ফাইল চিত্র।
ভুরি ভুরি ভুয়ো নাম। পাকা বাড়ির এতটুকুও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তাও ক্ষতিপূরণের আবেদন করা হয়েছে। বাড়িতে গরুই ছিল না। তাও দাবি করা হয়েছে, ঝড়ের সময়ে বাজ পড়ে গরু মারা গিয়েছে।
ইয়াসের ক্ষতিপূরণের আবেদন খতিয়ে দেখা যাচ্ছে পশ্চিম মেদিনীপুরে বেশিরভাগই ভুয়ো আবেদন। যা দাঁড়াচ্ছে তাতে কার্যত ১০টি আবেদনের মধ্যে পুরোপুরিভাবে একটিও যথাযথ নয়। রাজ্যের নির্দেশ, ১৯-৩০ জুনের মধ্যে জমা পড়া আবেদন খতিয়ে দেখতে হবে। সেই হিসেবে আজ, বুধবার আবেদন খতিয়ে দেখার শেষ দিন। মঙ্গলবার পর্যন্ত যা প্রবণতা তাতে প্রায় ৯২ শতাংশ আবেদনই ভুয়ো। প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, প্রায় ৩২ হাজার আবেদন এসেছিল। দেখা যাচ্ছে, এর মধ্যে ২৯,৭০০ আবেদনই ভুয়ো। মাত্র ২,৩০০ আবেদন যথাযথ।
জেলাশাসক রশ্মি কমল বলেন, ‘‘আবেদনগুলি যাচাই হচ্ছে। খতিয়ে দেখে ভুয়ো আবেদন বাদ দেওয়া হচ্ছে।’’ জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘আবেদনকারীদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে সরেজমিনে তদন্ত হয়েছে। ছবি তুলে নির্দিষ্ট পোর্টালে আপলোড করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, ক্ষয়ক্ষতি কিছুই হয়নি, এমন অনেকেও আবেদন করেছেন।’’ জেলার এক বিডিও মানছেন, ‘‘অনেকেই কোনও ক্ষতি না- হওয়া সত্ত্বেও ক্ষতিপূরণের আবেদন করেছেন। জেলা প্রশাসনকে সামগ্রিক রিপোর্ট দেওয়া হবে।’’
ইয়াসে জেলার ‘ক্ষতিগ্রস্ত’ ৭টি ব্লকের মধ্যে ‘ক্ষতিগ্রস্ত’ ৪৩টি গ্রাম পঞ্চায়েতে ‘দুয়ারে ত্রাণ’র শিবির হয়েছিল। তদন্তে জেলাস্তর থেকে ১৬টি দল গঠন করা হয়েছে। তদন্তকারী দল দেখেছে, অনেক আবেদনকারীরই পাকা বাড়ি রয়েছে। আবেদনকারীদের অনেকে পেশায় ব্যবসায়ী। ঝড়ে বাড়ির কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। জেলা প্রশাসনের একটি সূত্রের দাবি, জেলার ওই ৭টি ব্লকে আবেদনপত্র খতিয়ে দেখার কাজ ইতিমধ্যে গড়ে ৯৫- ৯৬ শতাংশ হয়ে গিয়েছে। আজ, বুধবারের মধ্যেই কাজ সম্পূর্ণ হয়ে যাবে।
গত বছর আমপানের ক্ষেত্রেও দেখা গিয়েছিল, বেশিরভাগ আবেদনই ভুয়ো। জেলায় প্রায় ৭৬ শতাংশ আবেদন বাতিল হয়েছিল। আমপানের ক্ষেত্রে প্রায় ২ লক্ষ ৬৪ হাজার আবেদনের মধ্যে প্রায় ১ লক্ষ ৯৯ হাজার আবেদনই বাতিল হয়ে গিয়েছিল। ইয়াসে বাতিল হতে পারে প্রায় ৯২ শতাংশ আবেদনই। জেলার এক বিডিও বলেন, ‘‘যেন ভুয়ো নামের পাহাড়। যাচাইয়ে বহু ভুয়ো আবেদনকারীর খোঁজ মিলেছে। বেশিরভাগ আবেদনই বাতিল হয়ে যাচ্ছে।’’ জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকও মানছেন, ‘‘দেখা যাচ্ছে, ইয়াসের ক্ষতিপূরণ পেতে প্রচুর ভুয়ো আবেদন জমা পড়েছে। আমপানের থেকেও ইয়াসে ভুয়োর সংখ্যা মাত্রারিক্ত।’’