ঝাড়গ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
এসএসসি দুর্নীতি মামলা নিয়ে সরাসরি মন্তব্য না করলেও, ঝাড়গ্রামের জনসভা থেকে বাম আমলকে বিঁধলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতার অভিযোগ, বাম আমলে চাকরি হত চিরকুট দিয়ে। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে ব্যবহার করে বিজেপি ‘তুঘলকি কায়দা’য় দেশ চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন মমতা। একই সঙ্গে সতর্ক করেছেন তৃণমূল নেতা-কর্মীদেরও।
ঘটনাচক্রে, বুধবার রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে এসএসসি দুর্নীতি মামলা নিয়ে বেশ কিছু ক্ষণ জিজ্ঞাসা করেছে সিবিআই। তৃণমূলের আর এক প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীকে তলব করেছে তারা। এই আবহে বৃহস্পতিবার ঝাড়গ্রামে গিয়ে মমতা বলেন, ‘‘বিজেপি আজ দেশে তুঘলকি রাজত্ব চালাচ্ছে কয়েকটি কেন্দ্রীয় সংস্থা দিয়ে। প্রত্যেকের সমস্ত নাগরিক অধিকার, স্বাধীনতার অধিকার খর্ব করে দেওয়া হচ্ছে। দেশের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান বিজেপি দখল করেছে।’’ এই সূত্রেই তিনি তুলে আনেন বাম আমলের কথা। বলেন, ‘‘আগে একটা চিরকুট দিয়ে চাকরি হত। বদলি হত। সিপিএমের ৩৪ বছরে আমি অনেক খোঁজ নিয়েছি। আস্তে আস্তে ‘চ্যাপ্টার ওপেন’ করব। এত দিন ভদ্রতা করে এসেছি।’’ এই সূত্রেই মমতা বলেন, ‘‘কাজ করতে গেলে ভুল হয়। তাই সুযোগ দেওয়া উচিত। কিন্তু বিজেপি যদি ভাবে, গায়ের জোরে, জুলুম করে তৃণমূলকে স্তব্ধ করবে, তা হলে তৃণমূল জব্দ করবে। তৃণমূল এতটাই শক্তিশালী। এখানে হেরেও লজ্জা নেই। ২০২৪-এ লোকসভা নির্বাচন রয়েছে। জিততে হবে। তাই এখন থেকে ওরা মিথ্যা প্রচার করছে। এত বড় রাজ্য। দু’টো-একটা ঘটনা ঘটবেই। তোমাদের রাজ্যগুলো দেখো আগে।’’
সিপিএম এবং বিজেপিকে এক আসনে বসিয়ে আক্রমণ করার পাশাপাশি দলীয় নেতাকর্মীদের সতর্কও করে দিয়েছেন দলনেত্রী মমতা। তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘মনে রাখবেন, দলের ঊর্ধ্বে কেউ নয়। দল সকলের ঊর্ধ্বে। আর মানুষ সকলের ঊর্ধ্বে। আমরা ক্যাডার। আর যাঁরা নীচে বসে আছেন, তাঁরা নেতা। এই জন্যই আমাদের দলের নাম তৃণমূল। কারণ ‘তৃণ’ অর্থাৎ ঘাস, মাটি থেকে উঠে আসে। এখানে কেউ ‘আমি বড়’, ‘আমি কেউকেটা’— এ সব মনে করবেন না। সকলকে নিয়ে চলতে হবে। না হলে তাঁকে সেই জায়গায় রাখা হবে না।’’
পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে নেতাকর্মীদের করণীয় কী, সেই গাইডলাইনও মমতা বেঁধে দিয়েছেন বৃহস্পতিবার। তিনি বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতে তৃণমূলের যাঁরা আছেন, তাঁদের আমি দলের মিটিংয়ে নির্দেশ দিচ্ছি, মানুষের কাজ ফেলে রাখবেন না। বর্ষা আসার আগে টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করে কাজ শেষ করুন। তার পর পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘোষণা করে দেব। তখন আর কাজ করার সুযোগ পাবেন না। ধমক নয়, কাজের মাধ্যমে চমকে দিতে হবে। পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদের সদস্যদেরও একই কথা বলব।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘নানুরে গিয়ে দেখেছিলাম ১১টা মৃতদেহ পড়ে আছে। ঢাকা দেওয়ার জন্য একটা কাপড় পর্যন্ত জোগাড় করতে পারেনি। তখন থেকে আমি ভেবেছিলাম এই সব ক্ষেত্রে নতুন প্রকল্প চালু করার কথা। যদি কেউ দু’হাজার টাকার কম দেন তা হলে আমাকে সরাসরি চিঠি লিখবেন। জেলাশাসককে লিখবেন অথবা পুলিশে এফআইআর করবেন।’’