মঞ্চে আলোচনায় মমতা ও ছত্রধর। নিজস্ব চিত্র
চেয়েছিলেন ছত্রধর মাহাতোর নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে। আর তা করতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যা বললেন, তাতে দলের অন্দরে তৈরি হল নতুন বিতর্ক। বিরোধীরাও বলতে শুরু করলেন, এতদিনে ঘুরিয়ে তাদের অভিযোগেই সিলমোহর দিলেন তৃণমূল নেত্রী।
সোমবার মেদিনীপুরের দলীয় জনসভায় তৃণমূল নেত্রী মমতা দাবি করেন, ২০০৮ সালে ছত্রধর ছিলেন দলের লালগড় ব্লক সভাপতি। যদিও দলের কর্মীদের একাংশ মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ছত্রধর নন। ২০০৮ সালে লালগড় ব্লক তৃণমূলের সভাপতি ছিলেন বর্ষীয়ান নেতা বনবিহারী রায়। বনবিহারী এখন ‘হাম’ পার্টিতে যোগ দিয়েছেন। মমতার এ দিনের দাবি প্রসঙ্গে বনবিহারী বলেন, ‘‘১৯৯৮ সাল থেকে দলের সংগঠন করেছিলাম। তখন থেকেই ব্লক সভাপতি ছিলাম এলাকার সকলেই জানেন। মমতা যে সময়ের কথা বলছেন, তখনও আমি ব্লক সভাপতি।’’ ওই সময়ে কি তিনি ব্লক সম্পাদক ছিলেন? বিতর্ক এড়িয়ে ছত্রধরের জবাব, ‘‘নেত্রীর বক্তব্যই চূড়ান্ত। এ বিষয়ে আমি কোনও মন্তব্য করব না।’’
জনসাধারণের কমিটির প্রাক্তন নেতা ছত্রধর এখন তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক। আগামী বিধানসভা ভোটে জঙ্গলমহলে তাঁকেই মুখ করেছে শাসক দল। তবে তৃণমূল সূত্রের খবর, ছত্রধরের নেতৃত্ব মেনে নিতে যে দলের অন্দরে অনেকের মধ্যে দ্বিধা রয়েছে সে খবর পৌঁছেছে মমতার কানে। তাই মেদিনীপুরের জনসভায় ছত্রধরকে ডেকে নিয়েছিলেন তিনি। এ দিন ছত্রধরকে পাশে নিয়ে মমতা বলেন, ‘‘আমরা কখনও অতীতকে ভুলি না। এই জঙ্গলমহলে যে আন্দোলনটা শুরু হয়েছিল, ওকে তো ২০০৮ সালে যখন গ্রেফতার করা হয়েছিল, মাওবাদী তকমা দিয়ে গ্রেফতার করেছিল। কিন্তু অরিজিনালি তখন ও তৃণমূলের ব্লক সভাপতি ছিল।’’
ছত্রধরের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে মমতা ফিরেছেন অতীতে। তিনি ছত্রধর প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘‘দীর্ঘদিন আমরা আন্দোলন করেছি একসাথে।’’ তৃণমূল নেত্রীর এই মন্তব্যের জন্য কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেছেন জনসাধারণের কমিটির প্রাক্তন নেতা। সভার পরে ছত্রধর বলেছেন, ‘‘নেত্রী যে পুরনো কথা এখনও মনে রেখেছেন, তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। ওনার নির্দেশমতোই কাজ করব।’’ মমতার অতীতের স্মৃতিচারণ ধরেই সমালোচনায় সরব হয়েছেন বিরোধীরা। বিজেপি-র ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি সুখময় শতপথী বলেন, ‘‘ওই সময়ে আমারা জানতাম লালগড় ব্লক তৃণমূলের সভাপতি ছিলেন বনবিহারী রায়। কিন্তু এদিন মমতা ছত্রধরকে ওই সময়ের ব্লক সভাপতি বলে দাবি করেছেন। এর থেকেই স্পষ্ট ওই সময়ে মাওবাদী ও তৃণমূল একযোগে জঙ্গলমহলকে অশান্ত করেছিল।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক পুলিনবিহারী বাস্কে বলেন, ‘‘আমরা বহুদিন থেকে বলছি, তৃণমূল-মাওবাদী, জনসাধারণের কমিটি একসঙ্গে মিলে সেসময়ে জঙ্গলমহলে অশান্তি করত। মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ এতদিনে উনি কার্যত ওই কথাটা স্বীকার করে নিলেন।’’
শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়ে জল্পনার মাঝেই তৃণমূল জঙ্গলমহলের নেতা হিসেবে তুলে এনেছে ছত্রধরকে। এবার তাঁর নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে নেত্রী ফিরলেন অতীতে।