দেশের সবচেয়ে বড় উৎসবে শহরকে পিছনে ফেলল গ্রাম! অন্তত গড়বেতা বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটচিত্র সেরকমই ইঙ্গিত দিচ্ছে। গ্রামকেন্দ্রিক এই বিধানসভা কেন্দ্রে এবার শহরের চেয়ে গ্রামের বুথগুলিতেই ভোটদানের হার বেশি। গ্রামের মানুষের এই স্বতঃস্ফূর্ত ভোটদানে সন্তোষ প্রকাশ করে প্রশাসন এরজন্য নির্বাচন কমিশনকেই কৃতিত্ব দিচ্ছে।
প্রশাসন সূত্রের খবর, গড়বেতা বিধানসভা কেন্দ্রের মোট ২৫৯ টি বুথের মধ্যে ১১২ টি বুথেই ৯০ শতাংশ ও তার বেশি ভোট পড়েছে। যার বেশিরভাগই গ্রামকেন্দ্রিক বুথ। সেখানে শহরকেন্দ্রিক বুথগুলির ভোটের সর্বোচ্চ হার ৮৯ শতাংশ। গড়বেতা ১ ব্লক কার্যালয়ের সামনেই রয়েছে গড়বেতা উমাদেবী বালিকা বিদ্যালয়ের দুটি বুথ। মূলত গড়বেতার শহরের ভোটাররাই এখানকার ভোটার। এখানে দু’টি বুথে ভোটের হার ৭৯ শতাংশ ও ৭৭ শতাংশ। গড়বেতা শহরের বুকে যেসব বুথ রয়েছে সেইসব বুথগুলিতে এবার ভোটের হার ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশের মধ্যে। সেখানে প্রত্যন্ত গ্রামের বুথগুলিতে কেমন ভোট পড়েছে? গড়বেতা থেকে প্রায় ২৮ কিলোমিটার দূরে রাইখা ইন্দ্রজিৎপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় বুথে এবার ভোটের হার ৯৩ শতাংশ। আবার গড়বেতা থেকে ১৬-১৭ কিলোমিটার দূরে অজ পাড়া গ্রাম হরিনাশুলি। খেটে-খাওয়া দিনমজুর শ্রেণির বাসই বেশি এই গ্রামে। গ্রামের একমাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দু’টি বুথে ভোট দেন হরিনাশুলি সহ আশেপাশের পাড়ার ভোটাররা। এই দু’টি বুথে এবার ভোট পড়েছে ৯৪ শতাংশ ও ৯০ শতাংশ। ছোট আঙারিয়া গ্রামের বুথ আয়মা দামোদরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়, এখানে ভোট পড়েছে ৯৩ শতাংশ। শুধু গড়বেতাই নয়, এই বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে গোয়ালতোড় ব্লকের ৪ টি অঞ্চল। সেখানেও শহরকেন্দ্রিক বুথগুলির চেয়ে প্রত্যন্ত গ্রামকেন্দ্রিক বুথগুলিতে ভোটদানের হার বেশি। বর্ধিষ্ণু এলাকা আমলাশুলি, এখানে চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, শিক্ষিত মানুষের বসবাস বেশি। এই আমলাশুলির দুটি বুথে ভোট পড়েছে ৮৬ ও ৮৭ শতাংশ। এখান থেকে বহুদুরে একেবারে গ্রাম জামিরাশোল, ওলুই, ধবনি, আগয়া প্রভৃতি। এইসব গ্রামের বুথগুলিতে ভোট দানের হার ৯৩ থেকে ৯৪ শতাংশ।
গড়বেতা ১ ব্লকের যুগ্ম বিডিও বিশ্বনাথ ধীবর বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশন সবাইকে ভোটদানে উদ্ধুদ্ধ করতে বিবিধ ব্যবস্থা নিয়েছিল। গ্রামের ভোটারদের নির্ভয়ে ভোট দেওয়ার জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে আবেদন করা হয়েছিল, গ্রামের মানুষের তাই সাড়াটাও । ভাল মিলেছে।"
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
কী বলছে যুযুধান দুই রাজনৈতিক দল? গড়বেতার ভোট পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপির সংযোজক তারাচাঁদ দত্ত বলেন, ‘‘গ্রামের মানুষ বহুদিন ভোটাধিকার প্রয়োগ করা থেকে বঞ্চিত ছিলেন, এবার নির্বাচন কমিশনের তৎপরতায় গ্রামের মানুষেরা ভয় ভেঙে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছেন, ছাপ্পা রিগিং আটকে দিয়েছে গ্রাম।’’ গড়বেতার তৃণমূল বিধায়ক আশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘অন্য বারের মতো এবারও গ্রামের মানুষ উৎসবের মেজাজে ভোট দিয়েছেন, শহরে সেই মেজাজটা একটু কম ছিল, মানুষ নির্ভয়ে তাঁর গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করেছে।’’