরিষেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে সরকারি স্তরে খোঁজখবর ও আনুসঙ্গিক প্রক্রিয়া থাকে, সেগুলির জন্য পরবর্তী সময়ে ফের শিবির হবে। খাদ্যসাথী, স্বাস্থ্যসাথী, জাতিগত শংসাপত্র, শিক্ষাশ্রী, জয় জোহার, তফসিলি বন্ধু, কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, ঐক্যশ্রী ও একশো দিনের কাজ— এই দশটি প্রকল্পের পরিষেবা মিলবে শিবির থেকে।
বাম আমলে পশ্চিম মেদিনীপুরের ঝাড়গ্রাম মহকুমায় মাওবাদী কার্যকলাপ লেগেই থাকতো। হামেশাই ঘটত খুন-সন্ত্রাস-নাশকতার ঘটনা। এলাকাবাসীর বঞ্চনাকে হাতিয়ার করে প্রত্যন্ত এলাকায় জনভিত্তি গড়ে তুলেছিল মাওবাদীরা। তৃণমূল সরকারের আমলে ২০১৭ সালে ঝাড়গ্রাম মহকুমাটি পৃথক জেলা হয়।
২০০৬ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ঝাড়গ্রামের মহকুমাশাসক ছিলেন আর এ ইজরায়েল। সেই সময়ে তিনিই প্রথম চালু করেছিলেন ‘দুয়ারে প্রশাসন’। বিভিন্ন দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে প্রত্যন্ত এলাকায় নিজে যেতেন ইজরায়েল। সেখনে সরাসরি সরকারি পরিষেবা তুলে দিতেন। এমন ভূমিকায় রীতিমতো জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। ২০০৮ সালে পশ্চিম মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলাশাসক হয়ে যান ইজরায়েল। তারপরে বন্ধ হয়ে যায় ওই কর্মসূচি। অতিরিক্ত জেলাশাসক হিসেবে সেই সময়ে মাওবাদী মদতপুষ্ট জনসাধারণের কমিটির সঙ্গে প্রশাসনের যোগ সূত্র হিসেবে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করেছিলেন ওই আইএএস অফিসার। কিন্তু ২০০৯ সালের মার্চে আচমকা চাকরি ছেড়ে দিয়ে চেন্নাইয়ে ফিরে আইএএস কোচিং অ্যাকাডেমি চালু করেন।
মমতা-সরকারের এমন উদ্যোগের কথা শুনে চেন্নাই থেকে ফোনে তিনি বলেন, ‘‘আমি মহকুমাশাসক থাকাকালীন ঝাড়গ্রাম মহকুমার মানুষের কাছে সরাসরি পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। সেটা ছিল ‘দুয়ারে প্রশাসন’। এখন আরও বড় আকারে সারা রাজ্যে এমন কর্মসূচি হবে জেনে খুব ভাল লাগছে।’’